নিজস্ব প্রতিনিধি :
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে হুমকির মুখে পড়েছে সামুদ্রিক কাছিম। শীত মৌসুমে বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে এসে মরা পড়ছে একের পর এক বিশাল আকৃতির সামুদ্রিক মা কাছিম। সোমবারও (২২ জানুয়ারি) দ্বীপের সৈকতে ভাসছে ৩টির বেশি মরা মা কাছিম।
স্থানীয়রা বলছে, বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে এসে বেওয়ারিস কুকুরের দল কাছিমকে আঘাত করে মেরে ফেলছে। তবে, সামুদ্রিক কাছিম রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
সোমবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের উত্তর সৈকতের নোনাজলে ভাসছে বিশাল আকৃতির দুটি মরা মা কাছিম। এসব কাছিমের গায়ে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। গায়ের কোনো অংশ রক্তাক্ত আবার কোনো অংশ কামড়ে ছিড়ে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, একসময় সেন্টমার্টিনে ডিম পাড়ার জন্য সমুদ্র থেকে ছুটে আসত শত শত মা-কচ্ছপ বা সামুদ্রিক কাছিম। নির্জন সৈকতে ডিম দিয়ে সেই কাছিম আবার ফিরে যেত সাগরে। কিন্তু এখন ডিম পাড়ার সেই সুযোগ পাচ্ছে না কাছিম। এখন ডিম পাড়তে আসা মা কাছিমকে হামলার করছে বেওয়ারিস কুকুরের দল। কামড়ানোর আঘাতে মারাও যাচ্ছে মা কাছিম।
উত্তর সৈকতের ডাব বিক্রেতা জুয়েল বলেন, উত্তর সৈকতসহ সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টে ৩টি বেশি মা কাছিম কুকুরের আক্রমণে মরা পড়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু মা কাছিমগুলোকে বাঁচাতে পারেনি। মূলত কাছিমগুলো ডিম পাড়তে এসেছিল। কাছিমগুলোর পেটে ডিমও রয়েছে।
হকার আবদুর রহমান বলেন, প্রতিবছর কম বা বেশি মা কাছিম উত্তর সৈকতে ডিম পাড়তে আসে। কিন্তু কুকুরের আক্রমণে অনেক কাছিম মারা যায়। গত বছরও একটি মা কাছিম আমরা বাঁচিয়ে ছিলাম। ওই কাছিম ২’শোর বেশি ডিম দিয়েছিল। যা পরবর্তীতে সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছিল। আমরা চেষ্টা করি, মা কাছিমকে বাঁচাতে কিন্তু অনেক সময় কুকুরের আক্রমণে মারা পড়ে মা কাছিম।
এদিকে মরা কাছিমগুলো পড়ে রয়েছে সৈকতের বালিয়াড়িতে, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। কিন্তু এসব মরা কাছিম সরানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। অনেক পর্যটক কাছিমগুলোর ছবি তুলছেন আবার অনেক পর্যটক নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত সৈকতের উত্তর পয়েন্ট ছাড়ছেন।
উত্তর সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটক হুমায়ুন কবির বলেন, খুবই কাছাকাছি সৈকতের দুটি পয়েন্টে ২টি বড় বড় কাছিম মরে পড়ে রয়েছে। খুবই বেশি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিন্তু এসব মরা কাছিমগুলো সরানোর কেউ নেই।
তবে কাছিম নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতাদের দাবি, ডিম পাড়তে আসা মা কাছিম রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থার নেয়ার।
কক্সবাজার হিমছড়ি সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, প্রতিবছরই সেন্টমার্টিন সৈকতে ডিম পাড়তে আসা মা কাছিম কুকুরের আক্রমণে মারা যাচ্ছে। এসব মা-কাছিমকে রক্ষায় সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থার নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সেন্টমার্টিনের স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানায়, গেল এক সপ্তাহে কুকুরের আক্রমণে সেন্টমার্টিন সৈকতে ডিম পাড়তে আসা ৫টির বেশি সামুদ্রিক কাছিম মরা পড়েছে।