today visitors: 5073432

সাটুরিয়া – দড়গ্রাম সড়কের দুর্ভোগের লাগাম টানবে কে?

 

 

 

মানিকগঞ্জ থেকে,

 

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম থেকে সাটুরিয়া পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কটি দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারন মানুষ।প্রতিদিন হাজার মানুষের চলাচল এই সড়ক দিয়ে।বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক থাকার কারনে এ রাস্তা দিয়ে ঘিওর, হরগজ, শিমুলিয়া, তিল্লি, গোপালপুর, বরাইদসহ ২৫ গ্রামের মানুষকে চলাচল করতে হয়। ওই সড়কের পাশেই রয়েছে উপজেলার সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন ৭ হাজার ছাএ ছাএীদের ক্লাস করতে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ।

 

 

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দ সহ ধুলাবালিতে ভরা গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন এলাকাবাসীর দুঃখ। অথচ ২০২১ সালে সড়কটি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয় ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে সংস্কার হয়নি সড়কটি। এত টাকা বরাদ্দের পরও সড়কের বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, উপজেলার কত রাস্তা ঠিক হয়, কিন্তু আমাদের এ রাস্তাটা ঠিক হচ্ছে না। বর্তামানে এমন পরিস্থিতিতে ভোগান্তি লাঘবে সংশ্লিষ্ট কেউই উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে জানান স্থানীয়রা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়া-দড়গ্রাম সড়কটির বেহাল দশা। চার বছর অতিবাহিত হওয়ার কারনে রাস্তায় ইটের খোয়ার লাল সুরকির গুঁড়া আর ধুলোবালুতে ঢেকে যায় জামা-কাপড় নাক-মুখ। ইটের লালচে ধুলায় চোখের ভ্রু ও পাপড়িতে আস্তরন পড়ছে ও ধুলা বায়ুর সাথে মিশে আশে পাশের পরিবেশ লালচে বর্ণ ধারন করেছে।

 

এ ব্যাপারে সড়কের পাশে বসবাসকারী আবিদ হোসেন দুঃখ করে বলেন, সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় এর অবস্থা দেখে মনে বড় কষ্ট পাই। মানুষ বেশ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমরা বহুবার উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে গিয়েছি। উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতিও পাই। কিন্তু উদ্যোগ আর নেওয়া হয় না।

 

 

স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর লিটন নামের একজন জানান, এই রাস্তা দিয়ে চলাচলের কারণে অধিকাংশ মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। নাগরিক সুবিধা পাওয়ার জন্য নাগরিক হিসেবে সরকারকে ট্যাক্স ঠিকই দেওয়া হয় কিন্তু কতটুকু সুবিধা পাওয়া যায়? এগুলো আসলে সরকারের দোষ না এগুলো হচ্ছে কিছু লোকজন যারা টাকার কাছে তাদের নৈতিকতা বিক্রি করে দেয়।

 

এ সড়কে অটোরিকশা চালক হাসু ইসলাম বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী উপজেলার হরগজ, ঘিওর, দরগ্রামসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে। এই ভাঙাচোরা সড়কে গাড়ি চালাতে যেয়ে গাড়ি বেশি নষ্ট হয়। মাঝেমধ্যে গাড়ি উল্টিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে, এতে অনেক যাত্রী আহত হয়। মুমূর্ষু রোগীকে এ রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে নিতে গেলে ঝাঁকুনিতে ওই রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমাদের এই কষ্ট দেখার যেন কেউ নেই।

 

 

সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান খান মজলিশ বলেন, এই জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি দীর্ঘ চার বছর ধরে পড়ে আছে। শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়কের এমন বেহাল দশা দেখে কলেজে উপস্থিত ছাএ ছাএীদের সংখ্যা কম। খারাপ রাস্তা থাকার কারনে যাতায়াত করতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন বলেন, এই রাস্তা দিয়ে শত শত শ্রমিক কোম্পানির কাজে যায়। আমি বুঝি না, আমরা কি মানুষ না, আমরা কি এই দেশের জনগণ না? যদি জনগণ হই তা হলে আমাদের রাস্তাটি কেন ঠিক হবে না। এ সড়ক দিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করে আশপাশের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। নেই বিকল্প কোনো ভালো রাস্তাও। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ব্যবসা- বাণিজ্যেও ঘটছে ব্যাঘাত। সড়কের পাশে বসবাসকারী মানুষের বিকল্প সড়ক না থাকাতে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হচ্ছে।

 

 

সড়কটির এ করুণ দশায় এলাকার লোকজনের অভিযোগ, রোগী নিয়ে এই সড়ক দিয়ে হাসপাতালে গেলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে রোগী। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের কষ্টের সীমা নেই।

 

 

 

সাটুরিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, দরগ্রাম-সাটুরিয়া সড়কের প্রশস্তকরণ ও কার্পেটিংয়ের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ কোটি ২০ টাকা। মানিকগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন কনস্ট্রাকশন দায়িত্ব পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাইয়ে কাজ শুরু করে। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ২০২২-২৩ অর্থবছরের এপ্রিলে কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে অর্থ সংকটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে চলে গেছে। যে কারণে সড়কের কার্পেটিং ওঠানোর পর আর কোনো কাজই হয়নি।

 

 

সাটুরিয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. নাজমুল করিম বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটির কাজ বন্ধ করার পর অনেক চিঠি চালাচালি করেছি। তার পরও তারা কাজ করছে না।

 

 

তিনি আরও বলেন, সাটুরিয়া থেকে দড়গ্রাম সড়কটি ২০২০-২১ অর্থবছরে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায় হোসাইন কন্সট্রাকশন। বর্তমানে কাজটির অগ্রগতি প্রায় ৪৫ শতাংশ। কাজটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার কারন হিসেবে তিনি বলেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ইনসলভেন্সি এবং সবকিছুর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তার জন্য ঠিকাদারের সাথে যে দরপত্র দাখিল করেছে তার ব্যবধান অনেক বেশি হয়ে গেছে।ফলে কাজ বন্ধ থাকায় এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।’

বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি।বর্তমানে ঠিকাদারকে চুড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত নতুন করে রি-টেন্ডারের মাধ্যমে সড়কটি সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

মানিকগঞ্জ থেকে

মো:- আরিফুর রহমান অরি