স্পোর্টস ডেস্ক :
পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে প্রথম সুপার ওভার মিস হলেও দ্বিতীয় সুপার ওভারে আফগানদের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নিয়েছে ভারত।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়ের জন্য শেষ ওভারে আফগানিস্তানের দরকার ছিল ১৯ রান। তারা করতে পারে ১৮। ভারতের ২১২ রানের জবাবে তাদের স্কোরও ২১২। এরপর প্রথম সুপার ওভারে আফগানরা করে ১৬, ভারতও একই রানে গিয়ে আটকা পড়ে। দ্বিতীয় সুপার ওভারে প্রথম দুই বলে চার ও ছক্কার পরও ভারত করতে পারে স্রেফ ১১ রান। তবে আফাগানরা এ রান নিতে না পারলে জয় পায় ভারত।
এর আগে মুকেশ কুমারের এলোমেলো বোলিং আর গুলবাদিন নাইবের দারুণ ব্যাটিংয়ে ম্যাচ হয় ‘টাই’। সেখান থেকেই ম্যাচে রোমাঞ্চ, উত্তেজনা ও নাটকীয়তার মাত্রা যেন আরও বেড়ে যায়। ‘টাই’ হওয়া ম্যাচ যে সুপার ওভার হয় তাতেও ম্যাচের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা যায় না। সুপার ওভারেও ম্যাচ হয় ‘টাই’। আরেকটি সুপার ওভারে খেলতে হয় দুদলকে। অবশেষে দ্বিতীয় সুপার ওভারে জয়-পরাজয়ের মাধ্যমে আলাদা করা যায় দুদলকে। লেগ স্পিনার রাভি বিষ্ণইয়ের দারুণ বোলিংয়ে আফগানিস্তানের হৃদয় ভাঙে ভারত।
যেখানে প্রথম সুপার ওভারে আফগানরা করে ১৬, ভারতও সে রানই করে। দ্বিতীয় সুপার ওভারে প্রথম দুই বলে চার ও ছক্কার পরও ভারত করতে পারে স্রেফ ১১ রান। তবে আফগানিস্তান দ্বিতীয় সুপার ওভারে লড়াই জমাতেই পারেনি। বিষ্ণইয়ের প্রথম বলের পর তৃতীয় বলেও উইকেট হারায় তারা। মাঝে করতে পারে স্রেফ ১ রান।
বিষ্ণই শেষের নায়ক হলেও ভারতের মূল নায়ক অধিনায়ক রোহিত শার্মা। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচটি সেঞ্চুরির কীর্তি গড়ে ৬৯ বলে অপরাজিত ১২১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন তিনি। সঙ্গে রিঙ্কু সিংয়ের ৩৯ বলে অপরাজিত ৬৯ রানের খুনে ইনিংসের সুবাদে ৪ উইকেটে ২৪ রানের বিপর্যয় থেকে দুইশ ছাড়ানো সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা। পরে প্রথম সুপার ওভারেও আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ বল ছক্কায় উড়িয়ে জয়ের সমীকরণ ২ বলে ৩ রানে নামিয়ে আনেন রোহিত।
পরের বলে এক রান নেওয়ার পর স্বেচ্ছায় মাঠ ছেড়ে যান তিনি। যেটির কেতাবি নাম ‘রিটায়ার্ড আউট’। মূলত ডাবল নেওয়ার ভাবনায় রোহিতের জায়গায় নন স্ট্রাইকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয় রিঙ্কুকে।
শেষ বলে ২ রানের প্রয়োজনে ইয়াশাসবি জয়সওয়াল অবশ্য ঠিকমতো ব্যাটে খেলতে পারেননি, বল যায় কিপারের কাছে, আসে ১ রান। দ্বিতীয় সুপার ওভারেও রোহিত শুরুটা করেন ফারিদ আহমেদের প্রথম দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে। কিন্তু রিঙ্কুর বিদায়ের পরের বলে রোহিতও রান আউট হয়ে গেলে ১১ রানেই থমকে যায় ভারত। সেটিই যথেষ্ট হয় বিষ্ণইয়ের দারুণ বোলিংয়ে।
এই স্পিনারের প্রথম বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ নাবি। পরের বলে আসে ১ রান। তৃতীয় বলে ক্যাচ তুলে দেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তিন ম্যাচের সিরিজ শেষ পর্যন্ত ৩-০ ব্যবধানেই আফগানদের ওয়াটওয়াশ করে জিতে নিল ভারত।
মূল ম্যাচে রান তাড়া করতে নেমে গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটে আফগানদের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। পাওয়ার প্লেতে রান এসে পড়ে ৫১। ১০ ওভারে তাদের রান ছিল বিনা উইকেটে ৮৫। যদিও এরপরই দ্রুত ৩ উইকেট হারায় আফগানরা। গুরবাজকে (৩২ বলে ৫০) ফিরিয়ে ৯৩ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদিপ ইয়াদাভ। গুরবাজের মতো ইব্রাহিমও থামেন পঞ্চাশ ছুঁয়েই (৪১ বলে ৫০)। ওমারজাই ফেরেন শূন্য রানে।
