today visitors: 5073432

শিরিন শারমিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদক প্রথম বুলেটিন

নানার এই কথার পর ছেলে পেতে সমস্যা হলো না। মায়ের বিয়ে হয়ে গেলো। নানা ছেলেকে বন্দরে চাকরি দিয়েছিলেন।
বিয়ের বছর খানিক পর আমার পৃথিবীতে আসার সময় যখন হয়ে এলো, বাবা তখন মাকে বললো,”এই সময়টা তুমি বাবার বাড়িতে থাকো। সেখানে তোমার যত্ন ভালো হবে। সন্তান জন্মের পর তোমাকে নিয়ে আসবো।”

মা বাবার বাড়িতে চলে এলো। এখানে আসার পর মায়ের জীবনে দুটো ভয়াবহ ঘটনা ঘটলো। যা মা দু:স্বপ্নেও ভাবে নি।

আমার জন্মের আগেই বাবা আরেকটা বিয়ে করলো। ফর্সা এক মেয়েকে বিয়ে করলো। এই খবর শোনার পর নানা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন।

সীমাহীন কষ্ট বুকে নিয়ে মা আমাকে জন্ম দিলো। আমিও মায়ের মতো কালো হলাম।
নানার বাড়িতে বাবাহীন বেড়ে উঠতে লাগলাম। এর মধ্যে মা বাবার ডিভোর্স হয়ে গেলো।

পর পর দুটো আঘাত পেয়ে মা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তারপর থেকে খুব কম কথা বলতো।
বেড়ে ওঠার পর থেকে মা’র সাথে কখনো বাবা বিষয়ে কথা বলি নি। কেননা মাকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাই নি।

পড়াশোনা শেষ হবার পর মামারা আমার জন্য পাত্র দেখতে শুরু করলো। কিন্তু কালো হওয়ার দরুন কেউ আমাকে পছন্দ করছিলো না। ঠিক মায়ের ক্ষেত্রে যা হয়েছিলো।

পরে মামারা নানার মতো সিদ্ধান্ত নিলো। অর্থাৎ আমাকে বিয়ে করার বিনিময়ে ছেলেকে সরকারি চাকরি দেবে।
এই সিদ্ধান্ত যখন মায়ের কানে গেলো তখন কম কথা বলা মা প্রথমবারের মতো জোরালো কণ্ঠে মামাদের বললো,”চাকরিটা ছেলেকে নয়, আমার মেয়েকে দাও।”
মামারা বললো,”তাহলে কি ওর বিয়ে হবে?”
“ওর বিয়ের চেয়েও জরুরী হলো চাকরি। কারণ চাকরির লোভে যে ছেলে ওকে বিয়ে করবে সে তো আমার মেয়ের জন্য বিয়ে করবে না। করবে চাকরির জন্য। আর মেয়েকে না চেয়ে অন্য কিছুর লোভে যে ছেলে বিয়ে করে সে কখনো নির্ভরযোগ্য হতে পারে না। আর এমন ছেলের সাথে সংসার করার চেয়ে না করা ভালো।”
এরপর বললো,”ওর চাকরি থাকলে বিয়ে না হলেও মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে পারবে।”

মায়ের শক্ত অবস্থানের কারণে এবং মায়ের জীবনে যা হয়েছে তা বিবেচনা করে মামারা সিদ্ধান্ত বদল করলো। এবং চাকরিটা কোনো ছেলেকে না দিয়ে আমাকে দিলো।

আমার চাকরি হওয়ার সংবাদে মা আনন্দিত হয়েছিলো। সেদিন আরেকটা সংবাদ বাড়িতে এসে পৌঁছেছিলো। মামাদের কাছ থেকে শুনলাম, বাবা অফিসের এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। বন্দরে ক্রেনের চেইন খুলে কন্টেইনার গিয়ে পড়েছিলো বাবার ওপর। জায়গাতেই বাবা মারা গেলো।

সংবাদটি শোনার পর মা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় নি। কিন্তু নানী এবং মামারা খুশি হয়েছিলো। তাদের দীর্ঘদিনের চাপা রাগ সেদিন কিছুটা হলেও কমেছিলো।

আর আমার খুশি নয়, আফসোস হয়েছিলো।
মা শুনে আমাকে বললো,”তোর আফসোস হওয়া স্বাভাবিক। বাবার আদর কখনো পাস নি।”
বললাম,”সে জন্য আফসোস নয়।”
মা কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলো,”তাহলে কেনো আফসোস?”
“বাবা নামক মানুষটিকে একবার দেখতে চেয়েছিলাম। কারণ আমি খুব দেখতে চেয়েছিলাম, শয়তান দেখতে কেমন হয়?”

এর মাস ছয়েক পর আমার বিয়ে হলো। ছেলেপক্ষ আমাকে পছন্দ করে তাদের বাড়ির বউ করে নিলো।

বিদায়ের সময় মাকে বললাম,”মাগো, তোমার জন্য চাকরিও পেলাম, সম্মানের সাথে বউও হতে পারলাম। কিন্তু তুমি তো মা কিছুই পেলে না। কথা দিচ্ছি, আজীবন তোমার সঙ্গে থাকবো। আমি তো প্রতিদিন তোমাকে ফোন করবোই, তুমিও যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে ফোন কোরো। তুমি ডাকলে নিমিষে হাজির হবো।”
মা উত্তরে বললো,”কে বললো কিছু পাই নি? তোর মতো সোনার টুকরো মেয়ে পেয়েছি। আর কী চাই বল?”

হুহু করে কেঁদে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। শক্ত করে।

“প্রেমের চেয়েও বিদ্রোহ সুন্দর”

যারা আইডি ফলো না করে গল্প পড়ছেন নীল লেখায় চাপ দিয়ে আইডি ফলো করেন কথা হবে—-অনেক। প্রথম বুলে টিন আপনার পাশে সব সময়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *