অনুমতি ছাড়া কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেবে না, এমনকি জান্নাতে প্রবেশের আগে নবীজি (সা.)-এরও অনুমতির প্রয়োজন হবে। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামাত দিবসে আমি জান্নাতের তোরণে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর দেব, মুহাম্মাদ। দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৭৪)
২. কোমল হূদয় : জান্নাতের প্রহরীরা জান্নাতিদের প্রতি কোমল হূদয় হবে। জান্নাতে প্রবেশের সময় প্রহরীরা তাদের অভিনন্দন জানাবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের কাছে উপস্থিত হবে এবং এর দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে, তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ কোরো স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৭৩)
৩. জান্নাতিদের ডেকে নেওয়া : জান্নাতের প্রহরীরা কিয়ামতের দিন জান্নাতিদের ডেকে নেবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দুটি করে কোনো জিনিস দান করবে, জান্নাতের প্রত্যেক দরজায় প্রহরী তাকে ডাক দেবে। (তারা বলবে), হে অমুক। এদিকে এসো। আবু বকর (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে তো তার জন্য কোন ক্ষতি নেই। নবী (সা.) বললেন, ‘আমি আশা করি যে, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৪১)
যেমন হবে জাহান্নামের প্রহরীরা
কোরআন ও হাদিসের আলোকে জাহান্নামের প্রহরীদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ
১. নির্দেশ পালনে কঠোর : জান্নাতের প্রহরীদের মতো জাহান্নামের প্রহরীরাও আল্লাহর নির্দেশ পালনে অত্যন্ত কঠোর হূদয়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৬)
২. নির্মমহূদয়ের অধিকারী : জাহান্নামের প্রহরীদের হূদয় হবে অত্যন্ত নির্মম। জাহান্নামিদের আর্তনাদ তাদের অন্তরে কোনো দয়ার উগ্রেক করবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা করো জাহান্নাম থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহূদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতারা...’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৬)
৩. অপরাধ স্মরণ করিয়ে দেবে : জান্নামের প্রহরীরা জাহান্নামিদের পাপ ও অপরাধ স্মরণ করিয়ে দেবে। আল্লাহ বলেন, ‘অবিশ্বাসীদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জাহান্নামের কাছে উপস্থিত হবে তখন তার প্রবেশদ্বারগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসুল আসেননি? যারা তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের আয়াত আবৃত্তি করত এবং এই দিনের সাক্ষাত সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিল। বস্তুত অবিশ্বাসীদের প্রতি শাস্তির কথা বাস্তবায়তি হয়েছে।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৭১)
৪. আর্তনাদ উপেক্ষাকারী : জাহান্নামের প্রহরীরা জাহান্নামিদের আর্তনাদ ও আবেদনের প্রতি ভ্রুক্ষেপহীন হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অগ্নিবাসীরা জাহান্নামের প্রহরীদেরকে বলব, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা কোরো তিনি যেন আমাদের থেকে লাঘব করেন এক দিনের শাস্তি। তারা বলবে, তোমাদের কাছে কি স্পষ্ট নিদর্শনসহ তোমাদের রাসুলরা আসেননি? জাহান্নামিরা বলবে, অবশ্যই এসেছিল। প্রহরীরা বলবে, তবে তোমরাই প্রার্থনা কোরো; আর অবিশ্বাসীদের প্রার্থনা ব্যর্থই হয়।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৫০)
হে আল্লাহ! আমাদের জান্নাত দিন এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আমিন
পিটিভি ইসলামের আলোকে পরিচালিত হবে ইনশাল্লাহ।