today visitors: 5073432

নড়াইল কালচারাল অফিসারের অনিয়ম-দূর্নীতি প্রমানিত হলেও বহাল তবিয়তে দিব্যি আছেন॥ শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন

 

 

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:

নড়াইল কালচারাল অফিসারের অনিয়ম-দূর্নীতি প্রমানিত হলেও বহাল তবিয়তে দিব্যি আছেন॥ শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনl এবার নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারের শিক্ষকদের সাথে চরম দূর্ব্যবহারের অভিযোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন শুরু করলেন। সোমবার সন্ধ্যায় কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান ৪জন সিয়িয়র শিক্ষকের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করায় শিক্ষকরা এ সিদ্ধান্ত নেন। তার (কালচালার অফিসারের) অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত ৯জন শিক্ষক মঙ্গলবার (৫ মার্চ) থেকে এ ক্লাস বর্জন অব্যাহত রাখবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে কালচারাল অফিসারের বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতি তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়ায় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিবের কাছে গত ৬ ফেব্রুয়ারী একটি প্রতিবেদন পাঠালেও অপসারণ বা শাস্তি দূরের কথা একই ধরণের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে জেলা কালচারাল অফিসারের খুঁটির জোর কোথায় ?

নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত বিভাগের শিক্ষক ষাটোর্ধ নিরঞ্জন বিশ^াস, আশিষ কুমার স্বপন ও মুকুল রায় জানান, সোমবার বিকেলে নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে সংগীতের বিভিন্ন শাখা ও বর্ষের ক্লাস ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান তাদের একটি সাদা কাগজে সই করতে বলেন। এতে তারা সই না করায় তাদের বেয়াদব বলে গালি দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। শিক্ষকরা বলেন, দীর্ঘ একটি বছর ধরে কালচারাল অফিসার শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষক, কন্ঠশিল্পী, নৃত্যশিল্পী ও যন্ত্র সংগীত বাদকদের দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করালেও তাদের জন্য নির্ধারিত কোনো সম্মানী দেয়নি। সর্বশেষ এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারী দেশব্যাপী একযোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে জেলা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত দল, নৃত্যদল ও প্রশিক্ষনার্থীদের অংশগ্রহনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যয় ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। এর আগে ২ ফেব্রয়ারী জাতীয় পিঠা ও লোকসংস্কৃতি উৎসবে দেড় টাকা বরাদ্দ থাকলেও শিল্পী ও কলাকুশলীদের কোনো সম্মানী দেয়া হয়নি। এভাবে তিনি আমাদের সম্মানীর প্রায় ৫ লাখ টাকা আতœসাত করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর কাছে জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ এনে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে ২৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দূর্নীতি ও দুর্বব্যবহারের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দেয় নড়াইলের ৩২জন সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ব্যবসায়ী। এ স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এম.এম আরাফাত হোসেন।

অভিযোগ রয়েছে, জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে যোগদানের পর থেকে এভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিল্পী, বিচারক ও কলাকুশলীদের জন্য সরকারি নির্ধারিত সম্মানি দেন না। অনুষ্ঠনের জন্য যে বরাদ্দ থাকে তার চার ভাগের একভাগও খরচ করেন না। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীতের বিভিন্ন শাখার ক্লাস চলাকালীন সময়ে কালচারাল অফিসার সংগীত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে তিনি অসদাচরণ করে থাকেন। গত বছরের মাঝামাঝি জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামের লাইটিং, সাউন্ড, ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কারে ১০ লাখ টাকার কাজ হলেও অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে খাতা-কলমে টেন্ডার দেখিয়ে মূলত নিজেই কাজ করেছেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু জানান, বর্তমান জেলা কালচারাল অফিসার নড়াইলের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ধ্বংস এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে অপমান করেছে। এই অযোগ্য ব্যক্তির অধীনে আমরা কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবো না। যাগদানের পর থেকে সে ৩০-৩৫ লাখ টাকার দূর্নীতি করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বুধবার (৬ মার্চ) নড়াইলবাসী এক সভার ডাক দিয়েছে। এ সভা থেকে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহন করা হবে বলে জানান।

জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমান শিক্ষকদের সাথে দুর্বব্যহার এবং সাদা কাগজে সই নেবার কথা এবং তার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী এ প্রতিনিধিকে জানান, জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে আনিত বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৬ ফেব্রুয়ারী সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব কাছে এ প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।