এস চাঙমা সত্যজিৎ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাননীয় চেয়ারম্যান বাবু সুপ্রদীপ চাকমাকে উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এরকম একজন যোগ্য ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
নবীন ও প্রবীণ প্রজন্মের সমন্বয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা এমন একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে পাহাড় থেকে সমতলের প্রতিটি নাগরিকের ন্যায্য অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। নতুন বাংলাদেশ হোক সবার, সমতার এবং ন্যায় বিচারের এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সুপ্রদীপ চাকমার সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
তিনি ১৯৬১ সালের ৪মে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাধীন কমলছড়ি গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম বরুন কুমার চাকমা ও মায়ের নাম পদ্মা চাকমা। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার জ্যেষ্ঠ। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর পিতৃবিয়োগ হলে তাঁদের মা একাই সংসারের হাল ধরেন। শত দারিদ্রতা ও প্রতিকুলতার মধ্যেও তিনি তাঁর সন্তানদের পড়াশোনায় সবসময় উৎসাহ যুগিয়েছেন। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার ফসল হিসেবে আজ সুপ্রদীপ চাকমা ও তাঁর ছোটভাই ড. ভূমিত্র চাকমা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত আলোকিত জীবনের অধিকারী। উল্লেখ্য যে, তিনি বাংলাদেশে চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে সচিব পদমর্যাদা পাওয়া ১ম কর্মকর্তা। তাঁর ছোটভাই প্রফেসর ড. ভূমিত্র চাকমা বর্তমানে ইংল্যান্ডের হাল ইউনিভার্সিটিতে অত্যন্ত সুনামের সাথে অধ্যাপনা করছেন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে মাস্টার্সে ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অর্জন করেছিলেন। দুই ভাইয়ের এরকম গৌরবময় সাফল্যের পিছনে তাঁদের মায়ের অবদান অনস্বীকার্য।
সুপ্রদীপ চাকমা কমলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং কমলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও খাগড়াছড়ি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিষয়ে বিএ(অনার্স) ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
তিনি ১৯৮৫ সালে ৭ম বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে নিয়োগ পান। ১৯৮৮ সালের ১৫ফেব্রুয়ারি সহকারী সচিব হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ফরেন এফেয়ার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ এবং সাভার বিপিএটিসিতে ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৯০-১৯৯২ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ফ্রান্সভাষা ও ইউরোপীয় কুটনৈতিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। প্রশিক্ষণের পর ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে এসে পুনরায় সহকারী সচিব হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৩ সালে মরক্কোর রাজধানী রাবাতএ বাংলাদেশ দূতাবাসে ২য় সচিব হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৯৬ সালে শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সিলর হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিচালক (রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রাচার) হিসেবে দায়িত্ব গালন করেন।
২০০১ সালে হাওয়াইএ এশিয়া প্যাসিপিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজ এর তিনমাসের প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সিলর হিসেবে যোগদান করেন।
২০০৪ সালে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসে মিনিস্টার হিসেবে যোগদান করেন। অতঃপর ২০০৭ সালে তাঁকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়।
২০০৯ সালে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লাওসের দায়িত্বও পালন করেন।
২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা, পানামা ও পেরুর দায়িত্বও পালন করেন।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব পদমর্যাদা লাভ করেন। উল্লেখ্য যে, তিনি চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে সচিব পদমর্যাদা পাওয়া ১ম কর্মকর্তা। তিনি ২০২০ সালে স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার পূর্বে বাংলাদেশ সরকার আরও ১ বছরের জন্য ২০২১ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বর্ধিত করেন। অতঃপর ২০২১ সালের মে মাসে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অবসর গ্রহণের পর তিনি ২০২৩ সালে ২৭ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান(সচিব পদমর্যাদায়)হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং গত ৮ আগষ্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে সেখানে তাকে একজন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এস চাঙমা সত্যজিৎ
স্টাফ রিপোর্টার প্রথম বুলেটিন।