today visitors: 5073432

কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান: হিউম্যান রাইটস ফোরাম কর্তৃক সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান ।

এস চাঙমা সত্যজিৎ,স্টাফ রিপোর্টারঃ

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) সম্প্রতি বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বিরুদ্ধে চলমান যৌথ অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম এর ২৩ সদস্য এবং দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, অধিকারকর্মী ও উন্নয়নকর্মী কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিবৃতিতে এই অভিযোগের কথা ও আহ্বান জানানো হয় এবং একই সাথে কেএনএফের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, কেএনএফ এর বিরুদ্ধে পরিচালিত যৌথ বাহিনীর অভিযানে সাধারণ মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এইচআরএফবি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। একইসাথে কেএনএফের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে ফোরাম। কেএনএফের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার ও যৌথ বাহিনীর কাছে ফোরাম আহবান জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এ মাসের শুরুতে বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলার সোনালী ব্যাংকের দু’টি শাখায় এবং কৃষি ব্যাংকের একটি শাখায় কেএনএফ-এর সশস্ত্র দলের নেতৃত্বে ব্যাংকে হামলা, টাকা লুট, রুমা শাখার ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, ব্যাংকের সিকিউরিটির দায়িত্বে নিয়োজিত গার্ড, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ওপর আক্রমণ এবং আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার ন্যায় ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। এসব সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে গত ৭ এপ্রিল থেকে যৌথ বাহিনী বান্দরবান এলাকায় ব্যাপক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে কেএনএফ সদস্য বা এর সাথে সম্পৃক্তরা ছাড়াও বম ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের নির্বিচারে আটক, গণগ্রেপ্তার ও নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের চলাফেরার স্বাধীনতা সীমিত করা হয়েছে এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের গতি কমিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। ব্যাপক তল্লাশি, গুলিবর্ষণ আর নির্বিচারে আটকের কারণে সাধারণ মানুষ আতংক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা স্থানীয় জনসাধারণকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে যেমন, ৫কেজির বেশি চাল কিনতে বাধা দেয়ার মত অভিযোগ উঠেছে। আরো জানা গেছে যে, নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান কেএনএফ বিরোধী অভিযানে গত ৭ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১১১ জনকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন শিশুও রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কেএনএফের সাথে সম্পৃক্ত ৫ জন এবং অন্যান্য সকলে নিরীহ সাধারণ নাগরিক বলে আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা দাবি করছেন। জানা গেছে, এদের মধ্যে ১৩ জন ত্রিপুরা এবং ৫ জন মারমাসহ মোট ২৩ জনকে আটকের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একজন অন্ত:সত্ত্বা নারীকেও গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বম ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নাগরকিদের প্রতি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ সংবিধানের ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ২৮(১) (ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য), ৩১ (আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার), ৩২ (জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ), ৩৫(৫) (বিচার ও দ- সম্পর্কে রক্ষণ), ৩৬ (চলাফেরার স্বাধীনতা) অনুচ্ছেদসমূহ এবং একইসাথে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া আটক এবং রিমান্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ প্রদত্ত নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ মনে করে যে, বিভিন্ন পক্ষের সাথে ফলপ্রসূ সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। একইসাথে এও দাবি জানাচ্ছে যে, কেএনএফ এর বিরুদ্ধে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অভিযানে সাধারণ জনগণ যাতে কোন ধরনের হয়রানি, নির্যাতন বা নিরাপত্তাহীনতার শিকার না হয়, এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকারসমূহ যেন কোনভাবে লঙ্ঘিত না হয় তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। ফোরাম সরকারের কাছে, বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের কারণে উত্থাপিত সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগসমূহ নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখার এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ এর সদস্যবৃন্দ ১. ড. হামিদা হোসেন, এক্সপার্ট, এইচআরএফবি; ২. অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, এক্সপার্ট, এইচআরএফবি; ৩. রাজা দেবাশীষ রায়, এক্সপার্ট, এইচআরএফবি; ৪. ফারুখ ফয়সল, আহবায়ক-এইচআরএফবি, এবং নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), সচিবালয়; ৫. শাহীন আনাম, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি, এবং নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন; ৬. জাকির হোসেন, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি এবং প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ; ৭. সারা হোসেন, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি এবং সম্মানিত নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট); ৮. রঞ্জন কর্মকার, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট (স্টেপস); ৯. সালেহ আহমেদ, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (বিএসডবি-উএস); ১০. সঞ্জীব দ্রং, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; ১১. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), সদস্য, এইচআরএফবি; ১২. ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভানেত্রী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ (বিএমপি), সদস্য, এইচআরএফবি; ১৩. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্মস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), সদস্য, এইচআরএফবি; ১৪. খুশি কবির, সমন্বয়ক, নিজেরা করি, সদস্য, এইচআরএফবি; ১৫. সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন (এএসএফ), সদস্য, এইচআরএফবি; ১৬. মনি রানী দাস, চেয়ারপারসন, বাংলাদেশ দলিত অ্যান্ড এক্সক্লুডেড রাইটস সোসাইটি (বিডিআরএম), সদস্য, এইচআরএফবি; ১৭. সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস), সদস্য, এইচআরএফবি; ১৮. দেওয়ান জামান, নির্বাহী পরিচালক, ফেয়ার, সদস্য, এইচআরএফবি; ১৯. পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন, সদস্য, এইচআরএফবি; ২০. রোকেয়া রফিক বেবী, নির্বাহী পরিচালক, কর্মজীবনী নারী, সদস্য, এইচআরএফবি; ২১. তাসনীম আজীম, সভানেত্রী, নারীপক্ষ, সদস্য, এইচআরএফবি; ২২. আবদুস সাত্তার দুলাল, ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব ডিজাবল্ড পিপলস অর্গানাইজেশনস (ন্যাডপো), সদস্য, এইচআরএফবি; ২৩. আশরাফুন্নেসা মিষ্টি, নির্বাহী পরিচালক, ওমেন উইথ ডিজাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, সদস্য, এইচআরএফবি