today visitors: 5073432

রাজস্ব ফাঁকির স্বর্গদুয়ার সোনাহাট স্থল বন্দর”- খবরে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় দুর্নীতির পক্ষে মানববন্ধন!

 

মোঃ রাহিমুল ইসলাম হৃদয়

(ভূরুঙ্গামারী) কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় অবস্থিত সোনাহাট স্থলবন্দর নিয়ে গত ২৬, ২৭, ২৮ ২৯ আগস্ট বেশ কিছু গণমাধ্যমে “সোনাহাট স্থলবন্দরে শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি”, “রাজস্ব ফাঁকির স্বর্গদুয়ার কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর” “সোনাহাট স্থলবন্দরে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লোপাট, মূল হোতারাও বহাল তবিয়তে” (গুগল সার্চে যা পাওয়া যাবে)  ইত্যাদি শিরোনামে উক্ত স্থল বন্দরের অবারিত ঘুষ, কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি, দুর্নীতি ও লুটপাটের দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। যাতে দেখা যায়, প্রতিমাসে শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকিই নয় বরং তারা নিজেরাও উপঢৌকন বা ঘুষ হিসেবে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, আর পাশে থেকে সেই সুবিধা নিচ্ছে বন্দরের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি রাজনৈতিক মহল । সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব, পকেট ভরছে শুল্ক-কাস্টমস অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ ছাত্র আন্দোলনের মুখে পলায়নকারী পতিত স্বৈরাচারী সরকারের বন্দর নিয়ন্ত্রণকারী হোতারা। সেই সাথে টু পাইস কামাতে দু’চারজন হলুদ সাংবাদিকও যুক্ত হয়েছেন, যারা মূলত ওই বন্দরের ব্যবসায়ী ও অবৈধ টাকা-পয়সার সুবিধাভোগী বলে জানা গেছে।

 

রাজস্ব ফাঁকি, সরকারি অর্থ লোপাট, ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর তথ্য অনুযায়ী কোটি কোটি টাকা লোপাট কারি,  সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া এই দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা ও বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকা অনৈতিক পন্থায় আয় করা সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীরা পড়েন বেকায়দায়। তারা উক্ত খবরের বিরুদ্ধে দুইদিন মানববন্ধন করতে চেয়েও অনেকেরই সমর্থন না পেয়ে মানববন্ধনের তারিখ অনিবার্য কারণ দেখিয়ে পেছাতে থাকেন।  বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা দেশের পাহারায় সব সময় সজাগ থাকার কথা বললেও ওই এলাকায় আগে থেকেই তৎকালীন সরকার তথা পালিয়ে যাওয়া পতিত সরকারের নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থানের কারণে দুর্নীতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিংবা বিরোধী শক্তি যারা অন্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী সহ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো দুর্নীতি লুটপাটের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিপক্ষে কিংবা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের স্বপক্ষে একটা মানববন্ধন করতেও সক্ষম হয়নি। ইতিমধ্যেই সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে ঘুষ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত কিছু গোপন ভিডিও সোশ্যাল মাধ্যমেও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।

 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এহেন দূর্রল অবস্থান আঁচ করতে পেরে এবং নিউজ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন কারনে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের স্থানীয় প্রশাসনের প্রশাসনিক  নির্লিপ্ততার কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট কারি সরকারি আমলা ও সেই স্থলবন্দরের অনৈতিক সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীরা নিজেদেরকে বাঁচাতে অবশেষে ঘুষ, দুর্নীতি ও রাজস্ব ফাঁকির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের দীর্ঘ পাঁচ দিন পর ব্যবসায়ীদের ব্যানারে রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) হাতে গোনা গুটিকয়েক ব্যবসায়ী, সি এন্ড এফ এজেন্ট (বন্দরের শত শত ব্যবসায়ী ও সি এন্ড এফ এজেন্ট থাকলেও) কয়েকজন সিএন্ডএফ কর্মচারী শ্রমিককে নিয়ে স্থল বন্দরের শুল্ক কাস্টমস কর্মকর্তার অফিসের বাইরে একটি মানববন্ধন করেন।

অথচ যেখানে ২২ টি সিএন্ডএফ এর অধীনে প্রায় ২ শতাধিক ব্যবসায়ী ব্যবসা করেন সেখানে তাদের অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন না এবং অধিকাংশ সাধারণ ব্যবসায়ী বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না । একান্তই যারা দুর্নীতি, রাজস্ব ফাঁকি ও লুটপাটকারী চক্রের সাথে যুক্ত এবং তাকে চলমান রাখতে চান তাদেরই কয়েকজন মিলে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে ও চলমান লুটপাট রাজস্ব ফাঁকি, ঘুষ ও দুর্নীতি সমর্থন করতেই কৌশলে এই “স্থল বন্দর নিয়ে ষড়যন্ত্র” তত্ত্বের অবতারণা করে  সে বিষয়ে মানববন্ধন করেন। উক্ত মানববন্ধনে তারা সাংবাদিকদের প্রকাশ করা অনুসন্ধানী রিপোর্টের পরিবর্তে কোন সঠিক তথ্য উপস্থাপন না করে শুধু স্থলবন্দর নিয়ে ”ষড়যন্ত্র তত্ত্ব” বলে বক্তব্য প্রদান করেন।

