ফুটবলার হিসেবে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ৪৬টি ট্রফি জিতেছেন আর্জেন্টিনা ও ইন্টার মায়ামির কিংবদন্তী লিওনেল মেসি। কিন্তু জানেন কি, মেসির চেয়েও বেশি ট্রফি জিতেছেন এক ফুটবলার, যার নাম লি ক্যাসিয়ারো?হ্যাঁ, বিস্ময়কর হলেও এটা সত্য। জিব্রালটারের ৪৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড এখনও খেলছেন। তিনি এ পর্যন্ত ট্রফি জিতেছেন ৫৯টি। তবে এগুলোর সবই ক্লাব পর্যায়ে। আন্তর্জাতিক কোন ট্রফি নেই। এখানেই তার সঙ্গে মেসির পার্থক্য।
স্বদেশের লিনকন রেড ইম্পস এফসিতে (১৯৯৮ থেকে) খেলেন তিনি। আর জিব্রালটার জাতীয় দলের হয়ে (২০১৪ থেকে) এখনও খেলছেন তিনি। ৬৬ ম্যাচ খেলে করেছেন ৩ গোল।
এবার আসা যাক তার ট্রফি জেতার প্রসঙ্গে। তার ৫৯ ট্রফির ২১টিই এসেছে জিব্রালটার লিগ থেকে, য মেসি এবং ম্যান’ ইউর লিজেন্ড রায়ান গিগসের চেয়ে ৮টি বেশি। এছাড়া ১৫ বার জিতেছেন রক কাপের শিরোপা, ১২ বার পেপে রিয়েস কাপ এবং বাকি ১১টি জিতেছেন জিব্রালটার প্রিমিয়ার কাপের শিরোপা।
মজার ব্যাপার-ফুটবল খেলার পাশাপাশি লি চাকরি করেন জিব্রালটার ডিফেন্স পুলিশেও! তার ছোট দুই ভাই কাইলি ক্যাসিয়ারো এবং রায়ান ক্যাসিয়ারো-ও জিব্রালটার জাতীয় ফুটবল দলে খেলেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে-মেসির চেয়েও ১৩টি বেশি ট্রফি জিতেও কেন বিশ্বরেকর্ডধারী হতে পারেননি লি? প্রথম কারণ হচ্ছে লি যে ৫৯টি ট্রফি জিতেছেন, সেগুলো এসেছে জিব্রাল্টারের ঘরোয়া লিগ ও কাপের মত অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও অল্প প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসর খেলে। অপরদিকে মেসির ৪৬টি ট্রফিতে রয়েছে বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা ও ঘরোয়া কাপের মত উচ্চমানের ও মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টের শিরোপা।
বিশ্বরেকর্ড বা স্বীকৃতিতে সাধারণত লিগ ও টুর্নামেন্টের মান ও গুরুত্বকে অনেক ওজন দেওয়া হয়। তাই সংখ্যায় ক্যাসিয়েরো এগিয়ে হলেও মান ও মর্যাদায় মেসির অর্জনকে অনেক বিশেষ ও অনন্য মনে করা হয়।
লা লিগা বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যে ধরনের ক্লাব ও খেলোয়াড় থাকে, তারা অনেক উচ্চমানের ও অভিজ্ঞ। অপরদিকে জিব্রাল্টার লিগের দলগুলো অর্ধশক্তির ও অল্প বাজেটের, যা মান ও চাপের দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিশ্বরেকর্ড ও স্বীকৃতিতে তাই কেবল সংখ্যাই গুরুত্বপূর্ণ হয় না, বরং সেই সংখ্যাটা কার বিরুদ্ধে এসেছে ও কি পরিবেশে এসেছে সেটাই বিচার করা হয়। লি ক্যাসিয়েরো অনেক ঘরোয়া কাপ জিতেছেন, কিন্তু সেগুলোর মান ও মর্যাদা মেসির আন্তর্জাতিক ও ক্লাবদলের সঙ্গে লড়াই করে জিতে নেওয়া শিরোপার সঙ্গে মেলানো যায় না।
যদি লি ও মেসিকে মুখোমুখি রাখা যেত, তাহলে একটা দারুণ ও অদ্ভুত লড়াই দেখতে পেত ফুটবলবিশ্ব। মেসির বল নিয়ন্ত্রণ, পায়ের কারুকাজ ও পাস দেওয়ার দূরদৃষ্টি সম্পূর্ণ আলাদা লেভেলের। তিনি বলকে পায়ে আঠার মতো রেখে অনেকজনকে অনায়াসে কাটাতে পারেন, যা লি পারেন না।
মেসির রয়েছে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মত মহারণের অভিজ্ঞতা। চাপের মুহূর্তে মাথা ঠাণ্ডা রেখে দুর্দান্ত পারফর্ম করতে পারেন। লি’র রয়েছে ঘরোয়া লিগ ও কাপ জেতার অভিজ্ঞতা, যা ভালো হলেও তাকে আন্তর্জাতিক মানের চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়নি। মাঠের গতি, চিন্তার গভীরতা ও টেকনিকে মেসিকে অনেক সামনে রাখা হয়। তিনি অল্প স্পেস ও অল্প সময়কে অসাধারণ সুযোগে পরিণত করতে পারেন, যা লি’র মধ্যে নেই। মেসির আশেপাশে রয়েছে বিশ্বমানের টিমমেট ও কোচিং, যা তাকে আরও ভালো পারফর্ম করতে সহায়তা করে। অপরদিকে লিকে ঘরোয়া ও অল্পমানের পরিবেশে মানিয়ে নিতে হয়েছে।
সহজ ভাষায় বললে যদি মেসি-লি মুখোমুখি হতেন, তাহলে বল দখল, পাসিং ও খেলার নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবেই মেসির দিকে যেত। লি চাইলে লড়াই করতে পারতেন মান ও পরিশ্রম দিয়ে, কিন্তু পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যেত অল্পক্ষণেই।
আরকে/সব