today visitors: 5073432

মানিকগঞ্জ শহর পরিচ্ছন্নতায় হাত দিলেন শিক্ষার্থীরা

মানিকগঞ্জ থেকে,

কারো হাতে ঝাড়ু, কারো হাতে পলিথিনের ব্যাগ। সড়কের ময়লা-আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে সাফ করছেন তারা। কেউবা সড়কে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করছেন ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের। তবে এরা কেউ পরিচ্ছন্ন কর্মী বা ট্রাফিক পুলিশ নন। এরপরও শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে এবং সড়কের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করুন সহ শহর পরিচ্ছন্নতায় হাত দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা ।

পঞ্চম দিনের মতো মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এ অভিযান চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এসময় যত্রতত্র ময়লা না ফেলতে সাধারণ মানুষকে অনুরোধও করেন তারা।

শুক্রবার – শনিবার মানিকগঞ্জ শহরের বিভিন্ন মোড়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। আলাপকালে তারা জানায়, এরা সবাই ছাত্র। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গত সোমবার দেশ ছেড়ে পালান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ভেঙে পড়ে মানিকগঞ্জ শহরসহ দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা। রাস্তায় দেখা যায়নি কোনো ট্রাফিক পুলিশ। এ অবস্থায় সড়কের শৃঙ্খলা নিশ্চিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে মাঠে নামে ছাত্ররা। স্বেচ্ছায় তারা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নকর্মীরও দায়িত্ব পালন করেন। তাদের এ কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন সাধারণ লোকজন। একইসঙ্গে তাদের প্রশংসা করেন সবাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের প্রশংসা ভাসান অনেকে। কয়েক জায়গায় স্থানীয় লোকজন ও পথচারী তাদের খাবার ও পানি দিয়ে প্রকাশ করেন ভালোবাসা।

আসরাফ রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, যেহেতু এখন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নেই তাই আমরা নিজ উদ্যোগে দায়িত্ব নিয়ে মানিকগঞ্জ সড়ক এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নেমে এসেছি।

এ বিষয়ে ছাত্ররা জানান, লাখো ছাত্র-জনতার অর্জিত দেশ-রাখবো মোরা ক্লিন বাংলাদেশ’ স্লোগানে তারা মঙ্গলবার থেকে সড়ক পরিষ্কার ও ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম শুরু করেন। রাস্তায় যেখানে-সেখানে যাত্রীবাহী গাড়ি দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। কারো রাস্তা পার হতে সমস্যা হলে গাড়ি থামিয়ে পারও করে দেন। মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট না থাকলে পরবর্তীতে হেলমেট পরার পরামর্শ দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ভাঙচুর বিভিন্ন দোকানের মালামাল পুড়া, কাচঁ ভাঙ্গা, যেখান সেখানে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়েছিল ভাঙা কাঁচের টুকরো। সাথে ছিল ছোটো–বড় অসংখ্য ইটের টুকরো।

এসব পরিষ্কার করার জন্য মানিকগঞ্জ শহরের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা দলগত ভাবে কাজ করতে দেখা গেছে । এতে অংশ নেয়া সাধারণ একজন ছাত্র বলেন, এ এলাকাটা আমাদের। তাই আমরা সুন্দর করে সাজাব। যাদের উপর সুন্দর রাখার দায়িত্ব ছিল তারা পালিয়ে গেছে। তাই আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই।

অপরদিকে, মানিকগঞ্জ শহর ঘুরে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া এবং ক্রেতা- বিক্রেতাদের সমঝোতার মাধ্যমে বাজার পরিচালনার জন্য প্রত্যকটি দোকানে দোকানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করে সাধারণ ছাত্রদের একাংশ। আওতাভুক্ত দ্রব্যগুলো হলো মাছ, মুরগী, সবজি, মুদি বাজার, ফলের দোকান, ঔষধসহ আরো অনেক কিছু। শিক্ষার্থীরা জানান, সাধারণ ছাত্ররা দ্রুত সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার নিয়ন্ত্রণে একতাবদ্ধ।

এছাড়াও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্মমতায় ঝরেছে অসংখ্য ছাত্র-জনতার প্রাণ। এ অনাকাঙ্ক্ষিত রক্তপাতের পর ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। বদলে গেছে দেশের দৃশ্যপট। দেশ পরিচালনায় গঠন হয়েছে নতুন সরকার। এমন সময় আন্দোলন সংগ্রামের বিবর্ণ অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন আঁকছেন নতুন প্রজন্ম। তাদের নতুন স্বপ্নের কথা মানিকগঞ্জ শহরজুড়ে দেওয়ালচিত্রে তুলে ধরছেন শিক্ষার্থীরা।যার প্রেক্ষিতে গ্রাফিতিতে ‘৩৬ জুলাই’ অঙ্কিত হয়েছে। পাশাপাশি ‘কী ভাবছেন, আয়নাঘরও নয়, হাওয়া ভবনও নয়’, ‘গাহি সাম্যের গান,স্বাধীন বাংলা ২.০, ‘কীপ লার্নিং ব্রাইট। পলিটিক্স এসাইড, ‘স্টপ ফলোয়িং অর্ডারস দ্যাট ডাজনট সার্ভ জাস্টিস,ভাঙো শিকল গড়ো দেশ, আমরাই আগামীর বাংলাদেশ’, ‘ফুল দেখে ভড় বাড়ছে রক্ত দেখে সাহস’ এমন নানান প্রতিবাদী উক্তি শোভা পাচ্ছে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যে দেয়ালে।

শুধু তাই নয়, আন্দোলন চলাকালীন সেসব অশোভন ও রাজনৈতিক স্লোগান লিখেছিলেন, সেসেব সাদা রং দিয়ে মুছে পুনরায় অনেক দেয়ালে নতুন করে লিখছেন দেশ সংস্কারের নানা স্লোগান ও বিভিন্ন শিল্পকর্ম আঁকছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ঘোষণা দিয়েছেন- শিক্ষার্থীদেরকে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে। আমরা তাতে সাড়া দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের অনেকগুলো টিম বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত আমরা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সাধ্যমতো পাশে থাকবো।

মানিকগঞ্জ থেকে,
মো: আরিফুর রহমান অরি