today visitors: 5073432

অঝড়ে র*ক্ত বমি করছে নুরি। আর তার জন্মদাত্রী মা ঘরে বসে বলছে।

মাবিয়া  আক্তার মুকুল নিজস্ব প্রতিনিধি
– রাস্তায় দারিয়ে দারিয়ে আরো সিংগারা খা। আমার হয়েছে জতো জালা। আল্লাহ সব গজব আমার কপালেই দেয়। ম*রে জায় না কেন। ম*রে গেলে মাটি দিয়ে দুই চার দিন কান্না করতাম।

নুরি এবার ক্লাস ১০ এ পরে। শ্যামলা গায়ের রং কালো চুলের অধিকারী নুরি। নুরিরা তিন বোন বড়ো বোন শারমিন এবং মেঝো বোন আশা। নুরি বাদে বাকি দুই বোন দেখতে খুব সুন্দর। দুই বোনেরি বিয়ে হয়ে গেছে। সংসারে বালতি বোঝা এখন নুরি। ছোট থেকেই নুরি বুঝতে পারে সে এই সংসারের পাপ হয়ে এসেছে।
লোকের মুখে সো*না জায় সৎ মা নাকি খুব অত্যা*চার করে। কিন্তু নুরির আপন মা নুরির সাথে জেই ব্যবহার করে তা দেখলে কেউ বলবে না এটা নুরির আপন মা। নুরির বাবা সেলিম মিয়া খুব কষ্ট করে বাকি দুই টা মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। এবং নুরিকেও খুব কষ্ট করে পরায়। মধ্যবিত্ত পরিবারে কষ্ট তো কিছুইনা। ছোট থেকেই বাকি দুই বোনের থেকে বাবা নুরিকে একটু বেশেই আদর করে। কিন্তু নুরির মায়ের চোখের বিষ নুরি। কথায় কথায় কালো কলংক বলে উপহাস করে তাকে। ঘরের কাছ কর্মে ভুল হলে গা*য়ে হাত পযর্ন্ত তুলতে দ্বিধাবোধ করে না।

সকালের কাজ কর্ম সেরে স্কুলে যেতে যেতে প্রায় ১০:৩০ বেজে গেছে। তারাতাড়ি ক্লাসে গিয়ে বসে হাপাতে লাগলো নুরি। কিছু খন পরেই টের পেলো আবার নাক থেকে র*ক্ত পরছে। কি জে হয়েছে বুঝতেই পারছে না কখনো নাক কখনো মুখ থেকে র*ক্ত পরছে।
নুরি একবার ভাবলো বাড়িতে তার মা রুনা বেগম কে জানাবে। আবার ভাবলো না মরে গেলেও না তাকে কিচ্ছু বলবে না সে। জা হবে দেখা জাবে। বিকেল ৪:৩০ এ স্কুল ছুটি হওয়ায় খুব চিন্তায় পরে গেলো আজ নুরি। প্রতিদিন ৩ টা বাজতেই ছুটি হয়ে জায় আর সে বাসায় গিয়ে সব রান্না বান্না করে কিন্তু আজ যে তার খুব বকা সুনতে হবে।। জোজে জোরে হেঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলো নুরি। হঠাৎ দেখলো পি*রিয়*ডের র*ক্ত। নুরি খুব অবাক হলো। এইতো তিন দিন আগে পি*রিয়ড শেষ হয়েছে আজকে হঠাৎ আবার শুরু হলো কেন। আবার মনে মনে ভাবলো হয়তো এমনি হচ্ছে। কোনো চিন্তা ভাবনা না করে তারাতাড়ি বাড়ি গেলো নুরি । ঘরে ঢুকতেই শুরু হলো তার মায়ের চেচামেচি।

-পড়ালেখা তো ও একাই করে আর মেয়েরা তো পরা লেখা করে না। এই কালো মেয়েকে পরিয়ে বা কি হবে। শুধুই টাকা নষ্ট করছে ওর বাপ। আর কোনো কথা শুনে এই লোক। বলছি ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিতে না করে না। কয়লা ধুলে কী আর পরিষ্কার হয়। জতোই লেখাপড়া করাক না কেন এই মেয়ে পড়েলেখে কিচ্ছু করতে পারবে না। (নুরির মা রুনা বেগম)

