সমস্ত প্রশংসা রাব্বে কারিমের জন্য। যিনি মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রিয় বান্দাহগণের ভালোবাসা অর্জনের তাওফীক দানে ধন্য করেছেন। অসংখ্য দুরূদ ও সালাম দু’জাহানের সরদার হাবীবে খোদা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর প্রতি, যার শুভাগমনের মধ্যদিয়ে নবী-রাসুল আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ইসলাম প্রচারে ও পথহারা মানুষকে আলোর সন্ধান দিতে নবীদের উত্তরাধিকার হিসেবে যুগে যুগে আওলিয়ায়ে কেরামগণ আগমন করবেন।
যামানার শ্রেষ্ঠ মুযাদ্দিদ, রঈসুল কুররা ওয়াল মুফাসসিরীন, উস্তাযুল মুহাদ্দিসীন, মুরশিদে বারহাক্ব, ওলীয়ে কামিল, শামছুল উলামা আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ.। যিনি নিজের মেধা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আধ্যাত্মীকতার বলে আপন ব্যক্তি পরিচয়কে পেছনে ফেলে পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছিলেন নিজেকে।
প্রচলিত কুসংস্কার মানব সমাজের প্রতি অবহেলা নির্যাতন নিপীড়ন যখন সমাজ অগ্রগতির বাঁধা হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়, মানুষ ও মানবতা হয় বিপন্ন তখন এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রত্যেক জাতি, সমাজ ও দেশে সময়ে সময়ে দিক-নির্দেশক হিসেবে আবির্ভাব ঘটে মহা-মনীষীদের। যারা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মীক চিন্তা-চেতনা বিকাশে কাজ করতে এবং সামাজিক ও জাতীয় জীবনে শান্তিময় ইসলামী সমাজ গঠণে নিরলস ভাবে কাজ করেন। যাদের পদধূলায় ধন্য হয় ধরিত্রী আর পূণ্যবৃষ্টিতে সিক্ত হয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে সময়ের প্রকৃতি। তেমনি একজন কীর্তিমান ব্যাক্তিত্ব হলেন- যামানার শ্রেষ্ঠ মুযাদ্দিদ, রঈসুল কুররা ওয়াল মুফাসসিরীন, উস্তাযুল মুহাদ্দিসীন, মুরশিদে বারহাক্ব, ওলীয়ে কামিল, শামছুল উলামা আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ.। যিনি নিজের মেধা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আধ্যাত্মীকতার বলে আপন ব্যক্তি পরিচয়কে পেছনে ফেলে পূর্ণাঙ্গ তথা বর্ধিত এক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরীত করেছিলেন নিজেকে। এতে করে বাংলাদেশ তথা সমকালীন দুনিয়ায় তাঁর পরিচিতি ও সুখ্যাতি ছিলো অপরিসীম।
ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. ১৯১৩ সালে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ফুলতলী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত আলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা মুফতি মাওলানা আব্দুল মজিদ চৌধুরী রহ.।
ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. ১৯১৩ সালে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ফুলতলী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত আলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা মুফতি মাওলানা আব্দুল মজিদ চৌধুরী রহ. ছিলেন একজন ফকিহ ও বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন। যিনি হযরত শাহজালাল রহ. এর অন্যতম সফরসঙ্গী হযরত শাহ কামাল রহ. বংশধর।
আল্লামা ফুলতলী রহ. ছিলেন ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ। বিংশ শতাব্দিতে যখন পবিত্র কোরআনের ভূল তিলাওয়াতের ছড়াছড়ি এই উপ-মহাদেশে দেখা দিয়েছিলো, তখন আলেমদের অনেককে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেলেও তিনি কিন্তু বসে থাকেননি। শুরু করেন বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের মহতী উদ্যোগ “দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট”। সেই সময় থেকে শুরু হওয়া তাঁর যুগান্তকারী ইলমে ক্বিরাতের খেদমত বর্তমানে বাংলাদেশ তথা বিশ্বে তাজবীদী ভূমিকা পালনসহ মনগড়া ভূল কিরাত চর্চা কমে আসছে।
