today visitors: 5073432

জীবনের কোন পরমার্থ নেই: আবু রায়হান মিসবাহ

অনেকের মত স্বপ্নের পথে না হেটেও নিজের গন্ডির মধ্যে থেকে সীমিত পরিসরের কাজ করাটাকে ভালোবেসেছি। সেটা যেকোনো ধরনের কাজই হোক।জীবনের চড়াই-উৎরাই আসার আগে অর্থাৎ শৈশব থেকে জেনেশুনে লেখালেখিতে আসি। নিজের মত করে লিখি, কোনো প্রকার খ্যাতি কিংবা যশ অথবা অদৃশ্য চাঁদ পাওয়ার আশা আকাঙ্খা ছিল না। আর যেকোনো কাজ করতে হলে কিছুটা কষ্ট তো করতেই হয়। এটা কে কিভাবে নিবে তা নিয়ে মাথা ব্যথা ছিলো না, এখনো নেই। আমি আমার ক্ষুদ্র জগতে থেকে প্রতিনিয়ত আত্মপরিতৃপ্ত থাকি।

এত দিনে যে কথাটা জেনেছি তা হলো, জীবনের কোন পরমার্থ নেই, এটা অনুভব করার পর থেকে একধরণের ভালো লাগা কাজ করছে। একটা সময় ছিল কর্মময় জীবনের প্রতি এতোটাই মোহাচ্ছন্ন ছিলাম, যারা তেমন বিশেষ কিছু না করে কেবল দিন যাপন করে যাচ্ছে, তাদের দেখলে মনে হত, তারা তাদের জীবনের সুযোগটা নষ্ট করছে। সেই সব জীবনের প্রতি এতোখানি শ্রদ্ধা আমার ছিল না। যেই শ্রদ্ধাটা এখন খানিকটা ফিরে এসেছে। যাই হোক না কেন, সে তার জীবনটা পারই করছে, অনেকটা আমার মত করে। তার জীবনের ফিলোসফিটা আমার মত নয়, আমি কাজ করতে ভালোবাসি বলে কাজ করছি, তাতে হয় সমাজের কিছু পরিবর্তন আসলে আসতে পারে, নাও আসতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন কাজের মাঝে আমি আমার দিনটা পার করে একধরণে সুখ অনুভব করতে পারছি। আর যে মানুষটা করছে না, কোনমতে জীবনটা পার করে দিচ্ছে, সে সুখ পাবার জন্য কষ্ট না করে সেভাবে চলছে তাতেই সে জীবনের সুখ অনুভব করছে। সে তার ফিলোসফি অনুসরণ করে চলছে।

পৃথিবীরে সবাই কর্মী হবে না, সবাই ভাববে না, কাজের মাঝে নিহিত তার জীবনের উদ্দেশ্য, আসল কথা হল ভালো লাগা। সেই ভালো লাগা যেভাবেই পাওয়া যাক। কেউ যদি মনে করে কোন কাজ না করে কেবল টেলিভিশন দেখেই তার ভালো লাগবে, তাহলে তাই করাই ভালো। হ্যা আমি নিজে আলোকিত সমাজের কথা চিন্তা করি, চিন্তাশীল যুবকের কথা চিন্তা কর্মী, কর্মময় জীবন দেখলে উজ্জীবিত হই, কারণ আমাদের সমাজ একটা স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে সেট করেছে, আমরা এভাবেই ভাবতে শিখেছি। আমি অন্তত এভাবে ভেবেছি। ভাবি একটা সমৃদ্ধ দেশের কথা, ফেসবুকে দুনিয়া উদ্ধার না করে সত্যি কাজের মাধ্যমে দেশটাকে এগিয়ে নেবে সেইসব তরুণদের কথা। কেন ভাবি? কারণ যেদিন সত্যি এটা হবে, সেদিন আমরা অন্তত গর্ব করে বলতে পারবো, আমরাও উন্নত। সেদিন হয়ত আজকের মত দেশের যেখানে সেখানে অনাহারে ক্লিষ্ট শিশু দেখ কষ্ট পাবো না। যেদিন হানাহানি থাকবে না সেইদিন আরেকটু বেশী নিশ্চিন্তে দিন যাপন করব। আমরা আমাদের চাওয়ার দিকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই সমাজটাকে।

