today visitors: 5073432

রাজশাহীতে বেড়েছে পেঁয়াজের কদম বীজের চাষ, লক্ষ্যমাত্রা ২০০ মেট্রিক টণ

 

 

রহিদুল ইসলাম, রাজশাহীঃ

 

 

প্রতিবছরই বাড়ছে রাজশাহীতে পেঁয়াজের কদমের (বীজ) চাষ। দাম ভালো ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা পেঁয়াজের কদমের বীজ চাষে ঝুঁকছেন। যার ফলে এবছর রাজশাহীতে পেঁয়াজ বীজের চাষ বেড়েছে ১২ হেক্টর জমিতে।

 

তবে রাজশাহীতে কৃষি জমিতে পুকুর খনন হওয়ায় কমেছে পেঁয়াজ চাষের জমি। যতটুকু কৃষি জমি রয়েছে। তাতে এবার অনেক কৃষকরা পেঁয়াজ চাষ কমিয়ে পেঁয়াজে কদম বীজের চাষ বেশি করছেন।

 

এদিকে কৃষকরা বলছেন, এবছরে পেঁয়াজের দাম ভালো পেয়েছি। তবে পেঁয়াজের তুলোনায় পেঁয়াজের কদমে বীজ উৎপাদনে তুলোনামূলক খরচ কম। এতে কৃষকদের লাভের হার বেশি।

 

দূর্গাপুরে কিসমত গনকৈড় গ্রামের এক কৃষক বলেন, আমাদের এলাকাতে ভালো পেঁয়াজ উৎপাদন হলে ফলন হয় প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ। এতে পেঁয়াজের চারা রোপণ থেকে শুরু করে পেঁয়াজ তোলা পযন্ত প্রায় প্রতি বিঘায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। বেশি ভাগ সময়ে পেঁয়াজের দাম কম থাকে।

আর পেঁয়াজের কদমের বীজ প্রতি বিঘাতে সাড়ে তিন মণ হতে চার মণ পযন্ত উৎপাদন হয়। খরচ হয় প্রতি বিঘাতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মত লাগে। এক হাজার টাকা মণ পেঁয়াজের কদম বীজ বিক্রি করলে তিনগুণ লাভ।

 

একই ধরণের কথা বলছে রাজশাহী কৃষি অফিস,তারা বলছেন, পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় বীজ চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা। তুলনামূলকভাবে বীজের দাম বেশি থাকে বাজারে। চাষীরা জানান, গত বছর পেঁয়াজের বীজ বাজারে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে।

 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় এবার ২৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের কদম বীজ চাষ করা হয়েছে। এ থেকে ২০০ মেট্রিক টনের বেশি বীজ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

 

এছাড়া গত বছর পেঁয়াজের বীজের চাষ হয়েছিল ২৫৮ হেক্টর জমিতে। এসব উৎপাদিত বীজ রাজশাহী জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

 

এবছর রাজশাহী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের (কদম) চাষ হয়েছে দুর্গাপুর উপজেলায়। এই জেলায় পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে ১০৫ হেক্টর জমিতে।

 

এছাড়া জেলার উপজেলাগুলোর মধ্যে গোদাগাড়ীতে ৮৫ হেক্টর, পুঠিয়া উপজেলায় ৭০ হেক্টর, পবা, মোহনপুর, বাগমারা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পেঁয়াজের বীজের চাষ হয়েছে ৫ থেকে ১০ হেক্টর জমি করে।

 

 

কৃষক আফজাল মণ্ডল জানান, এবছর আবহাওয়া ভালো। পিঁয়াজ ও কদম বীজ ভালো হয়েছে। রোগ বালাই কম । এখন ভয় একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নয়লে আর কোন সমস্যা নাই।

 

তবে তিনি বলেন, এই পেঁয়াজের কদম জমিতে থাকবে চার মাস। এছাড়া যখন জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছিল তখন তিনি নিজেদের উৎপাদন কৃত পেয়াজ বীজ নিজে বীজ তলায় ফেলে বাঁকি দুই মণ দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন ।

 

পেঁয়াজের বীজ বিক্রি হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা কেজি দরে। দাম ভালো, লাভ হয় ভালো। পেঁয়াজের কদমের বীজ চাষীদের কাছে ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিত। অন্য সব ফসলের চেয়ে বেশি দাম হওয়ায় চাষীদের কাছে এটি সোনার মতো।

 

দুর্গাপুর উপজেলার জমির উদ্দিন চাষ করেছিলেন পেঁয়াজের বীজ। গতবছর এক বিঘা জমিতে চাষ করে লাভবান হয়েছিলেন তিনি। তাই এ বছর দেড় বিঘা জমিতে করেছেন পেঁয়াজ বীজের চাষ।

 

তিনি বলেন, গত বছর বীজ বিক্রি করে লাভ হয়েছিল ৮৫ হাজার টাকা। তাই এবছর নিজের ও লিজ নেওয়া জমিতে চাষ করেছি পেঁয়াজ বীজের।

 

এক বিঘা জমিতে তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৫৮ হাজার টাকা। এই ফসলের পরিচর্যা বেশি লাগে। পরিচর্যার অভাব হলে ফলন কমে যাবে। সময় মত কীটনাশক দিতে হবে।

 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, পেঁয়াজের ফুলকে সবাই কদম বলে থাকে। এই কদম থেকে পেঁয়াজের বীজ হয়। গত বছর বেশ ভালো দাম পেয়েছিলেন চাষীরা। তাই এই বছর বেড়েছে পেঁয়াজ বীজের চাষ।

 

পেঁয়াজের বীজ চাষে মৌমাছির পরাগায়ন নিয়ে নতুন চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও সাদা কাপড়ের মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটানোর কথা বলেছি। এতে বীজ ভালো মানের ও বেশি ফসল উৎপাদন হবে।