সৈয়দ শাহিন আক্তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদক
প্রথম বুলেটিন
ঘটনার বিবরণঃ গত ০১/১০/২০২৩ খ্রি: তারিখ সকাল অনুমান ৬.০০ ঘটিকার সময় ৯৯৯ এর মাধ্যমে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ খবর পায় যে, ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আমবাগিচা খালপাড়স্থ গদু মাস্তানের মাজারের সামনে পাঁকা রাস্তার উপর অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত লাশ পড়ে আছে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল এর মর্গে প্রেরন করেন। পুলিশ সিআইডির সহযোগিতায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর মাধ্যমে মৃতদেহের নাম-পরিচয় সনাক্ত করে এবং তার পরিবারকে সংবাদ দেয়। পরিবারের মাধ্যমে জানা যায়, মৃতদেহটি সুকুর নামে একজন সবজি ব্যবসায়ীর যিনি প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন সবজির আড়ৎ হতে সবজি কিনে নিয়ে সিরাজদিখান এর বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। ঘটনার দিন ভোর অনুঃ ০৫.০০ ঘটিকার সময় সবজি কেনার জন্য সুকুর সিরাজদিখান এর পাউসার গ্রাম হতে ঢাকার শ্যামবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন আমবাগিচা খালপাড়স্থ গদু মাস্তানের মাজারের সামনে পৌছালে অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা ধারালো অস্ত্র দ্বারা সুকুরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে একাধিক গুরুতর জখম করে রাস্তার উপর ফেলে যায়। এ ঘটনায় ডিসিষ্টের পিতা শেখ ওয়াজউদ্দিন (৬৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার মামলা নং-০৫, তাং- ০১/১০/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড এর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্তঃ চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এই হত্যাকান্ডের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য জনাব আসাদুজ্জামান, পিপিএম-বার, পুলিশ সুপার ঢাকা, মহোদয় তাৎক্ষনিক নির্দেশ প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্-দক্ষিণ) এর দিকনির্দেশনায় এবং জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর, বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত টিম নৃশংস ও ক্লু-লেস এই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে ব্যাপক তদন্ত কার্য়ক্রম শুরু করে। তদন্ত টিম ঘটনাস্থল ও এর আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করে। তদন্ত টিম সিসিটিভি ফুটেজ ও ক্রাইমসিন হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের লক্ষ্যে জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর, বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর দিক-নির্দেশনায় এবং জনাব শাহজামান, অফিসার ইনচার্জ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এসআই (নিঃ) হিরন কুমার ও এসআই (নিঃ) সাহদুজ্জামান ও এসআই (নিঃ) নির্মল কুমার দের একটি চৌকষ আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম প্রয়োগ করে কেরাণীগঞ্জ, ডিএমপি ও রাজশাহীতে টানা ২৪ ঘন্টা ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে নৃশংস এই হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ১) ইমন (২৫), ২) রুবেল (৩২), ৩) দীপু (২২), ৪) মন্টু (২০), ৫) হানিফ (২৮) দেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে ধৃত আসামীদের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে এই হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি সুইসগিয়ার চাকু জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী ইমনের হেফাজত হতে নিহত সুকুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা সবাই মাদকাসক্ত এবং পেশাদার ছিনতাইকারী। ছিনতাই করা টাকা দিয়ে তারা মাদক সেবন করে থাকে। ঘটনার দিন মাদকের টাকা জোগার করার উদ্দেশ্যে আসামীরা সারারাত ছিনতাই করার জন্য টার্গেট খুজঁছিলো। কিন্তু সারারাত তারা কোন সহজ টার্গেট খুজে পায়নি। এক পর্যায়ে ভোর বেলায় তারা বেশ উগ্র হয়ে যায়। এমন সময় সবজি ব্যবসায়ী সুকুর রিক্সায় করে সবজি কেনার উদ্দেশ্যে আমবাগিচা খালপাড় রাস্তা দিয়ে ঢাকার শ্যামবাজার সবজির আড়তে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ইমন ও রুবেল সুকুরের রিক্সার গতিরোধ করে। রুবেল রিক্সা আটকে রাখে এবং ইমন সবজি ব্যবসায়ী সুকুরকে এলোপাথারি ছুরিকাঘাত করে। এসময় দিপু, মন্টু ও হানিফ রাস্তা পাহারা দিচ্ছিল যাতে কোন লোক দেখে না ফেলে। ছিনতাইয়ের পর ইমন ও রুবেল সবজি ব্যবসায়ী সুকুরের কাছে ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা পায় যা দিয়ে তার সবাই মিলে মাদক সেবন করে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।
রুজুকৃত মামলার বিবরনঃ দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার মামলা নং- ০৫, তাং- ০১/১০/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড।
মৃতের নাম-ঠিকানাঃ মোঃ সুকুর (৪২), মাতা- রাহিমা বেগম, পিতা- শেখ ওয়াজউদ্দিন, সাং- চর মধুচরিয়া, আগলা, থানা- নবাবগঞ্জ, ঢাকা।
জব্দকৃত আলামতঃ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা সুইসগিয়ার চাকু।
উদ্ধারঃ ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন।
Leave a Reply