today visitors: 5073432

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ধরপাকড় বন্ধ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবীতে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ

এস চাঙমা সত্যজিৎ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ধরপাকড় বন্ধ, আটককৃতদের মুক্তি এবং খুনের ঘটনায়
আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবিতে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামসসহ সারাদেশে ধরপাকড় বন্ধ, ইউপিডিএফ নেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমা, কুনেন্টু চাকমাসহ আটক ছাত্রদের মুক্তি এবং ইউপিডিএফের ৩৬৭ জন নেতাকর্মী খুনের ঘটনাসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি বর্ষণ ও খুনের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি ও রামগড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

আজ সকালে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ইউপিডিএফের পানছড়ি ইউনিটের উদ্যোগে পূজগাং এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শুরুর আগে পানছড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে সকাল ৮ টা থেকে পূজগাং উচ্চবিদ্যালয় মাঠে হাজার হাজার নারী পুরুষ ছাত্র ছাত্রী জড়ো হতে শুরু করেন। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নিচের পূজগাং বাজার ও উপরে পূজগাং বাজার ঘুরে পূজগাং ব্রীজে সড়ক অবরোধ করে মিলিত হয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত করা হয়।

সমাবেশে ইউপিডিএফের পানছড়ি সংগঠক বকুল চাকমার সভাপতিত্বে ও ইউপিডিএফ সদস্য সুমঙ্গল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি উপজেলা সভাপতি সুনীল ময় চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মানিক পুদি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি সভাপতি রিপন ত্রিপুরা।

ইউপিডিএফ সংগঠক বকুল চাকমা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশে বাকশালী শাসন কায়েম করতে চায়। যার কারণে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে ভিন্নমতালম্বীদের দমন পীড়ন করে চলেছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ধ্বংস করে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত পাহাড়ে সেনা শাসন চলছে। সরকার সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় ইউপিডিএফের ৩৬৭ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করছে। কল্পনা চাকমা অপহরণকারীদের দায়মুক্তি দিয়েছে। সুতরাং এই সময়ে এসে কারোর ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। পার্টির আহ্বানে যে কোন আন্দোলনে সামিল হতে হবে।

মানিক পুদি চাকমা বলেন, আমরা বিভিন্ন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছি। পুরো জুন ও জুলাই মাসে প্রোগ্রাম করেছিলাম এবং আজকেও করছি। তিনি চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর শাসক শ্রণীর নিষ্ঠুর দমন পীড়ন, হামলা ও হত্যাকাাণ্ডের নিন্দা জানান।

তিনি আরো বলেন, আমরা এই দেশের জনগণ স্বাধীন দেশের নাগরিক। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা যদি প্রতিবাদ করতে না পারি, কোন কিছু দাবি করতে না পারি তাহলে কারা পারবে? তিনি আরো বলেন, আজকের এই সমাবেশ শেষ নয়, ভবিষ্যতে আমাদের আরো কঠোরভাবে আন্দোলন করতে হবে। সবাইকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে।

যুবনেতা বরুন চাকমা বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে রেখেছে। নানা কালাকানুন জারি রেখে দেশের জনগণেও ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণের মত প্রকাাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয়ের গণবিরোধী ১১ দফা নির্দেশনা জারি রেখে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। সংবিধানে পাহাড়িসহস সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমাকে গুম করেছে।

তিনি দেশে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৯ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানান এবং পাহাড় ও সমতলে অন্যায় ধরপাকড় বন্ধ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩৬৭ জন ইউপিডিএফ নেতাকর্মীকে হত্যা, চলমান ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে শিক্ষার্থী-জনতা হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান।

ছাত্রনেতা সুনীল ময় চাকমা বলেন, আজ সারা দেশে ছাত্রদের যেভাবে হত্য করা হচ্ছে, ছাত্রদের ওপর যেভাবে গুলি করা হচ্ছে তাতে আমরা পাহাড়ি ছাত্র সমাজ বসে থাকতে পারি না। তিনি সবাইকে সরকারের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে আন্দোনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

আজ সকাল ১০টায় রামগড়ের যৌথ খামার এলাকায় খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম রামগড় উপজেলা শাখাসমূহ যৌথভাবে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।

প্রথমে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলের পর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা শাখা সভাপতি লিটন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, রামগড় উপজেলা সভাপতি বাহাদুর ত্রিপুরা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রামগড় উপজেলা শাখা সভাপতি গুলোমনি চাকমা।

ছাত্রনেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, এদেশের ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারী এরশাদকে উৎখাত করেছিল। তিনি বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যদি দমন-পীড়ন, নির্যাতনের পথ বেছে নিয়ে শিক্ষার্থী-জনতার চলমান আন্দোলন দমন করতে চান তাহলে আপনারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। শত দমন-পীড়ন, হত্যাকাণ্ডের পরও দেশে ছাত্র-জনতার যে মিছিল তার প্রমাণ দিচ্ছে।

তিনি বলেন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশকে একটা কারাগারে পরিণত করেছে। তাই শিক্ষার্থী-জনতার দাবি মেনে ও হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামে নয়, সমতলেও ন্যায়সঙ্গত দাবিতে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকার রাষ্ট্রীয় সকল বাহিনীসহ ছাত্রলীগ, যুব লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের ওপর লেলিয়ে দিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, নির্বিচারে গণগ্রেফতার চালাচ্ছে।

সমাবেশ থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে অন্যায় ধরপাকড় বন্ধ করে ইউপিডএফের কেন্দ্রীয় নেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমা, পিসিপি নেতা কুনেন্টু চাকমাসহ আটক ছাত্রদের মুক্তি এবং ইউপিডিএফের নেতা-কর্মী খুনের ঘটনাসহ দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে খুনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান।

মিছিল ও সমাবেশে “পাহাড় ও সমতলে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধ কর; পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ধরপাকড় বন্ধ কর; কুনেন্টু চাকমাসহ আটককৃত ছাত্রদের মুক্তি দাও; অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হল খুলে দাও; কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি বর্ষণ ও খুনের আন্তর্জাতিক তদন্ত চাই; ৩৭০ জন ইউপিডিএফ নেতাকর্মী হত্যার আন্তর্জাতিক তদন্ত চাই; নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক গুম মাইকেল চাকমার সন্ধান চাই; কল্পনা চাকমা অপহরণের আন্তর্জাতিক তদন্ত চাই; যে বাহিনী পাহাড়ি মারে, সে বাহিনী সমতলে গুলি করে” ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।

এস চাঙমা সত্যজিৎ
স্টাফ রিপোর্টার প্রথম বুলেটিন।