ইউজিসির প্রতিবেদন বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপিছু ব্যয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। বেশি ব্যয় করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু বার্ষিক ব্যয় ধারাবাহিকভাবে কমছে; যা এখন মাত্র ৭০২ টাকা। মাসে দাঁড়ায় ৫৮ টাকা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর পড়াশোনার মান নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীপিছু সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণাতেও তুলনামূলকভাবে এগিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীর মাথাপিছু ব্যয়সহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০২২ সালের তথ্য নিয়ে করা হয়েছে প্রতিবেদনটি। কিছুদিন আগে সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছে ইউজিসি।
শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীপিছু ব্যয় বেশি করে, সেগুলোর পড়াশোনা ও গবেষণার মান তুলনামূলকভাবে ভালো। আর যারা কম ব্যয় করে, তাদের শিক্ষার মানও তুলনামূলক খারাপ।
মূলত অবকাঠামো উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রপাতি কেনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক বাজেটে যে ব্যয় দেখানো হয়, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী দিয়ে ভাগ করে শিক্ষার্থীপিছু ব্যয়ের হিসাবটি করা হয়।
ইউজিসির তথ্য বলছে, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে বিজ্ঞান, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় সব সময়ই বেশি। শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীপিছু ব্যয় বেশি করে, সেগুলোর পড়াশোনা ও গবেষণার মান তুলনামূলকভাবে ভালো। আর যারা কম ব্যয় করে, তাদের শিক্ষার মানও তুলনামূলক খারাপ।
বর্তমানে দেশে অনুমোদিত পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১৬৯টি। এর মধ্যে চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১৪টি। তবে শিক্ষার্থীপিছু তুলনামূলক ব্যয়ের তথ্যটি ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে উচ্চশিক্ষায় যত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন, তার মধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশই পড়েন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ আছে ২ হাজার ২৫৭টি। এসব কলেজে মোট শিক্ষার্থী ৩১ লাখ ৭২ হাজারের বেশি। তবে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর পড়াশোনার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন আছে। ঠিকমতো ক্লাস না করে পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে।
ভালো পড়াশোনার জন্য বিনিয়োগ একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয়ের দৈন্যদশার চিত্রই বলছে ভালো মানের পড়াশোনার পর্যাপ্ত সুযোগ ও পরিবেশ এখানে নেই।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ আছে ২ হাজার ২৫৭টি। এসব কলেজে মোট শিক্ষার্থী ৩১ লাখ ৭২ হাজারের বেশি। তবে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর পড়াশোনার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন আছে। ঠিকমতো ক্লাস না করে পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে।
ইউজিসির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালে (এক বছর) একেকজন শিক্ষার্থীর জন্য গড়ে ব্যয় করেছে ১ হাজার ১৫১ টাকা। যা পরের বছর কমে করা হয় ৭৪৩ টাকা। আর ২০২২ সালে গড়ে একেকজন শিক্ষার্থীর জন্য ব্যয় করেছে মাত্র ৭০২ টাকা। অর্থাৎ মাসে ৫৮ টাকার সামান্য বেশি।
অবশ্য ইউজিসির এই তথ্যের সঙ্গে একমত নন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান। এ বিষয়ে প্রথম আলোর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে কলেজগুলোর শিক্ষকদের বেতনের তথ্য কি ধরা হয়েছে? কলেজে প্রতিবছর সরকার যে বরাদ্দ দেয়, তা কি ধরা হয়েছে? কলেজ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন বিদেশে শিক্ষক পাঠানো হচ্ছে; সেগুলো এই তথ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে? তাঁর কাছে মনে হয়, সমগ্র বিষয়টি এখানে আসেনি। তবে এটি ঠিক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাজেট কম। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে খরচ করলে নিঃসন্দেহে শিক্ষার মানও বাড়বে।
ব্যয় বেড়েছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি মাথাপিছু বার্ষিক ব্যয় সবচেয়ে বেশি। এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীপ্রতি মাথাপিছু ব্যয় করে ৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। যা এক বছরের ব্যবধানে ৬৩ হাজার টাকা বেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২ সালে গড়ে একজন শিক্ষার্থীর জন্য ব্যয় করেছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ টাকা। যা ২০২১ সালে ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৪ টাকা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় করা হয় ২ লাখ ১ হাজার ৭৭৮ টাকা। যা আগের বছর ছিল দেড় লাখ টাকা। বুয়েটে শিক্ষার্থীপিছু ব্যয় করা হয় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৭ টাকা। যা এক বছর আগে ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকার বেশি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীপিছু ব্যয় করে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৭০ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৯২৪ টাকা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি মাথাপিছু ব্যয় করে ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। যা এক বছর আগে ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে তথ্য নিয়েই বার্ষিক প্রতিবেদনটি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে তথ্য দেয়, তার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এখানে ইউজিসির নিজস্ব তথ্য নেই। তবে সেখানে যদি কোনো অসংগতি মনে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বলতে পারে।