তাহিরুল হক -মৌলভীবাজার :প্রথম বুলেটিন
Study Tour ব্যানার নিয়ে হঠাৎ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উপস্থিত মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ৩ নং ভাটেরা ইউনিয়নের, ভাটেরা গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা সকালে মাঠে নেমেছে ক্রিকেট দল, সাদা জার্সি, লাল বলের খেলা।
তাই সকাল থেকে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তেমন উপস্থিতি দেখা যায় নি।
হঠাৎ স্টেডিয়ামের পূর্ব গ্যালারিতে আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ, গ্যালারিতে ঢোলের তালের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ চিৎকার।
ক্রিজে তখন মুমিনুল হক ব্যাটিং করায় কারো মুখে শোনা যায়, ‘মুমিনুল-মুমিনুল’।
সারিবদ্ধভাবে মাঠে ঢুকে এক ঝাঁক স্কুল শিক্ষার্থী হাজির বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে। তাদের মাঠে আসার পেছনে রয়েছে দারুণ এক গল্পও।
সিলেট থেকে বেশ দূরের উপজেলা কুলাউড়া, সেখানকার ভাটেরা গার্লস স্কুলের আজ শিক্ষা সফর, গত বছর শিক্ষা সফরে অ্যাডভেঞ্জার পার্কে যাবার পথে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম দেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা, সেই থেকে তাদের ইচ্ছা মাঠে বসে খেলা দেখার।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক, শিক্ষিকা তাদের সেই ইচ্ছা জানতে পেরে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
দীর্ঘ পরিকল্পনায় তাদের শিক্ষা সফরের অন্যতম ভেন্যু নির্ধারণ করা হয় বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট মঞ্চ।
মঙ্গলবার ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৮০ শিক্ষার্থী মাঠে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখেছেন। তাদের সঙ্গে এসেছেন শিক্ষক/শিক্ষিকা আরো ২০ জন।
গলায় স্কুলের আইডিকার্ড।
মাথায় বাংলাদেশের পতাকার ব্যান্ড পরে গ্যালারি মাতিয়ে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সেই আনন্দযজ্ঞে যোগ দেন বাঘের পোশাক করা টাইগার রবি।
টিভির পর্দায় দেখা সেই ‘টাইগার’ দেখেও আনন্দিত হন তারা। সেই সময়ে ক্রিজে ব্যাটিং করছিলেন মুমিনুল ও জয়। তাদের একেকটি শটে যেমন আনন্দ পেয়েছেন। ঠিক তেমননি নিউ জিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের দেখেও উল্লাস প্রকাশ করেছেন।
ড্রেসিংরুম থেকে ছুটে এসে সেই সব দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করেছেন নিউ জিল্যান্ডের মিডিয়া ম্যানেজার।
ভাটেরা গার্লস স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক কাওসার আহমেদ মুন্না বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা মেয়েদেরকে স্টেডিয়ামে এনে খেলা দেখানোর। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি হোক বা টেস্ট, ওদের মাঠে বসে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল। আজ আমাদের শিক্ষা সফর। আমাদের মনে হলো আজই সেরা সময় ওদের এখানে নিয়ে আসার এবং ওরা খুবই আনন্দিত।
বাংলাদেশের খেলা মাঠে বসে দেখতে পারছে, এর চেয়ে আনন্দের আর কি আছে।
বিসিবিকে এজন্য ধন্যবাদ, উনারা আমাদের সুযোগটা করে দিয়েছে।
সপ্তম শ্রেণির ক্লাস টিচার শামীমা খাতুন বলেন, আমাদের স্কুলের মেয়েদেরকে আমরা সব বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করি। সেজন্য আমরা ওদের সঙ্গে প্রায়ই ক্রিকেট নিয়ে কথা বলি।
এছাড়া ওরা নিজেরাও খেলতে পছন্দ করে, ওদেরকে অনুপ্রেরণা দিতে স্টেডিয়ামে নিয়ে এসেছি, ওরা নিজেরাও আগ্রহী হয়েছে প্রিয় ক্রিকেটারদের খেলা দেখবে, যেহেতু সিলেটে খেলা হচ্ছে, ওরা যেন স্ব-চোক্ষে খেলাটা দেখতে পারে সেই অভিজ্ঞতা দিতে এবং কিছু যেন শিখতে পারে সেজন্য এখানে নিয়ে আসা।
সচরাচর শিক্ষা সফর হয় ঐতিহাসিক কোনো জায়গা কিংবা বিনোদন পার্কে, সেখানে শিক্ষার্থীদের মাঠে নিয়ে আসার বিষয়ে জানাতে গিয়ে শামীমা আরো বলেন, বর্তমানে শেখার জায়গাটা উন্মুক্ত, যে যে জায়গা থেকে শিখতে চায় ওই জায়গা থেকে শিখতে পারে।
স্টেডিয়ামে মেয়েরা এসে খেলা দেখতে পারছে বিনিয়মে অনেক কিছু শিখতে পারছে, এটা আমাদের প্রাপ্তি এই শিক্ষা সফরের।
মাঠে বসে প্রিয় দলের খেলা দেখতে পেরে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা, নুসরাত জাহান তিন্নি নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা এখানে উপস্থিত হতে পেরে খুবই আনন্দিত, খেলাটা দারুণ উপভোগ করছি, এখানে খেলা দেখার পর শেখ হাসিনা পার্কে যাবো।
আমার প্রিয় খেলোয়াড় তামিম ইকবাল। তিনি এখন নেই, মুশফিকুর রহিমও আমার পছন্দের।
আরেক শিক্ষার্থী নিশিতা দাস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের দেখব, তাদের প্রেরণা দেব, আমরা নতুন কিছু শিখতে পারব, মাঠে বসে খেলা দেখার অনুভূতিটা জানা ছিল না, আজ হয়ে গেল অন্যরকম অনুভূতি, নতুন জায়গায় কোনোদিন আসিনি তাই চিরজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামেরও প্রশাংসা করলেন শিক্ষার্থীরা ‘একদিকে পাহাড়। আরেকদিকে স্টেডিয়াম, খুব সুন্দর।আবহাওয়াও দারুণ, এরকম পরিবেশে কখনো আসা হয়নি, খুব ভালো লাগছে। টিভিতে দেখা হয়, আজ সরকারি দেখার সুযোগ হয়েছে।
কিডস ওয়াল্ড একাডেমির প্রধান শিক্ষক মাহবুব খান বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি বছর ট্যুর করে থাকি এটা একটু ভিন্ন, স্ট্যাডি ট্যুরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আনন্দের সঙ্গে জ্ঞান বৃদ্ধি করা, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চার করা।
ভাটেরা গার্লস স্কুলের সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন সেজু বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের আনন্দ দেওয়া তাদের আনন্দে আমার আনন্দিত এবং আজকের এই শিক্ষা সফরে স্টেডিয়ামে এসে দেখা করার জন্য ধন্যবাদ জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র পরিচালক কুলাউড়ার কৃতি সন্তান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল কে।
Leave a Reply