নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত একদিনের সূচনা হয়েছে। দেশে সংস্কারের জোয়ার উঠেছে মানুষের মাঝে। বড়-ছোট, নারী-পুরুষ, সব শ্রেণির মানুষ চায় দেশকে নতুন দিনের আলোয় আলোকিত করতে। তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে দেশের প্রয়োজনে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এই নতুন দিনের শুরু।
এখন চলছে সংস্কারের কাজ। সারা দেশে অব্যাহত থাকবে এই সংস্কার। দেশ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে একটু একটু করে। তরুণদের হাতে যখন দেশের দায়িত্ব তখন জয়ী আমরা হবই। এটা একটা সামাজিক আন্দোলন। এই আন্দোলনের স্রোতে আন্দোলিত হোক দেশ, অব্যাহত থাকুক চিরকাল।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর বাংলাদেশ আবার বিশ্ব-সংবাদ হলো; তবে এবার অনেক বড় বিশ্ব তাৎপর্য নিয়ে। পৃথিবীজুড়ে যখন গণতন্ত্রের দুর্দিন, নানা দেশে স্বৈরাচারদের দাপট চলছে, তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে হলো অনন্য এক জন-অভ্যুত্থান। বিস্মিত বিশ্ব ছাড়াও পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এই ঘটনার প্রবল ছাপ পড়েছে। কয়েক শ মানুষ সরাসরি জীবন দিয়ে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের পক্ষে রায় দিয়েছে, যা উত্তর-ঔপনিবেশিক বৈশ্বিক রাজনীতির ইতিহাসে ইতিমধ্যে এক বড় ঘটনার স্বীকৃতি পাচ্ছে ভাষ্যকারদের কাছে। কিন্তু তা থেকে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে রাজনৈতিক শান্তি আসবে কি?
দেশ স্বাধীন, কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যারাই রাজনীতি থেকে প্রশাসনে ঢুকছে,তারাই ‘প্রভু’ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, ‘স্বৈরাচার’ তৈরির অনিবার্য উপাদান এখনকার প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভেতর রয়ে গেছে। সুতরাং সবার তরফ থেকে সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রনৈতিক সংস্কারই এখানে সামাজিক ন্যায়বিচার, সুশাসন ও গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে পারে। আমি স্বপ্ন দেখি দারিদ্র্যমুক্ত এক বাংলাদেশের। যেখানে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হবে না কোনো মানুষকে। স্বপ্ন দেখি এমন একটি নিরাপদ দেশের, যেখানে কোনো নারীকে হতে হবে না ধর্ষিত। আরো স্বপ্ন দেখি নিরাপদ সড়কের, যেখানে সড়কে ঝরে পড়বে না আর কোনো নিরীহ মানুষের প্রাণ। নিশ্চিত হবে নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবহার। সাইবার বুলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ আইনের প্রয়োগ থাকতে হবে। ইন্টারনেটে যেন কাউকে হয়রানির শিকার হতে না হয়, কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক সহিংসতার সূত্রপাত যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু না হয়—সেই বিষয়েও লক্ষ রাখতে হবে।
আমার দেশকে এমনভাবে দেখতে চাই, যেখানে সবাই মন খুলে যুক্তি দিয়ে নিজের দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। যেখানে বাক্স্বাধীনতার অস্তিত্ব থাকবে, পূর্ণ নিরাপত্তাও থাকবে। আমি চাই না কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংঘর্ষে বলি হয়ে প্রাণ হারাক কোনো নিরীহ মানুষ। এমন একটি দেশ চাই, যেখানে উচ্চপদস্থ থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষেরই জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক থাকবে। জবাবদিহিতা চর্চার অভাবে মানুষ বৃহত্তর স্বার্থের কথা না ভেবে নিজস্ব ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য অনৈতিক কাজ করে, সাধারণ জনগণকে বিপদগ্রস্ত করে—এই অবস্থার অবসান চাই। সবাইকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মাদকের কালো ছোবল থেকে যুবসমাজকে সচেতন করতে হবে।
স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ একদিন আমদানি নির্ভর বাংলাদেশ থেকে স্বনির্ভর বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে। নিজের দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর পরিমাণ পণ্য বাইরের দেশেও রপ্তানি করবে। তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক শিল্পব্যবস্থারও উন্নতি ঘটুক সেটি অবশ্যই চাইব। একজন কৃষক তার উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন—সে প্রত্যাশাও থাকবে। কৃষি খাতে আরো বিনিয়োগ এবং কৃষি কাজের উপকরণের দাম কৃষকের সামর্থ্যের মধ্যে রাখা ও সহজ শর্তে কৃষিঋণ বিতরণ সুযোগ করে দিতে হবে।
বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন সবাই দেখে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের তরুণ সমাজ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, স্নাতক পাশ করেও লাখ লাখ তরুণ-তরুণী বেকারত্বের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছে। শিক্ষিত হয়েও অস্বচ্ছল জীবনের এই ভয়ংকর দুঃখ-দৈন্যের অবসান চাই। এমন দেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী যুগোপযোগী সৃজনশীল চিন্তার অধিকারী হয়ে দেশকে অপার সম্ভাবনার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শিক্ষা কাঠামোতে গবেষণা অন্তর্ভুক্তকরণ ও বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে শিক্ষিত লোক বাড়ছে অথচ কর্মমুখী শিক্ষিত লোক বাড়ছে না, ফলে সৃষ্টি হচ্ছে শিক্ষিত বেকার। তাই উচিত কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন।
আমি চাই আমাদের সমাজে কোনো সুবিধাবঞ্চিত মানুষ থাকবে না, একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ, দারিদ্র্যমুক্ত সুখী দেশের স্বপ্ন আমি দেখি, যেখানে কোনো বেকার থাকবে না, কোনো মানুষকে তার অধিকারের জন্য মার খেতে হবে না, কোনো বিচারপ্রার্থীকে বিচারের আশায় আদালতের প্রাঙ্গণে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না, শিক্ষা-গবেষণায় আমরা এগিয়ে যাব সমৃদ্ধির এক অনন্য উচ্চতায়।
সবার কাছে বৈষম্যবিহীন নতুন বাংলাদেশে প্রত্যাশা থাকবে—সবাই ঐক্যের সঙ্গে দেশকে উন্নতকরণে অংশগ্রহণ করব। সৃজনশীলতার চর্চা হবে সর্ব ক্ষেত্রে, আমরাই হব আমাদের দেশের সুনিপুণ কারিগর। চলুন, নিজেদের সততা, মূল্যবোধ, মানবিকতা, দক্ষতা দিয়ে গড়ে তুলি আমাদের বৈষম্য বিহীন স্বপ্নের বাংলাদেশ।
এ টি এম রাহাত মোহাম্মদ
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জনশক্তি ট্রাস্ট।