নুরির চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে। ড্রেস খুলেই তারাতাড়ি রান্না শুরু করে দিলো নুরি। নুরি রান্না করে গোসল করে এসে দেখে রুনা বেগমের খাওয়া শেষ। কিন্তু তার বাবা বসে আছে নুরির জন্য। নুরি মুচকি হেসে বাবার সাথে খেতে বসলো। হঠাৎ আবার তার বমি শুরু হয়। রুনা বেগম নুরির এমন বার বার বমি হওয়া দেখে খুব নোং*রা কিছু সন্দেহ করে ঘরে বিছানা থেকে উঠে এসেই সজোরে নুরির গালে এলোপাথাড়ি থাপ্প*ড় মারতে থাকে। নুরি কিছু বোঝার আগেই জেনো সব হয়ে গেলে।

-কালি! কার সাথে আ*কাম কু*কাম করে এসেছিস? আমার পবিত্র সংসার টা কী নরক বানাতে চাস? বেহায়া পোনা করেছিস কার সাথে? (নুরি কে মারতে মারতে কথা গুলো বললো রুনা বেগম)

নুরির বাবা সেলিম মিয়া রুনা বেগম কে থামিয়ে বললেন।
-কি সব অবোল তাবোল বলতাছো? আমাদের মেয়ে এমন না। (সেলিম)

-হইছে ! তুমি যদি এই মাইয়া নিয়ে আর একটু নাচানাচি করো তাহলে আমি তোমার সংসার ছেড়ে চলে জাবো। আল্লায় সব গজ*ব আমারে দিছে। আজকে আমার একটা পোলা থাকলে এতো কষ্ট করা লাগতো না। এক একটা মাইয়া বিয়া দিতে দিতে জীবন টা কয়লা হইয়া জাইতাছে।(রুনা)

সেলিম মিয়া চুপ করে আছে। কোনো কথা বলছে না সে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো রুনা বেগম কে। কিন্তু এই লোকটাকে কখনো বোঝেনি সে। সেলিম বিয়া সব সময় চেয়ে এসেছে একটু শান্তি। কিন্তু রুনা বেগম সব সময় ঘর আগুনের মতো গরম করে রাখে। সেলিম বিয়ার মনে একটাই প্রশ্ন। যারা তার থেকে অল্প টাকা ইনকাম করে তাদের সংসারেও কি বউ এমন করে? যাদের ৫/৭ টা মে*য়ে কোনো ছে*লে নেই তারাও কী মেয়ে কে এভাবে অবহেলা করে। নুরির জন্য তার খুব কষ্ট হয়। কলি*জা টা ফে*টে জায়। যদি পারতো মেয়েটাকে অন্য কোথাও নিরাপদ জায়গায় রাখতে তাহলে হয়তো সে একটু শান্তি পেতো। বাকি দুই টা মেয়েও খুব কষ্ট সহ্য করেছে। কিন্তু নুরির মতো এতো কষ্ট কেউ সহ্য করেনি।
নুরি সেখান থেকে ঘরে চলে গেলো। সেলিম মিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে কাজে চলে গেলো।

চার দিন হলো নুরি স্কুলে জেতে পারছে না। শ*রীর খুব খা*রাপ। দিন দিন জেনো সে শেষ হয়ে জাচ্ছে। হাতের কিছু টাকা নিয়ে টিউশনের কথা বলে বের হয়ে ডাক্তারের কাছে জায় নুরি। ডাক্তার কিন্তু চেকাপ দেয়। চেকাপ ছাড়া ঔষধ দেওয়া জাবেনা। নুরি একবার ভাবলো চেকাপ করাবে আবার ভাবলো করাবে না। আবার ভাবলো যদি মরে টরে জাই তাহলে তো জানবোও না কেনো মরলাম জাই চেকাপ গুলো করাই। চেকাপ করতে ৪ হাজার টাকা লাগলো। সবটাই নুরির টিউশনের জমানো টাকা। নার্স বললো দুই দিন পর রিপোর্ট দিবে আর সেইদিনি সব রিপোর্ট ডাক্তার কে দেখাতে হবে। নুরি মেডিকেল থেকে বের হয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো। মেডিকেল টা বেশি দুরে না হওয়ায় তারাতাড়ি চলে আসতে পারলো নুরি।

