শান্ত শিফাত – শেরপুর থেকে:
শেরপুরসহ সারাদেশে মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে ৫০টিরও বেশি দেশি ফল বিলুপ্তির পথে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা কারণে দেশি ফলের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে গাছ কাটা, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন। কৃষি বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবও এই সংকটের অন্যতম কারণ।
বর্তমানে দেশে ফলের বাজারের ৮০ শতাংশই দখলে রেখেছে আমদানি করা ফল, ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পুষ্টিগত সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, কেমিক্যাল মিশ্রিত এসব ফল লিভার সিরোসিস, কিডনি বিকলসহ বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রধান ও অপ্রধান মিলিয়ে দেশি ফলের সংখ্যা ৬০-৭০টি। এগুলোর মধ্যে- আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জাম, গোলাপজাম, নারিকেল, কুল, তৈকর, বীচিকলা, বিলিম্বি, বেতফল, লেবু, আমলকি, সফেদা, আতা, শরিফা, আনাজি কলা, জালিম, জাম্বুরা, সুপারি, বাঙ্গি, খরমুজ, বকুল, বেল, কামরাঙ্গা, জলপাই, চালতা, ডেউয়া, পেঁপে, তেঁতুল, তাল, বেল, গাব, পানিফল, কদবেল, আনারস, খেজুর, জামরুল, কলা, লটকন, আনার, আমড়া, কমলা, অরবরই, সাতকড়া, লুকলুকি, তরমুজ, চুকুর, প্যাসনফল, আঁশফল, মাখনা, আধাজামির, পীচফল, ফসলা, জগডুমুর, কাজুবাদাম, ডুমুর, কাউফল, করমচা, পানিয়ালা, জামির, বৈচি, মুনিয়া, ডেফল, চাম্বুল উল্লেখযোগ্য।
এসবের মধ্যে- কাউফল, করমচা, ডেউয়া, আশফল, গাব, জগডুমুর, চাম্বুল, আতাফল, ডুমুর, চালতা, অরবরই, বিলিম্বি, শরিফা, সাতকরা, তৈকর, ডেফল, লুকলুকি, বৈচি, মুনিয়া এখন সচরাচর দেখা যায় না বলেই চলে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, গত দুই দশকে দেশি ফল ভাণ্ডারের প্রায় অর্ধেক বিলুপ্তির পথে রয়েছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, বর্তমানে কিছু প্রধান ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও, অপ্রধান ফলগুলো দ্রুত কমছে।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আম, কাঁঠাল, লিচু, কুল ইত্যাদি হাতে গোনা কয়েকটি ফল দেখতে পাওয়া গেলেও অপ্রধান বেশির ভাগ ফলই আর সহজলভ্য নয়। বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি কৃষি বিভাগকেও দেশীয় ফলের উৎপাদন ও সম্প্রসারণে আরো অগ্রাধিকার দিতে হবে। হাইভ্যালু ক্রপসের দিকে ধাবিত হওয়াও ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে তিনি জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ও খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে দেশি ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি জরুরি। এবিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, ৭৩টি হর্টিকালচার সেন্টারকে দেশি ফলের উন্নত জাত তৈরি ও কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণে অধিক ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, দেশের ঐতিহ্যবাহী দেশি ফলগুলো চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।