today visitors: 5073432

বয়ঃসন্ধির মতো ৪০ এর পরের জীবনেরও একটা নাম থাকা উচিত। বুড়িও না, আবার ছুঁড়িও না,

অদ্ভুত একটা বয়স। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা সংসারী 15/20 বছর ধরে।

এক/দুই সন্তানের মা হলেও মনের ভেতরকার কিশোরীটা কোথাও যেন রয়ে যায়। সেই মনের কিশোরীটাকে অবদমনের ক্লান্তিকর প্রচেষ্টা সবসময়। কারন, পরিবেশ পরিস্থিতির কাছে ছুঁড়ি হয়ে থাকাটা নিছক হাস্যকর।

যা পাওয়ার ছিল, আর যা পাওয়া হয় নি, মনটা সেই হিসেব করতে বসে যায়, মন না চাইতেও। কতই বা আর ব্যস্ত থাকা যায়, সংসার, রান্নাবান্না, কিংবা অফিস নিয়ে? দিনের শেষে না পাওয়াগুলো কেমন যেন খোঁচাতে থাকে, দিনের শেষে মনে হয় কেউ তো থাকুক, কেউ তো শুনুক, মনের সব কথা, কোন জাজমেন্ট ছাড়া।

এদিকে সংসার, বাচ্চাকাচ্চা মানুষ করতে করতে জীবনটা বন্ধুহীন হয়ে যায়, সবাই যার যার জীবনে ব্যস্ত।

৪০ পেরোনো মেয়েরা একটা কঠিন রোগে ভোগে। নস্টালজিয়া! কারণে অকারণে শুধু পুরনো কথা মনে পড়ে। পুরোনো ক্ষতগুলো দগদগে হয়ে ওঠে! আবার মনে পড়ে ফেলে আসা শৈশব, তারুন্যের চঞ্চল মন, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির সোনালি দিনগুলো, তার সঙ্গে প্রথম দেখার ক্ষণটি, কখনো বা না ফুরানো কতো গল্প, বৃষ্টিবিলাস!!
যে কিছু সময়ের জন্য নিজের হয়েছিল, যে কষ্ট দিয়েছিল, কিংবা না চাইতেও যাকে কষ্ট দিতে হয়েছিল, সব মনে পড়ে যায় সময়ে অসময়ে।

রাতেরবেলা সব কাজ সেরে আয়নার সামনে দাঁড়ালে বড় অসুন্দর মনে হয় নিজেকে। চুল পড়ে অর্ধেক, মুখে বলিরেখারা সবে আঁকিবুকি শুরু করেছে, এক সময়ের মেদহীন শরীরটা স্বপ্নের মত লাগে, পেটে স্ট্রেচ মার্কের দাগ, সব মিলিয়ে ভীষণ অনাকর্ষণীয় লাগে নিজেকে। সেই বিষণ্ণতা ঢাকতেই হয়তো শাড়ি-গয়নায় মেতে থাকতে চায় মেয়েদের মন।

জীবনের অর্ধেকটা পার করে এসে ৪০ পেরোনো মেয়েদের দুর্নিবার প্রেমের ইচ্ছা জাগে। নাহ, প্রেম করার জন্য প্রেম না। মনে হয় কেউ থাকুক, কেউ শুনুক সব কথা, আবার কারো আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে মন চায়। মনটা আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চায়।

মন নতুন কাউকে চায়না, পুরাতন মানুষটাকেই আবার নতুন করে চায়। আবার তার চোখের তারা হয়ে থাকার বড় সাধ হয়। সংসার, বাস্তবতা সব অস্বীকার করতে চায় মনটা মাঝে মাঝেই।

৪০ পেরোনো মেয়ের বাবা-মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। সেই জীবনটা খুব মনে পড়ে প্রতিনিয়ত। যা করতে ইচ্ছা করে তাঁদের জন্য, কিন্তু চাইলেই করা যায় না। শুধু মেয়ের বাবা-মা বলে অধিকারবোধ সীমিত করে রাখতে হবে এই ব্যাপারটাই খুব ভাবায়।

শুধু ফাইন্যান্সিয়ালি ইন্ডিপেনডেন্ট হলেই কি সমাজ ইন্ডিপেন্ডেন্স দেয়? মেয়েরা কখনই সমাজের দাসত্ব থেকে পুরোপুরি বের হতে পারে না।

৪০ পেরোনো মেয়েটার মাঝে মাঝেই খুব একা থাকতে মন চায়। নিজের মত করে, নিজের জন্য। পরমুহূর্তেই সন্তানদের জন্য মন কাঁদে। মায়েরা সবচেয়ে ভয় পায় মৃত্যু। শত অভিমানেও সে বেঁচে থাকতে চায়, তার সন্তানদের জন্য। অন্তত যতদিন সন্তানদের জীবনে তার প্রয়োজন আছে ততদিন। চিৎকার করে কাঁদতে বড় সাধ হয়, যেন সেই কান্না কেউ শুনতে না পায়, এমন জায়গার খোঁজে মনে হয় জীবনটাই পার হয়ে যায়।

৪০ এর কাছে এসে মেয়েদের সবুজ মনটা আস্তে আস্তে নীল হতে শুরু করে, প্রথমে, হাল্কা, তারপর আস্তে আস্তে গাঢ় হয়। এক সময়, বেশি কথা বলা মেয়েটা চুপচাপ হয়ে যায়, মেনে নিয়ে বেঁচে থাকা শিখে যায়। পান থেক চুন খসতেই যে মেয়ের চোখের জল, নাকের জল এক হয়ে যেত, তার নিঃশব্দ কান্না খুব কাছের না হলে কেউ টেরই পায় না।

৪০ পেরোনো মেয়েগুলো ব্যালেন্স করতে করতে নিজেদের কথা ভুলে যায়। ভুলে যায় কি করলে ভালো লাগবে, ভুলে যায় মনটা কি চায়।

৪০ পেরোনো শরীরটাও আগের মত সাপোর্ট দেয় না। অপারেশনের ধকল, মেরুদন্ডে দেওয়া ইঞ্জেকশন শরীরটাকে অকেজো করে দেয়। ভাঙ্গা কোমর নিয়ে দিব্যি রান্নাবান্না, বাচ্চার দেখাশোনা, ঘরের কাজ, জার্নি সব করে যায়।তবু দিন শেষে শুনতে হবে কিছুই করে না।

৪০ পেরোনো মেয়েগুলো যত্ন চায়, তারা চায় কেউ তার মনের যত্ন করুক!