শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
ফকির মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল হক ও কর্মচারী আলমের বেতনের টাকা ,মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে পাওয়া দুটি কম্পিউটার ও প্রধান শিক্ষকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ,শ্রেণিতে পাঠদানে অমনোযোগী,পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ সহ বিভিন্ন অভিযোগে হাজী আব্দুল কাদের প্রধান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ( মৌলবি) ফকির মোহাম্মদ আব্দুল্লার পদত্যাগের দাবিতে গত দুই দিন ধরে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৯ আগস্ট ) বেলা ১০টায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে। পরে সকাল ১১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে করতে স্থানীয় শরিফ বাজার এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। খবর পেয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্রীপুর উপজেলা সমন্বয়ক মানুন সহ তার সহযোগীরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা সহকারী শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে ৭২ ঘণ্টা ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের পদ ত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন প্লাকার্ড প্রদর্শন করে স্লোগান দেয়। এর আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন তারা। স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হাজী আব্দুল কাদের প্রধান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফকির মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিভিন্ন সময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।শ্রেণি কক্ষে পাঠদানে অমনোযোগী থাকার একাধিক অভিভাবক রয়েছে। এ সব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়াও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতনের টাকা ও দুটি কম্পিউটার আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। আরও জানা যায়, এই শিক্ষক কম্পিউটার ক্রয়সহ স্কুলের নামে লাখ লাখ টাকা লোপাট করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক সহকারী শিক্ষক জানান,ধর্মীয় শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তার রোষানলে পড়তে হয়েছে। স্কুলের এক শিক্ষার্থী বলেন, স্যার শুধু আমাদের সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করে না, অভিভাবকদের সঙ্গে ও খারাপ ব্যবহার করেন। আমরা তার ভয়ের কারণে কোনো প্রয়োজনে ও স্যারের কাছে যেতে পারি না। আমরা শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষক চাই। স্কুলের এক অভিভাবক বলেন,অভিযুক্ত শিক্ষক আমাদের মেয়েদের হেনস্তা করছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ডেকে নেয়ার হুমকি নিয়েছে। তার সীমাহীন দুর্নীতির কারণে স্কুলের আজ বাজে অবস্থা। আমরা শিক্ষকের দ্রুত পদ ত্যাগ চাই।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিস চলাকালীন সময়ে সবাই যখন বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। অভিযুক্ত শিক্ষক ঠিক ওই সময়ে শিক্ষক মিলনায়তনে শুয়ে শুয়ে মোবাইল চালাচ্ছেন। এর কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বিদ্যালয় থেকে ওই শিক্ষক পালিয়ে যান। এ সময় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সরমিলা বলেন, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত চলবে। আর কোনো অনৈতিক মানুষের কাছে শিক্ষাঙ্গন অপবিত্র হতে দিতে চাই না । তাছাড়া কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে যেখানে অন্যায় হবে সেখানেই রুখে দাঁড়াবো। আমরা প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অসাধু ও দুর্ণীতিবাজ মুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলবো। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ফকির মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, আমার উপর আনিত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, সহকারী এক শিক্ষক ও এক কর্মচারীর বেতনের টাকা, দুটি কম্পিউটার আত্মসাৎ করার দায়ে বিদ্যালের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাছাড়াও তিনি ক্লাসে অমনোযোগী।প্রতিবাদ করলে নানান হুমকি দিয়ে থাকেন। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তার প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলামকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণকরার জন্য বলা হয়েছে।