মো: রেজাউল করিম, ক্রাইম রিপোর্টার
সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধ
কিভাবে সম্বব? এ তো সেই চিরচেনা চিহ্ন যেটা সে নিজের হাতে দিয়েছিল তার জীবনের একমাত্র ভালবাসাকে। এটা রিদের হাতে কিভাবে আসলো?
আজ প্রিয়ুর বিয়ে হয়েছে সদ্য রিদানের সাথে। খুব সাধারণ সাধাসিধা ছেলে রিদ। সদ্য সরকারি চাকুরি পেয়েছে ব্যাংকে। বাবা মা গ্রামে থাকেন জন্য একা একা থাকতে হয়। তাই মা জোড় করে বিয়ে দিয়েছে।
রিদ রুমে ঢুকেই ড্রেস চেঞ্জ করে হাফ হাতা গেঞ্জি পড়ে আসার সময় প্রিয়ু দেখে ফেলে চিহ্নটা। প্রিয়ুর দিকে এতসময়ও তাকায় নি রিদ। হ্যা, আরেঞ্জ ম্যারেজ তাদের। এর উপর প্রিয়ু তাকে আগেই বলেছে তাকে স্বীকার করবে না। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? যাকে সে সারাজীবন খুঁজে চলেছিল এই কি সেই কাম্য পুরুষটা তার? যাকে ছোটবেলা হারিয়েছিল সে?
কিছুদিন আগে,,,,,
মেয়ের বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে জন্য ছেলে পক্ষ আসতে বলেছে প্রিয়ুর বাবা আজ। কিন্তু প্রিয়ুর মাথায় তো অন্য চিন্তা।।।
‘পাত্রপক্ষের সামনে এসব অভদ্রতার মানে কি অপরিচিতা?’
মায়ের কথা শুনে আরো যেন ভড়কে গেল প্রিয়ু। মা রেগে থাকলেই তার পুরো নাম ধরে ডাকেন।
কিছুক্ষণ আগে তাকে দেখতে আসা ছেলে পক্ষের সামনে সে বলে দিয়েছে সে আগে থেকে বিবাহিত। ছেলে পক্ষের সামনে মেয়ের এরকম একটা তথ্য আসলে কেউই বিয়েতে মত দেবে না এটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু কথাটা বলেন হন হন করে রুমে অগ্রসর হল প্রিয়ু। পুরো নাম অপরিচিতা চৌধুরী।
‘কিরে কথা বলিস না কেন? তুই তো বিবাহিত, কোথায় তোর বর?’
মায়ের কথায় এবার চোখ তুলে তাকালো প্রিয়ু।
‘তোমরা যাই বলো মা, ছোটকালে তো ঠিকই বিয়ে হয়েছিল আমার, বাচ্চামো করেই হোক। সে হারিয়ে গেছে আমার জীবন থেকে। তাকে আমি খুঁজা বাদ দিব?’
‘উফফ তোর পাগলামি ছাড়া কিছুই নয় এগুলো। বলে বলে আমি ধৈর্য রাখতে পারছি না আর।’
তখনই দরজায় কাজের মেয়ে রত্না ধাক্কাচ্ছে শুনে প্রিয়ুর না পেছনে ফিরে দরজা খুললো।
‘কিরে?’
‘খালা, ছেলে যায় নাই গো, কয় এতে তার নাকি সমস্যা নাই।’
ছেলে এরকম বলেছে শুনে প্রিয়ুর চোখ কপালে উঠে গেলো।
কাজের মেয়েটি আবার বলল সে নাকি প্রিয়ুর সাথে একা কথা বলতে চায়। ,,,,,,,,,,
বেলকনিতে সামনা সামনি বসে আছে প্রিয়ু আর রিদ। এই প্রথম ছেলেটির দিকে তাকালো প্রিয়ু। দেখতে নিসন্দেহে সুদর্শন। সবুজ শার্ট আর অফ হোয়াইট প্যান্ট ইন করে ভদ্র পরিপাটি সাজে এসেছে উজ্জল শ্যামলা বর্ণের ছেলেটি। তবে এসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়ু মনে মনে ভাবলো, এই নাকি সে কথা বলবে, এসে তো নিজেই মাথা নিচু করে আছে।
‘এইযে!’
এবার মাথা তুলে তাকালো রিদ। প্রথম প্রিয়ুর চোখে চোখ পড়লো তার।
প্রিয়ু এক পলকের জন্য তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। চোখের মণিটা কালো নয় রিদের। একটু বাদামী বর্ণের। কেমন যেন মায়া আছে চোখটাতে, আর অনেক দুক্ষ।
আবার নিজেকে ধাতস্থ করে প্রিয়ু বলল,
‘আপনি বিয়ে করবেন বলেছেন নাকি?’
