today visitors: 5073432

রাবিতে তিনজন বহিষ্কার, সুষ্ঠু তদন্ত না হলে হুমকি দিলেন রাজু

রহিদুল ইসলামআত্মহত্যার, স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহীঃ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষা বর্ষের ভর্তিতে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ৩ জনকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার মধ্যে একজন হলেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ। তবে এ ঘটনায় কোনো তদন্ত ছাড়া বহিষ্কার আদেশ যৌক্তিক নয় বলে জানান ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় যেকোনো ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তি হওয়া উচিত। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকা ব্যক্তিও শাস্তি পেতে পারে। এদিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না করলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন রাজু আহমেদ।

ঘটনায় নিজের অপরাধ প্রমাণ হলে শাস্তি মাথা পেতে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া রাজু আহমেদ। তিনি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শেরে ই বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া বিভাগের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে রাজু লিখেছেন, গত ১৭ আগস্ট রাতে মহিবুল মমিন সনেট ফোন করে জানায় তার এক ছোট ভাই ভর্তি হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসবে তাকে একটু সহযোগীতা করতে হবে। পরের দিন সকাল সোয়া ৯টা থেকে পরপর দুইটা ক্লাস করি। ১২টার ছাত্রলীগের নিয়মিত প্রোগ্রাম সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করি। শেরে বাংলা হলের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দায়িত্বে থাকায় হলে অনেক ব্যাটমেট ও বন্ধুদের সঙ্গে সনেটও আসত। ওদিন দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দীন একাডেমিক ভবনের সামনে বসে ছিলাম। হুট করে সনেট এসে বলে চলো রাজু ওই ছোট ভাই আসছে ভর্তি হওয়ার জন্য একটু দেখা করে আসি।

তিনি আরো লিখেছেন, এবার সনেটের সঙ্গে গিয়ে হাবিবের সাথে দেখা হয়। এসময় সাকোয়ান সিদ্দিক প্রাঙ্গনের সঙ্গে দেখা হয়। তারপর হাবিবকে শেরে বাংলা হল দেখানোর জন্য সনেট ও প্রাঙ্গন নিয়ে যাবে বলে ঠিক করে। তাদের সঙ্গে আমিও নিজের হলে আসি। হলে আসার পর তারা দুজনেই চুক্তির পাওনা টাকার ব্যাপারে আলাপ শুরু করে। এক পর্যায়ে তার বাড়ীতে ফোন করে তিন লাখ টাকার দাবি করে সনেট ও প্রাঙ্গন। এটির পর হাবিব যে প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তির প্রার্থী বুঝতে পেরে তাদের হল থেকে বের করে দেই। এরপর আমি নিজেও হল থেকে বের হয়ে আসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে এয়ারপোর্ট যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করি। এছাড়া আমার সঙ্গে তন্ময় ও প্রঙ্গনের কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল না।
এরইমধ্যে হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমাকে কল দিয়ে হলে ঝামেলার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। আমি পুরো বিষয়টি প্রাধ্যক্ষ স্যারকে জানায়। পরবর্তীতে তাদের হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রক্টর হাকিমুল ইসলাম স্যারের কাছে তুলে দেই।

ভুক্তভোগী নিজেকে নির্দোশ দাবি করে লিখেছেন, ‘আমার শুধু এতটুকুই আক্ষেপ থেকে যাবে, আমি হয়ত মরে যাব। এই ঘটনা উদঘাটনও হবে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের তদন্তের অভাবে আমার বাবা-মা হারাবে আমাকে, আর আমি হারাব আমার সার্টিফিকেট। যেটার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করতাম।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজু বলেন, ‘আমি স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই। আবার একাডেমিক জীবনে ফিরে আসতে চাই। এটির জন্য আমার অভিযোগের তদন্ত হওয়া দরকার। সেটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে শাস্তি দেক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজুর সহপাঠী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অন্যায়-অপরাধ হয় কিন্তু সেটির শাস্তির জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আমার বন্ধুর অপরাধের বিষয়ে কোনো সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা চাই তার অপরাধের তদন্ত হোক। যারা যারা জড়িত সবার অপরাধ আমলে নিয়ে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক ছাত্রলীগের সভাপত গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যে কোনো ধরনের অন্যায় বা অপরাধ হলে সেটি নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। কিন্তু তদন্ত ছাড়া কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে মূল জড়িতরা পার পেয়ে যেতে পারে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের একডেমিক চিন্তা করে এসব বিষয় দ্রুত সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শের-ই-বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডির সূত্রে জানতে পারি হলে একজনকে আটকে রাখা হয়েছে। তারপর খোঁজ-খবর নিতে রাজুকে কল দিয়ে তথ্য পাই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগ ও হলের শিক্ষার্থীদের কাছে ওই ভর্তিচ্ছুকে আছে। পরবর্তীতে রাজু ওই ভর্তিচ্ছুকে নিয়ে এসে দিতে সাহায্য করে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘আমরা মূলত ভুক্তভোগীর স্টেটমেন্ট নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত ও আইনের সহায়তা নিয়েছে। এখন আদালত থেকে নিজেকে নির্দোশ প্রমাণ করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক বিষয় ফিরে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি চাই না। তবে তাদের নামে যেহেতু মামলা হয়েছে তারা আদালতে নিজেকে নির্দোশ প্রমাণ করে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরে আসুক। আর বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলা হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *