ঢাকা | বঙ্গাব্দ | আজকের ভিজিটর: 20,8,321,00

ফ্যাসিবাদের আতঙ্ক, 'নিষিদ্ধ' কন্ঠে এখন গণমুক্তির অঙ্গীকার

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 14, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:
ad728


মাহবুবুর রহমান সরকার 

মহান স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া রাজনৈতিক শক্তি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসিত জীবন যাপনের পর দেশে ফিরছেন। এটি এমন একটি ঐতিহাসিক মহূর্ত, যখন জাতি ২০২৬ সালের সংসদীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এটিকে বাংলাদেশের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং ফলপ্রসু নির্বাচন হিসেবে দেখছেন।

প্রায় দুই দশক ধরে লন্ডনে কাটানো নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে তিনি ফিরছেন। এক সময় রাজনীতির অগ্রভাগে থাকা এই তরুণ নেতাকে অসহ-নীয় নিপীড়ন ও নির্যাতনের মুখে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। যারা সেটিকে তার পলায়ন আখ্যা দিয়েছিলেন আজ তাদের জন্য উপযুক্ত সময়, স্কটল্যান্ডের রাজা মহাবীর রবার্ট ব্রুসের জীবনী পড়ার।

মহান মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য মঞ্চায়নই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীন-সার্বভৌম সত্তায় আত্মপ্রকাশের প্রেক্ষাপট। যার সূচনা লগ্নে দাঁড়িয়ে এদেশের সর্বস্তরের মানুষকে সশস্ত্র মুক্তির সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন দুঃসাহসী এক বাঙালি মুক্তিসেনা, মেজর জিয়াউর রহমান। যে বার্তা ছিল আইয়ুব-টিক্কাদের স্বৈরাচারিতার বিপরীতে মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির সনদ।

বিধাতার কী অমোঘ বিধান। আরো একবার যখন বাংলাদেশ প্রলয় পেরিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রশক্তি হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছে, স্বপ্ন দেখছে তার কোটি কোটি মানুষ, ঠিক তখন দেশবাসীর সামনে উপস্থিত হন সেই মহানায়কের উত্তরসূরি; দুর্বিনীত চিত্তের অধিকারী এক শক্তিমান জননেতা, তারেক রহমান। নিয়ে আসেন গণমানুষের মুক্তির সনদ হিসেবে তার রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কার ও জনমুখী রাষ্ট্রতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক ৩১ দফা।

এই ৩১ দফা নিয়ে যখন সুনামগঞ্জের পথে প্রান্তরে কৃষক, শ্রমজীবী, তরুণ, যুবক নির্বিশেষে নারী-পুরুষের কাছে ছুটে গেছি তখন দেখেছি এই দেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়ক, আগামী দিনে জাতির দিশারী তারেক রহমানকে নিয়ে তাদের উচ্ছ্বাস,

তাদের অপেক্ষা, তাদের আগ্রহ। তারা তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফাকে জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে নিয়েছেন।

স্বৈরাচারী সরকার একদিন যে মানুষটিকে বিচারিক প্রহসনের মাধ্যমে কারাপ্রকোষ্ঠে আমরণ বন্দিদদশায় কিংবা ফাঁসিরমঞ্চে ঝুলিয়ে শেষ করে দিতে চেয়েছিল, মাতৃভূমি থেকে পাঠানো হয়েছিল নির্বাসনে, যার বার্তা, বিবৃতি, মন্তব্য প্রকাশ ও

প্রচারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, টুটি চেপে ধরা হয়েছিল কণ্ঠ রোধে, সেই নিষিদ্ধ কণ্ঠেই ঘোষিত হলো ১৮ কোটি বাংলাদেশির মুক্তির সনদ, ৩১ দফার গণমুক্তির অঙ্গীকারনামা।

নিপীড়ন, নির্যাতন, নির্বাসন। রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থে বিরোধী পক্ষের রাজনীতিকদের দমনে এর চেয়ে হিংস্র-নৃশংস পন্থা আর কিইবা হতে পারে। একজন তারেক রহমানের ক্ষেত্রে সেই বর্বরতাও হার মেনেছে। তবে সবকিছুরই শেষ থাকে। সেই ফ্যাসিবাদী ক্ষমতাসুরের কুক্ষিগত রাষ্ট্রব্যবস্থা আজ

