আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ বেষ্টনী ভেঙে সাবের হোসেনকে মারধর

আদালত কক্ষ থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে সাবেক পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

সোমবার শুনানি শেষে বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটে আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।

২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপি যে সমাবেশ ডেকেছিল, তার আগে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে হামলায় দলটির কর্মী মকবুল মারা যান। ওই হত্যা মামলায় এদিন সাবেরকে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া খিলগাঁও থানার চারটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আগেরদিন গুলশান থেকে গ্রেপ্তার ঢাকা-৯ আসনের সাবেক সাংসদ সাবেরকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে- এই খবর পেয়ে সোমবার সরগরম হয়ে ওঠে ঢাকার আদালতপাড়া।

বেলা ১২টার পর থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করতে থাকে লোকজন। সোয়া ২টার দিকে পুলিশের গাড়ি বহরে পুরান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানায় আনা হয় সাবের চৌধুরীকে।

এরপর আদালত প্রাঙ্গণ ও হাজতখানার সামনে বিক্ষোভ দেখান একদল মানুষ। আদালতের সাদা রঙের ১০ তলা ভবনের বিভিন্ন তলার বারান্দায় দেখা যায় উৎসুক মানুষের ভিড়।

এই পরিস্থিতিতে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিতে আদালত প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা সদস্য নিয়োজিত করা হয়। বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীদের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন কয়েকজন সেনা সদস্য।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা একজন আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি দেন যে- তারা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। এরপর ওই ব্যক্তিদের সাদা ভবনের বিপরীতে লাল ভবনে বিচারকদের প্রবেশ ফটকের সিঁড়িতে বসার অনুমতি দেওয়া হয়।

আদালতের সাদা রঙের ভবনের চতুর্থ তলার ৩ নম্বর এজলাসে সাবের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদনের শুনানির কথা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে ওই ভবনের দুই তলার ২৮ নম্বর এজলাসে আনা হয় বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে।

একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খানকেও একই এজলাসে আনা হয়। এ সময় তাদেরকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরানো হয়।

তাদেরকে এজলাস কক্ষে আনার সময় লাল ভবনের সিঁড়িতে বসে থাকা বিক্ষোভকারীরা সেখানে দাঁড়িয়েই সাবেরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। সাবেরকে আদালতে তোলার সময় ডিম ছুঁড়ে মারতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।

তাকে আদালতের কাঠগড়ায় আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি। বিএনপি কর্মী মকবুল হত্যা মামলায় সাবেরকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পল্টন থানার এসআই নাজমুল হাচান।

রাষ্ট্রপক্ষে সহায়তা করার জন্য রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন বিএনপির অন্যতম জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। আর রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।

শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক।

শুনানির সময় আদালতের এজলাস কক্ষে তেমন বিশৃঙ্খলা বা হট্টগোল হয়নি। তবে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সাবের চৌধুরীকে হাস্যোজ্জ্বল দেখে কটাক্ষ করেন বিএনপিপন্থি কনিষ্ঠ আইনজীবীরা। সাবেরের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে টিপ্পনি কাটেন কেউ কেউ।

সাবের হোসেন চৌধুরী ও দুই সাবেক আমলার আলাদা দুটি মামলায় প্রায় আধা ঘণ্টা শুনানি হয়।

তাদের রিমান্ড আদেশ দিয়ে বিচারক মাহবুবুল হক এজলাস থেকে নেমে গেলে সেখানে ওঠেন ঢাকা মহানগর হাকিম সাইফুর রহমান।

পুলিশের আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারক খিলগাঁও থানার চারটি মামলায় সাবেরকে গ্রেপ্তার দেখান। এছাড়াও তিনি খিলগাঁও থানার আরেকটি মামলায় সাবের, সালমান এফ রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য ১৬ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেন।

এরপর মহানগর হাকিম সাইফুর রহমান এজলাস থেকে নেমে গেলে কক্ষের বাইরে কয়েকজন আইনজীবীকে হট্টগোল করতে দেখা যায়। হট্টগোল করতে করতে তারা এজলাস কক্ষের সামনে থেকে নিচে নেমে গেলে সাবের হোসেন চৌধুরী এবং সাবেক দুই আমলাকে নিয়ে হাজতখানার দিকে রওনা হয় পুলিশ।

আসামিদের যখন আদালত প্রাঙ্গণের রাস্তায় আনা হয়, তখন উপরের সাদা ভবনের বারান্দা থেকে পঁচা ডিম ছুড়তে থাকেন অনেকে। পুলিশ তখন দ্রুত বেগে আসামিদের হাজতখানার দিকে নিয়ে যেতে থাকলে বিপরীত পাশের লাল ভবনের সিঁড়িতে বসে থাকা ব্যক্তিরা চড়াও হয় সাবেরের ওপর।

তারা দৌড়ে এসে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে সাবেক সাংসদ সাবেরকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য ধাক্কা দিয়ে হামলাকারীদের সরিয়ে দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্য পুলিশ সদস্যরা দৌড়িয়ে আসামিদের হাজতখানার ভেতর নিয়ে যান।