এরপর উইকেটে গিয়ে ১৬ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৩৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন আফগানিস্তানের আশা বাঁচিয়ে রাখা নাবি। এ দিন ব্যাট হাতে ভালো করতে না পারলেও বাউন্ডারিতে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে ৫ রান বাঁচিয়ে দেন কোহলি। শেষ ২ ওভারে ৩৬ রানের প্রয়োজনে নাজিবউল্লাহ জাদরান চার মেরে শুরু করলেও দারুণ রানিং ক্যাচে এ ব্যাটসম্যানকে ফেরাতেও বড় ভূমিকা রাখেন ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার।
সবশেষ ৮ বলে দরকার যখন ২৬, আভেশ খানকে ছক্কায় ওড়ান গুলবাদিন। তিনে নামা এই ব্যাটসম্যান শেষ ওভারে মুকেশের দ্বিতীয় বলে মারেন চার। তার আগে-পরে দুটি ওয়াইড দেন ভারতের পেসার। চতুর্থ বলে মুকেশকে ছক্কায় উড়িয়ে সমীকরণ ২ বলে ৫ রানে নামিয়ে আনেন গুলবাদিন। শেষ দুই বলে তার দুটি ডাবলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। ২৩ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এর আগে হালকা ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বিনা উইকেটে ১৮ থেকে ৪ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় ভারত।
জয়সওয়াল ও শিভাম দুবে মিলে ৫ রান করতে পারলেও কোহলি ও স্যামসন পান ‘গোল্ডেন ডাক’ এর তেতো স্বাদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি শূন্যের রেকর্ডে সাচিন টেন্ডুলকারকে (৩৪ বার) তাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন বিরাট কোহলি (৩৫ বার)। ১৪ মাস পর এই সিরিজ দিয়ে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ফিরে প্রথম দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন রোহিত।
সেই রোহিতই এবার ধ্বংসস্তূপ থেকে দলকে টেনে তোলেন, তাকে দারুণ সঙ্গ দেন রিঙ্কু। তাদের ব্যাটে চার-ছক্কা আসে প্রায় প্রতি ওভারেই। শেষ দিকে আফগান বোলারদের ওপর রীতিমতো তাণ্ডব চালান দুজন। ৪১ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রোহিত শতকে পা রাখেন ৬৪ বলে। করিম জানাতের শেষ ওভারে রেকর্ড ৩৬ রানসহ শেষ দুই ওভারে আসে ৫৮ রান।
রোহিত ও রিঙ্কুর জুটির রান ৯৫ বলে ১৯০, এই সংস্করণে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি, আর ভারতের যে কোনো উইকেটেই সর্বোচ্চ। দলীয়-ব্যক্তিগত রেকর্ড হয়েছে আরও বেশ কিছু। রেকর্ডময় ম্যাচে শেষটা হলো আরও রোমাঞ্চকর, নাটকীয়তায় ঠাসা। শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি যেখানে রোহিত-কোহলিদেরই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত- ২০ ওভারে ২১২/৪ (জয়সওয়াল ৪, রোহিত ১২১*, কোহলি ০, দুবে, ১, স্যামসন ০, রিঙ্কু ৬৯*; ফারিদ ৪-০-২০-৩, ওমারজাই ৪-০-৩৩-১, কাইস ৪-০-২৮-০, সেলিম ৩-০-৪৩-০, শারাফউদ্দিন ২-০-২৫-০, জানাত ৩-০-৫৪-০)
আফগানিস্তান- ২০ ওভারে ২১২/৬ (গুরবাজ ৫০, ইব্রাহিম ৫০, গুলবাদিন ৫৫*, ওমারজাই ০, নাবি ৩৪, জানাত ২, নাজিবউল্লাহ ৫, শারাফউদ্দিন ৫*; মুকেশ ৪-০-৪৪-০, আভেশ ৪-০-৫৫-১, বিষ্ণই ৪-০-৩৮-০, ওয়াশিংটন ৩-০-১৮-৩, দুবে ২-০-২৫-০, কুলদিপ ৩-০-৩১-১)
ফল : ম্যাচ টাই, প্রথম সুপার ওভার টাই, দ্বিতীয় সুপার ওভারে জয়ী ভারত
সিরিজ : ৩ ম্যাচের সিরিজ ভারত ৩-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ : রোহিত শার্মা
ম্যান অব দা সিরিজ : শিভাম দুবে
Leave a Reply