নির্বাহী সম্পাদক (প্রথম বুলেটিন) – ইমরান হক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেছেন, বিএনপিকে ঠেকাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। বিএনপিকে ঠেকানো যাবে না। এই বিএনপিকে ঠেকাতে গিয়েই হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হলো। বিএনপিকে ঠেকানোর দুঃসাহস দেখাবেন না। বিএনপি গণমানুষের দল। বিএনপিকে ঠেকানো মানে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। অবিলম্বে তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। শেখ হাসিনার আমলে বিচার বিভাগ ছিলো তার অঙ্গ-সংগঠন। যেভাবে নির্দেশ দিতেন, সেভাবেই কাজ করছে তারা।
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালিপূর্ব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (৭নভেম্বর) বিকেলে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের এই আলোচনা সভায় জনাব আবদুস সালাম আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে দেশকে শোষণ করেছে। ঢাকা শহরে মানুষ মরে পড়ে থাকতো। তাকে দাফন করার মতো কেউ ছিলো না। শেখ মুজিবের সময় আওয়ামী লীগের টাইটেল ছিলো কম্বল চোর। আর শেখ হাসিনার আসলে আওয়ামী লীগের টাইটেল হলো মানুষ হত্যাকারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী। এই আওয়ামী লীগকে আর এদেশে জায়গা দেয়া যাবে না। এই আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছিলো। এই হাসান আলী যাঠে আমাদের ২জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিলো। তারা বলেছিলো, বিএনপিকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজকে আওয়ামী লীগ কই? তাদের কি খুঁজে পাওয়া যায়? তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হতেই হবে ।
তিনি বলেন, এই সরকারকে বলতে চাই, তারেক রহমানের নামে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাকে দেশে আসার সুযোগ করে দিন। হাসিনা তারেক রহমানকে ভয় পেতো। তাই তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়েছিলো। আগামীতে আওয়ামী লীগকে যদি মোকাবেলা করতে হয় তাহলে তারেক রহমানকে লাগবে।তারেক রহমানের ভয়ে আওয়ামী লীগ গর্তে ঢুকবে। কাল যদি তারেক রহমান দেশে আসেন, এমন কোন্ পুলিশ আছে তাঁকে আটকাবে? কিন্তু আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমরা বলবো, তারেক রহমানকে দেশে আসার সুযোগ দিন।
তিনি আরো বলেন, হাসিনা দিনের ভোট রাতে করেছে। আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। রাজপথে গুলি করে মেরেছে। এসব হত্যার বিচার কি হবে না? অবশ্যই হবে। হাসিনা বলেছে, বেগম খালেদা জিয়া নাকি ২ কোটি টাকা চুরি করেছে। লজ্জা লাগে। আপনি শত শত কোটি টাকা চুরি করেছেন।
তিনি বলেন, এদেশের জনগণ ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। আমরা আমাদের ভোট দিতে চাই। এদেশের জনগণ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করবে কে দেশ চালাবে। ভোটবিহীন কোনো সরকারকে জনগণ মেনে নেবে না। আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করছি। তারও কিন্তু একটা সীমা আছে। তাই এই সরকারকে বলবো, নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। আর আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের বলবো, নিজেদের মধ্যে বিভেদ করবেন না। নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলুন। আর ধৈর্য ধরতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আবারো ক্ষমতায় যাবো।
আবদুস সালাম বলেন, ৭ নভেম্বর না ঘটলে ওইদিনই বাংলাদেশ শেষ হয়ে যেতো। আজকে বলে সংস্কার। সংস্কার করতে হলে জিয়াউর রহমানের দিকে তাকান। জিয়াউর রহমান অল্প সময়ের মধ্যেই সংস্কার করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেতা ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, সকলে জানেন তারেক রহমান বেগম খালেদা জিয়া কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না। কাজেই আপনারাও কোনো অন্যায় করবেন না। মানুষের কাছাকাছি থাকবেন। মানুষের মন জয় করে চলতে হবে, আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সলিম উল্যাহ সেলিম, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডঃ হারুনুর রশীদ, শাহজালাল মিশন, অ্যাড. জাহাঙ্গীর হোসেন খান, আফজাল হোসেন প্রমুখ।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুনীর চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আক্তার হোসেন মাঝি ও সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোশাররফ হোসেনের যৌথ পরিচালনায় আলোচনা সভা ও র্যালি অনুষ্ঠানে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মাস্টার, সাবেক সহ-সভাপতি এসএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী, ফরিদগঞ্জের এম এ হান্নান, মতলবের এমএ শুক্কুর পাটোয়ারী, তানভীর হুদা, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহবুব আনোয়ার বাবলু, দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান, খলিলুর রহমান গাজী, ফেরদৌস আলম বাবু, শরীফ মোঃ ইউনুছ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিমুছ সালাম, অ্যাডঃ মনিরা চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ আঃ কাদির বেপারীসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং সর্বস্তরের দলীয় হাজার হাজার নেতা-কর্মী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে শহরের হাসান আলী সরকারি হাইস্কুল মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একইস্থানে এসে শেষ হয়। র্যালির নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন জেলা ওলামা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফেজ জাকির হোসেন মৃধা। এর আগে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিট থেকে আগত বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। বর্ণাঢ্য র্যালিতে জাসাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর চাঁদপুর জেলা শহরে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের এই আয়োজন ছিল বিএনপির বড়ো ধরনের শোডাউন। এর আগে সকাল ৬:৩০ এর দিকে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করার মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা করা হয়। এরপর সকাল ১০টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুপুর ২:৩০টা থেকে শুরু হয় র্যালিপূর্ব আলোচনা সভা। যা নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে বিশাল সমাবেশে রূপ নেয়।
Leave a Reply