খানসামা উপজেলা প্রতিনিধি (মোঃ রাশেদুল ইসলাম)
খানসামা উপজেলার আলোচিত উপবালা হত্যাকাণ্ডের ১ বছর ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও ঘটনা উন্মোচন ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
২০২২ সালের ২৯ জুলাই উপজেলার টাংগুয়া কুমারপাড়ার বাবার বাড়ি ও স্বামীর বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায়, সন্ধ্যায় উপবালা ও তার মেয়েসহ বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলে পথিমধ্যে নির্যাতনের শিকার হন তারা। পরে নিহত অবস্থায় ধানক্ষেত থেকে উপবালার মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। আহত অবস্থায় পড়ে ছিল তার মেয়ে বিপাশা। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে অবস্থার উন্নতি হয়।
সে হত্যার বিচার তো দূরের কথা- তদন্তই শেষ হয়নি। থানা পুলিশের হাত ঘুরে তদন্তে দায়িত্ব পড়েছে বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-তে, সেখানে মামলা গেলেও নেই কোনো অগ্রগতি।
উপবালা রায়কে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে উপজেলায় বেশ কয়েকবার হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে মানববন্ধনসহ ওই এলাকার হিন্দু ধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা বর্জন করেও কোনো কাজ হয়নি। শুধুই কী পূজা বর্জন, নির্যাতিত বিপাশা মায়ের হত্যার বিচার দাবিতে মণ্ডপে নিয়েছিলেন অবস্থান কর্মসূচি। দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে এ হত্যার বিচারের দাবি করেন এলাকাবাসী।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে ‘কেমন জীবনযাপন করছে বিপাশা ও বনলতা?’ বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকারে নিহত উপবালার ১২ বছর বয়সী মেয়ে বিপাশা কান্না করতে করতে বলেন, ‘আমার মাকে যারা নৃশংসভাবে মেরেছে তাদের বিচার চাই। আমি আমার মায়ের হত্যার বিচার চাই। আমার মাকে যারা মেরেছিল তাদের অতি দ্রুত বিচার চাই। আমার মায়ের হত্যার বিচার না হলে, আমি কাউকে ছাড়ব না। আমার মাকে কেন মারল? এটা আমি জানতে চাই। আমার মায়ের কী অপরাধ ছিল? কেন আমার মায়ের স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত করল? আমার কী অপরাধ ছিল? যে আমার মাকে অনেক দূরে ঠেলে দিল, যেখান থেকে আর আসতে পারবে না।’
তৎকালীন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সময়ে খুনিদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হয়নি। তদন্ত নিয়ে আস্থা হারালেও এখনো বিচারের আশা ছাড়েননি নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।
বিপাশাকে বলাহয় বড় হয়ে কী হতে চাও এমন প্রশ্নের উত্তরে বিপাশা বলে, ‘আমি বড় হয়ে পুলিশ হতে চাই। পুলিশ হয়ে প্রথমে আমি মায়ের হত্যার বিচার করব। যারা আমার মায়ের ভালোবাসা থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছে।’ এ সময় বিপাশার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে এলাকা। আশপাশের সকল মানুষের চোখ ছিল ছলছল।
এই হত্যাকাণ্ডের পরে নিহত উপবালার স্বামী নিশান চন্দ্র রায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে খানসামা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এ বিষয়ে নিহতের স্বামী নিশান রায় বলেন, ‘রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় না আনায়, চরম হতাশায় ভুগছি। দেড় বছর হয়ে গেলেও নিরুপায় হয়ে দিন কাটাচ্ছি। স্ত্রী হত্যার ন্যায়বিচার পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
উপবালার বিষয়ে কথা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিনাজপুর পিবিআই-এর উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউনুল হক বলেন, ‘মামলা তদন্তাধীন রয়েছে আমার সিনিয়র স্যাররা এ বিষয়ে অবগত রয়েছেন। তাদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন দিক থেকে সঠিক তথ্য উদঘাটন করার চেষ্টা করছি। আমরা চাই তদন্তে যেন, একজন নিরপরাধ মানুষেরও নাম না আসে। কেবল হত্যার সঙ্গে জড়িতরা ধরা পড়ুক। তাই তদন্তে একটু বিলম্ব হচ্ছে।’
Leave a Reply