 

উক্ত মানববন্ধনের আহবান করেন উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও  আমদানি রপ্তানি কারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। উক্ত মানববন্ধনে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও সি এন্ড এফ এজেন্টরা উপস্থিত না থাকলেও উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন, আরসি শিপিং এর কর্মচারী রাসেল, মামুন ও শরিফুল, মোস্তফা ইলেকট্রনিক্স এর কর্মচারী এনামুল, মুকুল, রেদওয়ানুল হক এর মান্নান, সোনার বাংলা এর শুকুর আলী ও মোজাম্মেল (আমদানি রপ্তানী সমিতি কর্তৃক কাস্টমস এর জিরো পয়েন্টে রেজিষ্টার এন্ট্রি করে গাড়ি রিসিভ করে) এর কর্মচারী রোকন, জিএইসএসএম এজেন্সির মালিক রাজস্ব কর্মকর্তা শামসুল হকের কর্মচারী কামরুল, শাহিন (প্রায় ৫ বছর স্থলবন্দরের স্কেলে কাজ করে), প্রিয়মের কর্মচারী মাইদুল ও সেলিম, আরএসএফ এর রওনক। বেশিরভাগ সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী লাইসেন্স রয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ী- আবু তাহের, সাইফুর, আব্দুল খালেক, এরশাদ, লাভলু, মোজাহার, মনজুরুল, আবুল হোসেন,  হুন্ডি মাইদুল, লোড আনলোড সভাপতি ও ব্যবসায়ী হামিদুল, সাধারন সম্পাদক আব্দুল বাতেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান,  ঘুষ, দুর্নীতি, সরকারের রাজস্ব ফাঁকির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন খবরে প্রকাশের পর বন্দরের অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও সি এন্ড এফ এজেন্ট এসব অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারে না।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে প্রশ্ন করলে তাদের অধিকাংশ ব্যবসায়ী বলেন যে, স্থল বন্দরের রাজস্ব ফাঁকি ও দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী রিপোর্টের বিরুদ্ধে যে আজকে মানববন্ধন তা তারা জানেনই না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, “আমরা কখনোই দুর্নীতির পক্ষে নই, আমরা চাই পোর্ট দুর্নীতিমুক্ত থাকুক। আমি ঐ মানববন্ধনে যাইনি, আমি বাড়িতে আছি ভাই”।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক অপর এক ব্যবসায়ী জানান , “ভাই কোন মানববন্ধন সম্পর্কে বলছেন? আমি তো জানিনা, তখন তাকে উপরোক্ত বিষয় প্রশ্ন করলে তিনি বলেন যে আমরা ওই দুর্নীতির পক্ষে না”।

অপর আরেক ব্যবসায়ী জানান, “স্থল বন্দরে রাজস্ব ফাঁকি, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হলে সরকার যেমন লাভবান হবে তেমনি মাঝারি থেকে ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় লাভ হবে”।

আরেক ব্যবসায়ী জানান, “তিনি সেই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেননি, তিনি চান স্থলবন্দর সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিমুক্ত হোক।

 

উল্লেখ্য, সোনাহাট স্থলবন্দর নিয়ে গত ২৬, ২৭, ২৮ ২৯ আগস্ট বেশ কিছু গণমাধ্যমে “সোনাহাট স্থলবন্দরে শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি”, “রাজস্ব ফাঁকির স্বর্গদুয়ার কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর” “সোনাহাট স্থলবন্দরে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লোপাট, মূল হোতারাও বহাল তবিয়তে”, ” শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির স্বর্গরাজ্য সোনাহাট স্থল বন্দর: হোতারা বহাল তবিয়তে”  (গুগল সার্চে যা পাওয়া যায়)  ইত্যাদি শিরোনামে উক্ত স্থল বন্দরের অবারিত ঘুষ, কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি, দুর্নীতি ও লুটপাটের দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। যাতে দেখা যায়, প্রতিমাসে শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকিই নয় বরং তারা নিজেরাও উপঢৌকন বা ঘুষ হিসেবে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, আর পাশে থেকে সেই সুবিধা নিচ্ছে বন্দরের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি রাজনৈতিক মহল । এই প্রতিবেদনে ভারত থেকে কয়লা ও পাথর আমদানির পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিদিন যে পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি, ঘুষ ও দুর্নীতি করা হয় তার একটি সামান্য চিত্র তুলে ধরা হয়, আর তাতেই সরকারের শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি উঠে আসে। যা ধামাচাপা দিতে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ না দিয়েই করা হয় মানববন্ধন “স্থল বন্দর নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে”র অবতারণা।

আরও উল্লেখ্য , বিগত সরকারের শেষ পর্যায়ের পরিণতি ও পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ওই উপজেলায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বও তাঁরা কৌশলে নিজেদের কব্জায় রেখেছিল বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এহেন পরিস্থিতিতে ওই স্থল বন্দর থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি, ঘুষ, দুর্নীতি রুখতে যত দ্রুত সম্ভব প্রশাসনিক কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।