মুক্ত। অবমুক্তির পর এবার তারে আগলে নিয়ে সঠিকপথে পরিচালিত করার পালা। সেই বিষয়টিও যেন আত্মস্ত রেখেছেন তারেক রহমান। জনতার মুক্তির সনদ ৩১ দফা দেশের কোটি মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিয়েছেন আগে। আকস্মিকভাবেই জানা গেল, শিগগিরই দেশের মাটিতে ফিরছেন আজ ও আগামীর বিশ্বে 'গ্লোবাল বাংলাদেশ'র প্রতিনিধিত্বে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় মানুষটি। এ যেন নির্বাসিত রাজ-

নীতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পদধ্বনি।

বিজ্ঞ-বিশারদগণ কালে কালে জানান দিয়ে গেছেন, কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য যখন ইতিহাসের বাঁক বদলের লগ্ন আসে, তখন একজন প্রাজন্মিক প্রতিনিধিরও আগমন ঘটে। যার দ্বারা স্রষ্টা সেই কালচিত্র পটে ঐতিহাসিক অভিজ্ঞান রচনা করেন। সময়ের এমন বিশেষ কালচক্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের আবির্ভাব ঘটে। তবে কদাচিৎ তাদের কেউ কেউ ইতিহাস সৃষ্টির রসদ যোগান দেন, কেউ বা হন সহায়ক। কিন্তু সেই কালজয়ী প্রাজন্মিক প্রতিনিধি

যিনি হন, তার ক্ষেত্র ভিন্ন। তাকে ঘিরে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে অভূতপূর্ব ঘটনার সমন্বয়ে একটি বিশেষ পটভূমি সৃষ্টি হতে দেখা যায়। যেখানে ওই ব্যক্তি কেন্দ্রবিন্দুতে আসীন হন।

এই মুহূর্তে রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার ও জনমুখী শাস-নতন্ত্র চর্চায় রাষ্ট্রবাদী গণতন্ত্রের বাস্তবায়ন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও পুনর্জন্মবাদের জন্য অ-ি নবার্য। জুলাই অভ্যুত্থানের পটভূমিতে জনগণ যাদের কাছে এর সর্বোচ্চ প্রত্যাশা রেখেছিল তারা তা বাস্তবায়নের আভাস দেওয়া তো দূর, নির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা ও কর্মপন্থারও ধারণা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ দীর্ঘ ১৭টি বছর ধরে জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত একজন ব্যক্তি, চলমান পরিস্থিতির প্রত্যক্ষ অনুধাবন বা অভিজ্ঞতার সান্নিধ্য ছাড়াই মাত্র ৩১টি বাক্যে লিখে দিলেন ক্ষমতাসুরের বিরুদ্ধে সদ্য যুদ্ধ বিজয়ী, রণ-বিধ্বস্ত একটি জাতির মুক্তির বিধান। ঠিক এমন একটি সময়েই স্বদেশের বুকে তার প্রত্যাবর্তনের বার্তা এলো যখন দেড় যুগের ভ্রষ্টাচারিতায় বিবর্ণ বাংলাদেশ দীর্ঘ ১৭ বছর পর নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় জনরায়ের ভিত্তিতে গণমুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের প্রত্যাশা, নবমুক্তির পথে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের প্রথম ভোটে এমন কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করতে যিনি গণমানুষের ঐতিহাসিক সেই অর্জনের সর্বোচ্চ মূল্যায়নে সুশাসনের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সমর্থ। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চূড়ান্ত বার্তা দেওয়ার আগে আন্তর্জাতিক দুটি গণমাধ্যমে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে যে তারেক রহমানকে দেখা গেল, তার ব্যাপারে বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক সমালোচক, অভিজ্ঞ সাংবাদিক, রাষ্ট্রগবেষক এবং আপামর জনগণের মূল্যায়নে তার একটি পরিচয় সংজ্ঞায়িত হয়েছে। এ কোন তারেক রহমান? উত্তর মিলছে, 'এ যেন বিধ্বস্ত কোনো রাষ্ট্রেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সময়ের পট থেকে তার শ্রেষ্ঠতম নাগরিকের বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক রূপে আবির্ভূত হওয়ার আগমনী অভিব্যক্তি।' তবে তাই হোক। নরকের পুঞ্জীভূত দগ্ধ-ভস্ম ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে উঠুক স্বর্গের বরপুষ্ট সেই মৃত্যুঞ্জয়ী ফিনিক্স পাখি। সার্বভৌমত্বের গর্বিত সত্তায় জাগুক স্বাধীন বাংলাদেশ। আমরা প্রস্তুত, তার ডানায় শক্তি যোগাতে, এক একটি পালকের মতো।

লেখক: জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা

নিউজটি আপডেট করেছেন : Prothom Bulletin

কমেন্ট বক্স