today visitors: 5073432

আত্মিক ও দৈহিক উন্নতির জন্য সিয়াম

 

 

মাওলানা তোফায়েল গাজালি

১৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:০৭ এএম | অনলাইন সংস্করণ

রোজা

 

রোজা মানুষকে ধার্মিক হওয়ার পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হিসাবে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। সিয়াম সাধনা মানুষের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। মানুষের ভেতর ও বাইরকে পরিশুদ্ধ করে।

 

মানবাতাকে আলোকিত করে। আচার-আচরণ ও স্বভাব-চরিত্রে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। মানুষের আত্মিক ও দৈহিক সংশোধন করাই হলো সিয়াম সাধনার মৌলিক উদ্দেশ্য। সুস্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সিয়াম সাধনার পরামর্শ দেন। আল্লাহর দাসত্বের পরিপূর্ণ অধিকার রক্ষায় সুস্বাস্থ্যের বিশাল প্রয়োজন। নবিজি (সা.) বলেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক কল্যাণকর। মহান আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।’ মাহে রমজান হলো ইবাদতের মাস। সঠিকভাবে ইবাদত করতে হলে মানুষকে অবশ্যই শরীর ও স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে হবে।

 

Advertisement

 

ইসলাম হলো পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। অসচেতনতার কারণে অসুস্থ হয়ে যাওয়াটা ইসলাম সমর্থন করে না। এজন্যই ইসলাম মানুষকে স্বাস্থ্যের পরিচর্যায় উৎসাহ দিয়েছে। তবে কোনো কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে গেলে মহান আল্লাহ তাকে সেই অসুস্থতার পুরস্কার প্রদান করেন। কিন্তু অসচেতনতা বা ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ হলে এ অবহেলার জন্য মানুষকে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। নবিজি (সা.) বলেন, ‘মহাবিচারের দিন বান্দাকে আল্লাহর নেয়ামত সম্পর্কে প্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো, তার সুস্থতা সম্পর্কে। মহান আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দেইনি?’

 

জৈবিক চাহিদা মানবের সবচেয়ে ক্ষতিকর জিনিস। এর থেকে আÍাকে মুক্ত রাখা রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, সিয়ামের বিশেষ উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে তার পাশবিক বাসনা ও জৈবিক চাহিদা থেকে মুক্ত রাখা, সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ আÍশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্জন করে চিরন্তন জীবনের অনন্ত সফলতার চূড়ায় আরোহণ করে। পশুত্ব নিস্তেজ হয়ে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়। সিয়াম দরিদ্রপীড়িত মানুষের প্রতি সহানুভূতির উদ্রেক সৃষ্টি করে মানুষের শারীরিক ও আÍত্মিক শক্তির উন্নতি সাধন করে এবং পাশবিক চাহিদা যা মানুষের স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে, তা থেকে মুক্ত করে। অনুরূপ রোজা কলবের ইসলাম ও চরিত্র সংশোধনের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে (যাদুলমা’আদ, ১ম খণ্ড পৃ. ১৫২)।

 

দেহের বেশির ভাগ রোগের সৃষ্টির কারণ অপ্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ। পক্ষান্তরে পরিমিত পানাহার ও আÍসংযমের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘সুস্বাস্থ্যের জন্য সিয়াম সাধনা করো।’ চিকিৎসকরা বলেন, সিয়াম সাধনা মানুষের কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মানবদেহে নতুন শক্তির সঞ্চার করে। দেহের বাড়তি রস-চর্বি ইত্যাদির হ্রাস করে। সিয়াম সাধনার ফলে মানুষের দেহে নতুন সজীবতা দেখা দেয়, যা মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আহার করো। পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আল-আরাফ-৩১) তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাবার হতে হবে পুষ্টিকর ও পরিমিত।

 

অনেকেই মাহে রমজানে চিন্তিত হয়ে পড়েন। শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। মনে রাখতে হবে, সিয়াম সাধনায় স্বাস্থ্য বিনষ্ট হয় না। সিয়াম সাধনার ফলে কারও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়েছে এমন ঘটনা ইতিহাসে পাওয়া যায় না। ডক্টর এমারসন বলেন, যদি কারও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য উপবাসের প্রয়োজন হয়, তবে সে যেন ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী রোজা পালন করে। অতএব, এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, সিয়াম সাধনায় দৈহিক ও আধ্যাত্মিক উপকার পাওয়া যায়।

লেখক: পরিচালক, জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলাম, চানপাড়া, উত্তরখান, ঢাকা