মো: মাহবুবুল আলম সুমন
প্রভাষক, পলাশীহাটা স্কুল এন্ড কলেজ
বর্তমান সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষকদের অপমান করা এবং তাদের জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করার মতো ঘটনা বাড়ছে। এই ঘটনা কেবলমাত্র আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কেই তুলে ধরে না, বরং শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের অবমাননাও প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীরা কখনোই শিক্ষকদের শাস্তি দিতে পারে না; অপরাধী বা দুর্নীতিবাজ শিক্ষক থাকলেও তাদের শাস্তি হওয়ার জন্য যথাযথ আইন এবং নীতিমালা রয়েছে, যা সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার সুরক্ষার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে।
শিক্ষকদের প্রতি সম্মান ও দায়িত্ববোধ
শিক্ষক হলেন জাতি গড়ার কারিগর। তাঁরা শুধু শিক্ষা প্রদান করেন না, শিক্ষার্থীদের জীবনের দিশা দেখান, নৈতিকতার শিক্ষা দেন, এবং ভবিষ্যৎ গড়ার প্রস্তুতি নেন। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানো প্রতিটি শিক্ষার্থীর দায়িত্ব। শিক্ষার্থীরা যদি শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করে, তবে তা শুধুমাত্র শিক্ষকদের প্রতি অসম্মানই নয়, বরং শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনও।
শিক্ষার্থীদের অধিকার ও সীমাবদ্ধতা
শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকের কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে, যদি তাঁরা মনে করেন যে শিক্ষক অনৈতিক কাজ করছেন বা শিক্ষার গুণগত মানের সাথে আপস করছেন। তবে, এই প্রশ্ন তোলার একটি সুনির্দিষ্ট ও শৃঙ্খলাবদ্ধ পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বিষয়টির যথাযথ তদন্ত করতে পারে। শিক্ষার্থীদের কাজ হলো সমস্যাটি কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা, নিজের হাতে বিচার করা নয়। শিক্ষকদের পদত্যাগ করানোর অধিকার শিক্ষার্থীদের নেই; বরং এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক এবং আইনি বিষয়।
অপরাধী ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের শাস্তি
অপরাধী এবং দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করতে যথাযথ আইন ও বিধি রয়েছে। শিক্ষক যদি কোনো অপরাধে লিপ্ত হন, তবে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনীয় শাস্তি প্রদান করা উচিত। তবে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে প্রশাসনিক এবং আইনগত পথে, যেখানে শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগ বা অসন্তোষ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবে, এবং সেই কর্তৃপক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও আইনি পদক্ষেপ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নির্ধারিত নিয়মাবলি রয়েছে, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। শিক্ষার্থীরা যদি মনে করেন, কোনো শিক্ষক তাঁদের প্রতি অন্যায় আচরণ করছেন বা শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি করছেন, তবে তারা সেই বিষয়ে অভিযোগ করতে পারে, কিন্তু কখনোই শিক্ষককে অপমান করা, বিক্ষোভ করা, বা পদত্যাগে বাধ্য করার মতো কাজ করা উচিত নয়।
সমস্যার সমাধানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যবোধ শেখাতে হবে। পাশাপাশি, শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও যদি অভিযোগ থাকে, সেগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন শিক্ষার্থীদের কাছে সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়।
শিক্ষকদের প্রতি সম্মান বজায় রাখা
একজন শিক্ষককে অপমান করা মানে নিজেই নিজের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তোলা। শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে, শিক্ষার্থীরা শুধু নিজেরাই নয়, পুরো সমাজকে উপকৃত করতে পারে। তাই, আমাদের প্রত্যেকেরই শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে, কোনো অপরাধী বা দুর্নীতিবাজ শিক্ষক থাকলে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যা শিক্ষার্থীদের নয় বরং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান করে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ, সুশৃঙ্খল, এবং সম্মানজনক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।