স্টাফ রিপোর্টার রাজীব হাওলাদার:
আর আট দিন পর শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এ উপলক্ষে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে চলছে ইজতেমার ময়দান প্রস্তুতের কাজ।
সরেজমিন গিয়ে এবং ইজতেমার আয়োজক ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা। এখানে দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন। তিন দিন করে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিদের বয়ান শোনেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে মাঠ প্রস্তুতির কাজ করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন তাবলিগ জামাত অনুসারীরা। কেউ কেউ শামিয়ানা টানাচ্ছেন, কেউ বিদ্যুতের কাজ করছেন, কেউ বাথরুম পরিষ্কার, কেউ ময়দান পরিষ্কার, আবার কেউ খুঁটি পুঁতছেন। এভাবেই প্রস্তুত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান। এ পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার ময়দান প্রস্তুতির কাজ ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।
দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আগমনে মুখরিত হয় টঙ্গীর তুরাগ তীর। বিশ্ব ইজতেমায় নিজ নিজ খিত্তায় চলে রান্নাবান্নার কাজ। নিজ নিজ দায়িত্বে এখানেই থাকা, খাওয়া ও গোসলসহ প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে নেন মুসল্লিরা। এখানে শুয়ে-বসেই বয়ান শোনেন বিভিন্ন বয়সের দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা। লাখ লাখ মানুষ জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় ও জিকির করেন।
এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্ব। ৯ ফেব্রুয়ারি আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্বের ন্যায় একইভাবে ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা।
ইজতেমা উপলক্ষে লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তায় র্যাব, পুলিশ, আনসারসহ কয়েক হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করেন। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয় পুরো ইজতেমার ময়দান।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মুরব্বি মুফতি জহির ইবনে মুসল্লি বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি। ইতোমধ্যে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রস্তুতির ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইজতেমায় প্রথম পর্বে মুসল্লিদের উপস্থিতি অনেক বেশি হয়। ফলে ময়দানে জায়গা হয় না। মুসল্লিদের সমস্যা হয়। জায়গা না পেয়ে অনেক মুসল্লি চলে যান। তাই এবার দিয়াবাড়ীতে আরেকটি ময়দান প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলে আসছি আমাদের (মাওলানা জোবায়ের অনুসারী) প্রথম পর্ব দুইভাবে ভাগ করে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা করার। এছাড়া আমাদের বর্তমানে কোনো সমস্যা নেই। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবেই বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।’
১৭ স্পেশাল ট্রেন
এদিকে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৭টি স্পেশাল ট্রেন চালু করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রেল ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. কামরুল আহসান এ তথ্য জানান। এ সময় রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম উপস্থিত ছিলেন। কামরুল আহসান বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও মুসল্লিদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পেশাল ট্রেন চালু করেছে। এর মধ্যে শুধু ২ ও ৯ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) ঢাকা-টঙ্গী ও টঙ্গী-ঢাকা রুটে দুটি জুমা স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
এছাড়া ৩ ও ১০ ফেব্রুয়ারি জামালপুর-টঙ্গী রুটে একটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। আখেরি মোনাজাতের দিন (৪ ও ১১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা-টঙ্গী রুটে পাঁচটি ও টঙ্গী-ঢাকা রুটে পাঁচটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। টঙ্গী-ময়মনসিংহ রুটে চলবে একটি স্পেশাল ট্রেন। পাশাপাশি টঙ্গী-টাঙ্গাইল রুটে একটি এবং ঈশ্বরদী-টঙ্গী-ঈশ্বরদী রুটে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
এছাড়া সব আন্তঃনগর মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে কোচের প্রাপ্যতা এবং যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী যথাসম্ভব অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে বলেও জানান তিনি।
আগামী ২, ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্ব এবং চার দিন বিরতি দিয়ে ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম বুলেটিন