এই যে মানবতা, এটাও আসলে আমাদের চাওয়ারই। আমরা কিন্তু প্রাণী জগতের অন্য কোন প্রাণী নিয়ে এতটা ভাবি না। কেবল নিজেদের কথাই ভাবি। এতটাই স্বার্থপর যে, অন্যের কল্যাণ সাধনে এক মুহূর্ত সময় দিতে প্রস্তুত না। মঙ্গল সাধনের জন্য কিছু যে করণীয় আছে এমন চিন্তা ঘুণাক্ষরেও অনেকের মাথায় আসে না। শুধু ব্যক্তি জীবনের লাভ ক্ষতির হিসেব নিয়েই ব্যস্ত। প্রতিটি কাজের পেছনে স্বার্থই একমাত্র চালিকা শক্তি। সবাই নিজের জায়গা থেকে সমাজের ক্ষুদ্রতম একক। একে অন্যের মধ্যে যদি বন্ধন না থাকে তাহলে কেবল স্বার্থের উপর ভিত্তি করে আমি আর তুমি একক ভাবে কেউই বেশী দিন টিকে থাকতে পারবে না। অথচ এই সামাজিক জীবটির পাশের ফ্লাটে কে থাকে তার নামটিও বলতে পারি না। অথচ সে প্রতিবেশী।

সত্যি করে বলেন, যে সমাজে বাস করে নিজেকে মানুষ মনে করে গর্ববোধ করছেন, আমরা কি আদৌ মানুষ? আমাদের এই সমাজটা কি আদৌ মানুষের সমাজ? সমাজের জন্য ভালো কিছু তো করছিই না উল্টো ক্ষতি সাধন করে নিজে লাভবান হতে চাইছি, অন্যের সম্পদ লুট করে ধনী ব্যক্তি হতে চাইছি, সম্পদে আগুন দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাইছি, নিজের সুখের জন্য দেশ বিক্রি করে দিচ্ছি। টাকার নেশায় খাদ্যে বিষ মেশাচ্ছি, ঔষধে ভেজাল দিচ্ছি, ডাক্তার হয়ে রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করছে, পুলিশ হয়ে সাধারণ নিরাপরাদ মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে, কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে তাকে বাঁচানোর পরিবর্তে তার পকেট থেকে মানিব্যাগ আর মোবাইল চুরি করছি। আমি কি মানুষ? এই সমাজ কি আমার পালক? তাহলে কিভাবে এই সমাজের বুকে বাস করছে অন্যায়, অবিচার, হত্যা, গুম, শোষণ, বঞ্চনা, দমন-পীড়ন, প্রতারণা ইত্যাদি। করছি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ভয়াবহ সব অপরাধ। যদি এসবের গভীরে তাকাই এবং নির্মোহ চিন্তা করি, দেখতে পাবো এই সকল অন্যায়-অপরাধের মূল কারণ হচ্ছে মানুষের ধর্মহীনতা।

একজন মানুষ হিসেবে চাই, মানুষ আরো বেশী দিন নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি ধরে রেখে এই পৃথিবীতে টিকে থাক। এখন যে ব্যাপারটা হল, চাওয়াটা কেন, সেটা বুঝলাম, বুঝলাম এটা সকলের সম্মিলিত চাওয়া না, একজন একজন করে অধিকাংশ মানুষের চাওয়া। তারপরেও কেবল একটু মানসিক শান্তির জন্য আপন লক্ষ্যের পেছনে ছুটব। এখন কাউকে পাশে না পেলেও একটা সময় অনেকেই পাশে থাকবে। সেদিন হয়ত বেশি দূরে নেই।

আবু রায়হান মিসবাহ
কবি লেখক সম্পাদক দৈনিক গণমাধ্যম।