০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
‘মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকতে হবে’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পিবিআই, সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করেন। পুলিশ সদস্যরা শাস্তির আওতায় এসেছে, এমন ঘটনাও আছে।’
তিনি বলেন, মানবাধিকার সুরক্ষা করতে হলে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। সর্বক্ষেত্রে মানবাধিকার সংরক্ষণ হলে দেশ হবে উন্নত। এক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সব সময় সোচ্চার রয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সভায় জানানো হয়, গত বছরের শেষার্ধে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ২৮২টি অভিযোগ পেয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এসব অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩০টি অভিযোগ, ১২৯টি অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ সময়ে কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে ৫১টি অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছে। এর মধ্যে ১২টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। কার্যক্রম চলমান রয়েছে ৩৯টি অভিযোগের।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক। সভার শুরুতে কমিশনের পরিচিতি তুলে ধরেন কমিশনের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক। স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন কমিশন সচিব সেবাষ্টিন রেমা। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিত-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মুক্ত গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সুরক্ষা একে অন্যের পরিপূরক। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানতে আমরা গণমাধ্যমের সহায়তাই নিয়ে থাকি। আমার স্বপ্রণোদিত হয়ে যেসব অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছি তা গণমাধ্যমের খবরের ওপর ভিত্তি করেই।’
তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার বিষয়টি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গণমাধ্যমের নিত্য চর্চার বিষয়। এ কারণে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের কাজ সমমুখী। বৈশ্বিক শান্তি, সহাবস্থান, সহযোগিতা ও সর্বাত্মক কল্যাণের জন্যই যথার্থ মানবাধিকার চর্চা প্রয়োজন। মুক্ত গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সুরক্ষা একে অপরের পরিপূরক। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় কমিশন নিবিড়ভাবে করে থাকে। এ পর্যন্ত দেশের যে প্রান্তেই সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছে কমিশন সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’
ড. কামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নিজেই ছিলেন গণমাধ্যমবান্ধব এক রাজনৈতিক নেতা। গণমাধ্যমের সঙ্গে তার ছিল এক নিবিড় সম্পর্ক।’
এর আগে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশনের ক্ষমতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা আমরা অব্যাহতভাবে করে যাচ্ছি।
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থা খুবই করুণ। হাসপাতালগুলোতে সেবা খুবই নিম্ন মানের। অবৈধ হাসপাতাল গুলো চলছে টাকার বিনিময়ে।’ সম্প্রতি ভুল চিকিৎসার কারণে বামনায় এক গর্ভবতী মহিলার মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
সাংবাদিক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘গণমাধ্যম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কিভাবে এক হয়ে কাজ করলে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ আমরা পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে নির্মাণ করতে পারি সে বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে মাত্র ৯ মাসে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আবার ৭৫ এর আগস্টে জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনাগুলো ইতিহাসে বর্বরোচিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত।’
শ্যামল দত্ত আরও বলেন, ‘আমার দুই সহকর্মী হত্যার শিকার হয়েছে, তাদের সেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ১০৮ বার পেছানো হয়েছে। এমন আরো অনেক ঘটনায় বলতে পারি আমাদের মানবাধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। মানবাধিকার নিশ্চিতে সকলের সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি, সেখানে গণমাধ্যম তত সংকুচিত এবং ততটাই ঝুঁকিতে।’
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ বোরহান কবীর।
সভায় মানবাধিকারের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ, সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও আইনি সুরক্ষা, গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ পাশাপাশি বক্তারা জনগণের মাঝে অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধি, সংবিধান, আইন ও অধিকার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞানের প্রসারে গণমাধ্যমকে সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। ওই মতবিনিময় সভায় একটি উম্মুক্ত আলোচনায় সাংবাদিকগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিজ নিজ মন্তব্য উপস্থাপন করেন।
সভায় আরও উপিস্থত ছিলেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, সম্মানিত সদস্য ড. তানিয়া হক ও কংজরী চৌধুরী, সচিব সেবাষ্টিন রেমা, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. আশরাফুল আলম ও পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব কাজী আরফান আশিক।