এস চাঙমা সত্যজিৎ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধের দাবিসহ খাগড়াছড়িতে ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে পাহাড়িদের উপর সেটলারদের সাম্প্রদায়িক হামলা এবং ১৯-২০ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে সহিংস হামলায় জুনান-রুবেল-ধনরঞ্জন-অনিকের হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ঢাকায় অবস্থানরত পাহাড়ি ছাত্র জনতা।
আজ বুধবার ২ অক্টোবর ২০২৪ বিকাল ৪টায় ঢাকায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর সামনে “প্রতিবাদী পাহাড়ি ছাত্র জনতা”র উদ্যোগে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থী রিটেন চাকমার সভাপতিত্বে ও অজেল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ নাগরিক সমাজের পক্ষে জগৎ আলো চাকমা, ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হেমা চাকমা। সংহতি জানিযে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী।
সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, গতকাল খাগড়াছড়িতে সোহেল রানা নামের একজন ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে সেটলাররা পাহাড়িদের ওপর হামলা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়েছে, বুদ্ধমূর্তি পুড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে গত ১৯-২০ সেপ্টেম্বর একজন মোটর সাইকেল চোরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংস হামলা চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে, দেড় শতাধিক লোককে আহত করা হয়েছে। বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর। আমরা ধর্ষক ও চোরের পক্ষ নিয়ে পাহাড়িদের উপর এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।
তারা দেশের গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে বলেন, ধর্ষককে ধর্ষক হিসেবে তুলে ধরুন। একজন ধর্ষককে যদি শিক্ষক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন তাহলে শিক্ষকের পেশাটার মর্যাদা আর থাকে না। এ সময় তারা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে পানিশমেন্ট জোন হিসেবে ব্যবহার করছে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক, সামরিক, বেসামরিক ও বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা যারা বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত সেসব দুষ্কৃতিকারী ব্যক্তিদেরকে শাস্তি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। ফলে তারা পাহাড়ে গিয়ে ধর্ষণ-খুন-গুম-হত্যা ও ভূমি বেদখলের মত জঘন্যতম অপরাধ সংঘটিত করে। তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক সোহেল রানা। সোহেল রানা কুষ্টিয়া দৌলতপুরে শিক্ষকতার দায়িত্বে থাকাকালীন বহু ছাত্রীর সাথে অনৈতিক আচরণ করার অভিযোগে তাকে খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়। কিন্তু খাগড়াছড়িতে যাওয়ার পরও ছাত্রীদের সাথে একই আচরণ করেছে। সর্বশেষ গতকাল ৭ম শ্রেণীর এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর আগেও তিনি একই অভিযোগে জেল খেটেছেন। কিন্তু জেল থেকে মুক্তির পর তাকে আবারো পুনঃনিয়োগ করা হলে শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই আপনারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে পানিশমেন্ট জোন বানাবেন না।
বক্তারা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ, খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-রাঙামাটিকে সংঘটিত সাম্প্রদয়িক হামলা ও এসব ৪ জন পাহাড়িকে হত্যার সাথে জড়িত সেনা-সেটলারদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি,পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক হামলা-হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়।
এস চাঙমা সত্যজিৎ
স্টাফ রিপোর্টার প্রথম বুলেটিন।