স্বাধীনতা পদকসহ নানা পদকে ভূষিত * মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ইমেজ সংকট
ইমন রহমান
২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
র্যাব
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠার দুই দশক পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ কার্যক্রম শুরু করা এলিট ফোর্স র্যাব পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন, ডাকাতি প্রতিরোধ, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি রুখতে সংস্থাটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। দুই দশকে র্যাব ১৯ হাজার ৮৬০টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ৫ হাজার ৮৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকার মাদক জব্দ করেছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় ভুক্তভোগীকে উদ্ধারও করেছে র্যাব। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ কিশোর গ্যাং দমনে অগ্রণী ভূমিকা রাখায় সাধারণ মানুষের কাছে র্যাব প্রশংসিত হচ্ছে।
জঙ্গি দমনে বিশেষ অবদান রাখায় আন্তর্জাতিক মহলে র্যাব প্রশংসিত হয়েছে। সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে সংস্থাটি স্বাধীনতা পদক, সন্ত্রাস দমনে বিশেষ সম্মাননা, ই-সরকার বিশেষ সম্মাননা ও পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের সফল বাস্তবায়নের সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে।
Advertisement
তবে এত সব সফলতার মাঝেও কতিপয় সদস্যের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে র্যাবের ললাটে কলঙ্ক লেগেছে। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন ও ২০১৮ সালে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়ে। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাব এবং সংস্থাটির সাবেক ও তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর। তবে র্যাব ও সরকারের পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞাকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বানও জানানো হয়। এদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর থেকে র্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আর কোনো অভিযোগ ওঠেনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইমেজ উদ্ধারে সংস্থাটি প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন যুগান্তরকে বলেন, জনমানুষের আস্থা ও ভালোবাসা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন ডায়মেনশনে কাজ করছে র্যাব। সব সেক্টরেই র্যাবের সাফল্যের ছাপ রয়েছে। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশবিরোধী চক্র বিভিন্ন সময় র্যাবকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছে। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও আস্থায় কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হয়নি।
র্যাবকে আরও আধুনিক করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বোম্ব ডিসপোজাল টিম গঠন করা হয়েছে। র্যাবের প্রযুক্তিগত উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখা সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ও সীমান্তবর্তী জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে র্যাব ১৯ হাজার ৮৬০টি বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র এবং ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এর রকেট লঞ্চার, গ্রেনেড, বিভিন্ন প্রকার শেল, ককটেল ও গোলাসহ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে। এ সময় ১৪ হাজার ৪৯৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রাজধানীসহ সারা দেশে আতঙ্কে পরিণত হওয়া কিশোর গ্যাং সদস্যদের প্রতিরোধেও র্যাব কাজ করছে। ২১০টি অভিযানে কিশোর গ্যাংয়ের ১৬২টি গ্রুপের ১ হাজার ১৫০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ৩৪৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
চাঞ্চল্যকর হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেফতারেও র্যাব বিশেষ ভূমিকা রাখছে। দুই দশকে ৪ হাজার ৮২টি অভিযানে ৫ হাজার ৩৮৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৩৮৬টি মামলা হয়েছে। এছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে র্যাব। মাদকবিরোধী অভিযানে দুই দশকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ৫ হাজার ৮৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা মূল্যের মাদক জব্দ করা হয়। জাল নোটের কারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ১৩৪১টি অভিযান চালিয়েছে র্যাব। এসব অভিযানে ২ হাজার ১৯৯ জন গ্রেফতার করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে।
মানব পাচার রোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে র্যাব। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৯৮ জন মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়। ১ হাজার ৪১৯ ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া অপহরণের শিকার ৩ হাজার ৭৯১ জনকে উদ্ধার ও এসব ঘটনায় জড়িত ৫ হাজার ২৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার ১ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের মধ্যে জেএমবির সদস্য ১ হাজার ৪৩৯ জন। ছিনতাইকারীদের উৎপাত দমনে র্যাব ৪ হাজার ৩৬১টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে ১১ হাজার ৩৭৪ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৪১৭ জন চাঁদাবাজ, ৭ হাজার ৪৪০ জন প্রতারক ও ৩ হাজার ৩৪০ জন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে।