এস চাঙমা সত্যজিৎ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
মহান শিক্ষা দিবসে খাগড়াছড়িতে মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
‘নতুন সংবিধান’ চাই, সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাও’ শ্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি মুক্ত করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে” এই দাবিতে খাগড়াছড়ি সদরের ফায়ার সার্ভিস এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করা হয়।
মিছিলটি খাগড়াছড়ি বাস টার্মিনাল, খাগড়াছড়ি গেইট ও খাগড়াছড়ি কলেজ গেইট প্রদক্ষিণ করে চেঙ্গী স্কয়ারে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে ব্ক্তব্য রাখেন পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি শান্ত চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক তৃঞ্চাঙ্কর চাকমা।
শান্ত চাকমা বলেন, ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন দেশের ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি আন্দোলন। ১৯৬২ সালের আজকের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শিক্ষামন্ত্রী এস এম শরীফের শিক্ষা কমিশনের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৎকালীন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক এস এম শরীফের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। এই কমিশন ১৯৫৯ সালে ২৬ আগস্ট একটি রিপোর্ট পেশ করে। রিপোর্টে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তীক্ষ্ম সেনা গোয়েন্দা নজরদারী, বাধ্যতামুলক ইংরেজী শিক্ষা ও বাংলা হরফের বদলে আরবি, উর্দু ও রোমান ভাষা চালুর জন্য সুপারিশ করা হয়। 'টাকা যার শিক্ষা তার' শরীফ কমিশনের এই শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশ গুলি ছুড়লে বাবুল, মোস্তফা ও ওয়াজীউল্লাহ সহ সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরো অনেকে।
তিনি আরো বলেন, মাতৃভাষাকে অক্ষুন্ন রাখতে ৫২ সালের তৎকালীন পুর্ব বাংলার ছাত্রসমাজ অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। তাদের রক্তের বিনিময়ে ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু আজ স্বাধীন দেশে পাহাড় ও সমতলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাকিস্তানি কায়দায় সেনা গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রেখেছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আজ স্বাধীন দেশে বাঙালী ভিন্ন অন্যান্য জাতিসত্তাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতি, মাতৃভাষায় শিক্ষার জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো অগণতান্ত্রিক পরিবেশ জারি রয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেনা গোয়েন্দার নজরদারী ও উগ্রজাতীয়তাবাদ বেশ লক্ষণীয়। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, ছাত্রী নিপীড়ন চলমান রয়েছে। ঘাটতি রয়েছে দক্ষ ও পর্যাপ্ত শিক্ষকের।
শান্ত চাকমা অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে জেলা পরিষদের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। যারা লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে পেরেছে তারা শিক্ষকের ভুমিকা পালন করছে। যোগ্য প্রার্থীরা টাকার অভাবে চাকরি নিতে না পারায় ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা পাঠদান করা তো দুরের কথা ঠিকমতো রিডিংও পড়তে পারছে না। এতে পাহাড়ের শিক্ষার মান এতই বেহাল হচ্ছে যে, যার ফলে প্রাইমারি ও মাধ্যমিক লেভেল থেকে অনেক ছাত্র ঝরে পড়ছে। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পরও জেলা পরিষদ সমূহের দুর্নীতিগ্রস্ত চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশাসন এখনো গ্রেফতার করেনি।
তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা বলেন, ছাত্র গণঅভ্যত্থানের পরেও পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। উগ্র জাতীয় ভাবধারার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান, ইসলামিক নিয়মে শপথ পাঠসহ বিতর্কিত শিক্ষানীতি জারি রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ, শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণের ঘাটতিসহ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নিয়ম বহির্ভুত নীতি জোর করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি, স্কুলে শপথবাক্য পাঠের মাধ্যমে উগ্র জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র বাতিল করে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান।
এস চাঙমা সত্যজিৎ
স্টাফ রিপোর্টার প্রথম বুলেটিন।