খুব চিন্তায় আছে নুরি রিপোর্টের আর একদিন বাকি। নুরির অসুস্থতা অনেক দিন থেকেই। আরো একবার র*ক্ত বমি হয় কিন্তু ঔষধ খাওয়ার পরে ঠিক হয়ে জায় তাই ব্যপার টা সিরিয়ালি নেয় নি নুরি। কে জানে আবার হঠাৎ এমন অসুস্থ হয়ে জাবে। এই দিকে দিন দিন নুরির অসুস্থতা বারছে আর তার মায়ের অত্যা*চার ও বারছে। উঠতে বসতে কথা সুনায় নুরিকে।বিকেলে আবার নাক দিয়ে র*ক্ত পরছে নুরির। খুব ক্লান্ত লাগছে তার। তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো নুরি।নুরিকে সুয়ে থাকতে দেখে নুরির মা বললো।

-কাজ না করার অজুহাত সব। আমি তো কিছুই বুঝিনা। আমাকে তো অবুঝ মনে হয়। এইসব ঢং আমার জানা আছে। কিচ্ছু বলবো না। এই সংসারের কে আমি কেউ না। দুই বাপ মেয়ের চাকর আমি। আমাকে তো দাশী রাখা হয়েছে।(রুনা)
-মা এইসব কি বলছো? কী করা লাগবে আমারে বলো। (নুরি) কথা পেইজ
-থাক আর ঢং করতে হবেনা(রুনা)
কালো মুখ করে চলে গেলো রুনা বেগম।
আজ নুরির রিপোর্ট দিবে। নুরি জতোই মেডিকেলের দিকে জাচ্ছে ততোই তার বুকের মধ্যে ধুক ধুক শব্দ হচ্ছে। খুব ভয় হচ্ছে তার। কে জেনো কি আসে রিপোর্টে। মেডিকেল পৌঁছে রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে ডাক্তারের কেবিনের দিকে জায় নুরি। কিন্তু কেবিন বন্ধ। পাশে এক নার্স জানায় আজকে নুরির রিপোর্ট জেই ডাক্তার দেখবে সে আসে নি। তার সব রুগী কে ডাক্তার সায়েদ আলম দেখছে। নুরি দুই তলা থেকে তিন তলা সায়েদ আলোমের কেবিনের সামনে গিয়ে দেখে পাচ জনের পর সে ভিতরে জেতে পারবে।

এক ঘন্টা বসে থাকার পর ভেতর থেকে ডাক আসলো নুর জাহান নুরি আপনার সিরিয়াল এসেছে।
কথা টা সুন্ই নুরির বুক কেপে উঠলো। কাপা কাপা হাতে রিপোর্ট নিয়ে ভেতরে ঢুকলো নুরি।
ডাক্তার সায়েদ কে দেখে নুরি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ডাক্তার সায়েদ উপরে তাকিয়ে নুরিকে দেখে বললো।
-আরে নুরি তুমি?এসো বসো। (ডাক্তার
– আসসালামুয়ালাইকুম স্যার (নুরি)
– ওয়ালাইকুমাসালাম।(ডাক্তার সায়েদ)
-আপনি এখানে স্যার….(নুরি)
-হ্যা! এক মাস আগে চা*করিটা হলো। কমতো কষ্ট করলাম না। তুমি তো সব জানোই।(সায়েদ)
-যাক আলহামদুলিল্লাহ (নুরি)
-এবার বলো তুমি কেমন আছো?(সায়েদ)
-সেটা তো আপনি এখন এই রিপোর্ট দেখে বলবেন আমি কেমন আছি। (নুরি)
-কেনো কী হয়েছে তোমার। দেখি রিপোর্ট গুলো দাওতো।(সায়েদ)
নুরি রিপোর্ট গুলো এগিয়ে দিলো।
নুরির রিপোর্ট গুলো দেখে সায়েদের মুখটা কালো হয়ে গেলো। সায়েদের চোখে পানি ছল ছল করছে।
-কী হয়েছে স্যার?(নুরি)

চলবে………..

সব নিউজ সবার আগে পেতে google নিউজ ভিজিট করুন ।