মো: আলমগীর হোসেন বিশেষ প্রতিনিধি তারাকান্দা ময়মনসিংহ মোবাইল:০১৯১৭৩৩৮৪১৮
ধরণের বিপর্যয় থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহকে রক্ষা করার জন্য দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা ব্লাকআউট করে রাখা হয়েছিলো ময়মনসিংহ নগরীর অধিকাংশ এলাকা। ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে শুক্রবার সকাল ১১ টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। চরম ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। অন্যদিকে দু’দিনের ভারী বর্ষণে ময়মনসিংহ নগরবাসীর জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন নিচু এলাকার হাজার হাজার মানুষ। অনেকের বাড়ি-ঘর ও দোকানে পানি প্রবেশ করে। বিগত ৫২ বছরের তুলনায় নগরীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে বুধবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত। ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিলো ৩৭৮ মিলিমিটার। এর আগে ১৯৭১ সালের ২ অক্টোবর ময়মনসিংহে বৃষ্টিপাত হয়েছিলো ৩৮১ মিলিমিটার। ১৯৮৮ সালের বন্যাকে হার মানিয়েছে দু’দিনের বৃষ্টি। ভারী বর্ষণের কারণে নগরীর নিচু এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু’র দিকনির্দেশনায় একাধিক টিম বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার রাতে এ খবর লেখার সময় পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি নিষ্কাশনে বিশেষ ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছে। খালি বোতল, পলিথিন ও বিভিন্ন বর্জ্য দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ড্রেনের মুখ খোলে দিয়ে খালমুখী করা হচ্ছে পানির প্রবাহ। পানি কমে গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন নাগরিকরা।
জানা যায়, দু’দিনের ভারী বর্ষণের কারণে বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালীর ৩৩-১১ কেভি গ্রিডের কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করে। বড় ধরণের বিপর্যয় থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহকে রক্ষা করতে বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় বন্ধ করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ। নগরীতে শুরু হয় ভুতুরে পরিবেশ। ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় পাম্প বসিয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে পানি সেচে রাত ২ টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়। অতিমাত্রার ভারী বর্ষণের কারণে সব ব্যবস্থা ভেস্তে গিয়ে ১ ঘণ্টার মাথায় কন্ট্রোল রুমে আবারও পানি প্রবেশ করে। ভোর ৩ টার পর পুণরায় বন্ধ করা হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ। পাম্প বসিয়ে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে পানি বের করে বাঁধ দেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ১১ টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে। ২ দফায় দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা ব্লাকআউট করে রাখা হয়েছিলো ময়মনসিংহ নগরীর অধিকাংশ এলাকা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ১১ টি ফিডারে জলাবদ্ধতার শিকার লাখ লাখ মানুষ।
বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ (দক্ষিণ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত রায় জানান, কেওয়াটখালী গ্রিডের কন্ট্রোল রুমের ক্যাবল লাইন দিয়ে পানি প্রবেশ করায় ২ বার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। ফায়ার সার্ভিস ও আমাদের লোকজনের সহযোগিতায় পানি সেচে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, কন্ট্রোল রুমের ইকুইপমেন্ট পর্যন্ত পানি পৌঁছালে সর্বনাশ হতে পারতো। ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল ইসলাম শুক্রবার রাতে দৈনিক জাগ্রত বাংলা’কে বলেন, বিদ্যুতের কেওয়াটখালী ক্যাম্পাস নিচু এলাকায় অবস্থিত। টানা বর্ষণের কারণে হাটু পানি জমে গিয়েছিলো। ক্যাবল লাইন দিয়ে কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করেছিলো। রাতভর চেষ্টা চালিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। গ্রাহকরা অনেক কষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো। আগামী ৬ মাসের মধ্যে পাশেই নতুন ভবনে কন্ট্রোল রুম স্থানান্তর করা হবে। তখন আর এ ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না।
বুধবার রাত ৯ টায় ময়মনসিংহ নগরীতে বৃষ্টি শুরু হয়। ১২ টায় মাত্রা বেড়ে যায়। ভারী বর্ষণ চলতে থাকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত। বিকাল ৪ টা পর্যন্ত চলে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। সোয়া ৪ টার পর আবারও শুরু হয় ভারী বর্ষণ। বর্ষণ চলে শুক্রবার ভোর ৫ টা পর্যন্ত। পানি জমে যায় নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকায়। পানি প্রবেশ করে বাড়ি-ঘর ও দোকানপাটে। জিনিসপত্র ও মালামাল নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন হাজার হাজার মানুষ। সূত্র মতে, নগরীতে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করায় ড্রেনের পানির প্রবাহ বন্ধ এবং খালি বোতল, পলিথিন ও বিভিন্ন বর্জ্য দিয়ে ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। মসিক মেয়রের দিকনির্দেশনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মত মহব্বত আলী একাধিক টিম নিয়ে ড্রেনের মুখগুলো পরিষ্কার করে পানির প্রবাহ খালমুখী করেন। এতে কিছুটা হলেও জনজীবনে স্বস্তি নেমে আসে।
মসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ আলী শুক্রবার রাতে দৈনিক জাগ্রত বাংলা’কে বলেন, রেকর্ড পরিমাণ ভারী বর্ষণের কারণে নগরীর নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু জানান, যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা নাগরিক সেবা নিশ্চিত করবো। ভোগান্তি নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পূর্বে দখল হয়ে যাওয়া নগরীর ৫ টি খালের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে খননের পর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকলের সচেতনতা বাড়লে এর সুফল ভোগ করবেন লাখ লাখ নাগরিক।
Leave a Reply