‘হুম।’
‘কিন্তু আমি তো বললাম তখন সবার সামনে যে,,,’
‘জানি। আর এটাও জানি সেটা ছোটকালের।’
প্রিয়ু এবার রেগে গেলো।
‘ছোটকাল মানে? এখনো তার স্মৃতি আমার মনে আছে, এখনো তার দেয়া প্রতিটা জিনিস আমি আমার কাছে রাখি। এখনো প্রতিটা দিন আমি তার আশায় বসে আছি সে আসবে।’
‘রিলাক্স রিলাক্স, আমি তার জায়গা আপনার থেকে নিব না। আমি সারাজীবন কি খুঁজেছি জানেন? সত্যিকারের ভালবাসা। যে তার ছোটবেলার স্মৃতিটাকেই এতটা ভালবাসতে পারে, সে আমাকে কতটা ভালবাসবে,,, আর শুনুন আমিও তাকে খুঁজতে আপনার সহায়তা করব। বিয়ের পরেও। সমস্যা নেই।’
‘কিন্তু এতে আপনার লাভ?’
‘লাভ লসে কি জীবন চলে অপু?’
হটাৎ চমকে উঠলো প্রিয়ু।’
‘কি নামে ডাকলেন আমাকে? অপু!!’ (প্রিয়ুর এই ডাকটা খুব চেনা, তার সায়ন তাকে এই নামে ডাকতো)
রিদ বলল, ‘ অপরিচিতা বলেছি। কেন সমস্যা নাম ধরে ডাকলে?’
প্রিয়ু এবার শান্ত হল। হয়ত ভুল শুনেছে সেই। আজকাল সব সময় তার সায়নের কথাই মনে পড়ে। আজ কেন যেন মনে হচ্ছে সায়ন খুব কাছেই তার। প্রিয়ু নিজেও জানে এটা সম্ভব নয়। তার সায়ন যে আজ বহু বছর আগে তাকে ছেড়ে কোথায় হারিয়ে গেছে সেও জানেনা।
‘নাহ,আচ্ছা আপনি আসুন।’
‘আপনার মতের অপেক্ষায় থাকবো। বিশ্বাস করুন আমি অন্য ছেলেদের মত নই। যদি ভরসা করেন তবে জানাবেন।’
রিদ পিছনে একবারও না ফিরে চলে গেছিলো সেদিন। প্রিয়ুর বাবা মা দুজনেরই রিদকে পছন্দ। প্রিয়ুর রাজি না থাকা স্বত্তেও বিয়ে হয়েই গেল।।।সেটা আজই।
অতীতের স্মৃতিচারণ করছিল তখন রিদের কথায় ব্যাঘাত ঘটলো প্রিয়ুর,,
‘আপনি উপরে ঘুমান আমি নিচে ঘুমাই। বালিশটা দিন।’
তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে প্রিয়ু। আবার জিজ্ঞেস করলে এবার বালিশটা তার দিকে বাড়িয়ে দিল প্রিয়ু।
সে এখনো ভেবে যাচ্ছে আসলেই কি এটা তার সায়ন? কিন্তু রিদের বাবা মা সবাই তো,,, না এটা তো হতে পারে না। বার বার ভাবনায় বিচলিত হতে হতে সময় কাটলো। কিছু সময় পর বিছানা থেকেই নিচে তাকালো প্রিয়ু। রিদ নিচে বালিশে মাথা দিয়ে অন্য পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে। হাতটার দিকে নজর যেতেই আবার বাম হাতের কবজির জায়গাটা দেখলো প্রিয়ু। হ্যা সেই দাগটা। ছোটবেলায় সায়নের সাথে পরিচয় হওয়ার প্রথম দিন প্রিয়ু সায়নকে দিয়েছিলো।
চুপিসারে নিচে নামলো প্রিয়ু। ধীরে ধীরে রিদের কাছে গিয়ে হাতটা আরো ভাল করে কাছে থেকে দেখতে লাগলো। হ্যা এই দাগটা দিয়েই তো তাদের ভালবাসার শুরু।। কিন্তু রিদ!!!! প্রিয়ু ভেবে কূল পাচ্ছে না। চুপচাপ আবার বিছানায় গেল যেন রিদ না উঠে পড়ে। সে মনস্থির করলো সকালে রিদকে জিজ্ঞেস করবেই। এজন্যই কি বিবাহিত শুনেও রিদ তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে? আজ রাতটা বড়ই দীর্ঘ হতে যাচ্ছে প্রিয়ুর জন্য।
এদিকে অন্য পাশ ফিরে ঘুমন্ত রিদের চোখ জোড়া খুলে গেল সহসা। কেমন একটা হাসি দিল যেন সে।
চলবে
পর্ব_ ০১
অপরিচিতা_তুমি
লেখক_সীমান্ত_শুভ্র