হাদীস হচ্ছে শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস। তিনি ইলমে কিরাতের খিদমত আনজাম দেয়ার পাশাপাশি ইলমে হাদীসের খিদমতেও বিরল ভূমিকা পালন করে গেছেন। তাছাড়া আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. ছিলেন একজন দরদী অভিভাবক, সফল সমাজ সংস্কারক এবং খুব বিশ্বস্ত ভরসাস্থল। দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তাকে ভালোবাসত, গরীব, দুঃখী, অসহায় এতীমদের নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি। বিশেষ করে মুসলিম মিল্লাতের এই মধ্যমনি বিভিন্ন সময়ে ইসলামী আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতীয় এবং সামাজিক জীবনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহসী সূচনা পালন করে গেছেন। জীবনের শেষ দিকে এসে ফাযিলকে ‘ডিগ্রী’ ও কামিলকে ‘মার্স্টাস’ এর মান প্রদান এবং স্বতন্ত্র ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীতে সিলেট থেকে হাজার হাজার গাড়ী নিয়ে ঢাকা অভিমূখে ঐতিহাসিক লংমার্চ কর্মসূচি পরিচালনা করেন।
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. ইসলামী খিদমত আঞ্জাম দেয়ার জন্য দেশ বিদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন গড়ে তুলেছেন এবং শত শত মসজিদ মাদরাসার পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. ইসলামী খিদমত আঞ্জাম দেয়ার জন্য দেশ বিদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন গড়ে তুলেছেন এবং শত শত মসজিদ মাদরাসার পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তন্মোধ্যে ‘দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট, লতিফিয়া এতিম খানা, বাদেদেওরাইল ফুলতলী আলিয়া মাদরাসা, হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুনাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসা, বাংলাদেশ আন্জুমানে আল ইসলাহ, বাংলাদেশ আন্জুমানে তালামীযে ইসলামিয়া, লতিফিয়া ক্বারী সোসাইটি, লতিফিয়া কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ আনজুমানে মাদারিসে আরাবিয়া, মুসলিম হ্যান্ডস বাংলাদেশ,ইয়াকুবিয়া হিফজুল কুরআন বোর্ড। যুক্তরাজ্যে ‘দারুল হাদীস লতিফিয়া, আনজুমানে আল ইসলাহ ইউকে, লতিফিয়া উলামা সোসাইটি, লতিফিয়া কারী সোসাইটি ইউকে, আল ইসলাহ ইয়ুথ ফোরাম, কিরাত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আল মজিদিয়া ইভিনিং মাদরাসা, লতিফিয়া গার্লস স্কুল এবং যুক্তরাষ্ট্রে ‘আল ইসলাহ নামে মসজিদ, মাদরাসা, ইসলামিক সেন্টার, নিউইয়র্ক সুন্নিয়া হাফিযিয়া মাদরাসা, শাহজালাল লতিফিয়া মাদরাসা’ উল্লেখযোগ্য।
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সুলেখক ও বটে। তাফসীর, কিরাত, সীরাত, তাসাওউফের বেশ কয়েক খানা রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে ‘আততানভীর আলাত তাফসীর, মুন্তাখাবুস সিয়র, আনওয়ারুস ছালিকীন, নালায়ে কলন্দর, আল খুতবাতুল ইয়াকুবিয়া, শাজারায়ে তাইয়্যিবাহ, নেক আমল, আল কাউলুছ ছাদীদ’ ইত্যাদি।
আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. আজ আমাদের মাঝে নেই। ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারী লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও আশেকগণকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে মাওলায়ে হাক্বিক্বির ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য: আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. আজ আমাদের মাঝে নেই। ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারী লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও আশেকগণকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে মাওলায়ে হাক্বিক্বির ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের জন্য রেখে গেছেন তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের সুন্দর সাধনা আর প্রেমময় এক উত্তম আদর্শ। রাব্বে কারিম তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মাক্বাম দান করুন, আমীন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম সিলেট।