মো: রেজাউল করিম ক্রাইম রিপোর্টার সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধা
ছোট চাচাকে দেখতাম প্রায়ই রাতের বেলা লুকিয়ে লুকিয়ে ব’ড়চাচির ঘ’রে যেতেন। বড়চাচা বিলেতে থাকতেন। এ বাড়িতে আসার পর বড়চাচাকে দেশে আসতে দেখেছি কেবল একবার। আমি অনাথ মানুষ। মিয়া বাড়িতে ঠাঁই হয়েছিলো কেবল বড়চাচির জন্যই। চাচিকে আমি আমার মায়ের আসনেই বসিয়েছিলাম। চাচি আমাকে ভিষণ স্নেহ করতেন। বিশাল টিনের ঘরে বড়চাচি একা থাকতেন। চাচির নাম ছিলো জয়তুন। তার কেবল এক ছেলে। ঢাকায় কলেজে পড়তো।
আমি থাকতাম দাদার ঘরের বারান্দায়। গ্রাম-গঞ্জের বারান্দায় দু’পাশে দুইটা ছোট ঘর থাকে। পশ্চিম দিকের ঘরটাই আমার ছিলো। মেয়ে জাতির কোথাও রেহাই নাই। তখন বড় হচ্ছিলাম। দে’হ পরিবর্তন হচ্ছিলো। ছোট হলেও বুঝতে পারতাম মানুষের নজর পড়ছে আমার উপর। ছোটচাচা যখন মাঝরাতে ঘর থেকে বের হয়ে জয়তুন চাচির ঘরে যেতেন তখন মিহি সুরে ছোটচাচির কান্নার আওয়াজ আসতো কানে। বালিশে শুয়ে অনুভব করতাম। কত বেদনা নিয়ে কাঁদছেন ছোটচাচি! এখন বুঝি স্বামী পর না’রীতে ডুবলে স্ত্রীদের কতটা ক’ষ্ট লা’গে!
জয়তুন চাচি গ’র্ভবতী হয়ে পড়ছিলেন। চাচা পড়েছিলেন বিপাকে। স্বামী বিদেশ অথচ স্ত্রীর পে’টে বা’চ্চা! গ্রামে তো মুখ দেখানো যাবেনা। দাদা সেদিন অনেক বকেছিলেন চাচিকে। ছমছমে এক রাত ছিলো। জয়তুন চাচি রাতে একবার এসেছিলেন আমার ছোটঘরে। মাথায় বুলিয়ে দিয়েছিলেন। চু’মু এঁকেছিলেন কপালে। ক্রন্দনসুরে বলেছিলেন, ‘ক্ষমা করে দিস রিনি। তোর বড়চাচি নোং*রা, আবর্জনা।’
বড়চাচি গ’লায় দ’ড়ি পেঁচিয়ে আ’ত্মহ’ত্যা করলেন সে রাতে। আগ’রবাতি জ্বললো তবে জানাজা পড়ানো হলোনা, গোসল দেওয়ানো হলোনা। আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম আগ’রবাতিগুলোর দিকে। বেদনার সময়ও কি সুন্দর সুগন্ধি ছড়িয়ে যাচ্ছে তারা! এক বাঁশের ঝাড়ে কোনোমতে পুঁ’তে রাখা হলো বড়চাচিকে। সব কেমন স্বাভাবিক হয়ে গেলো। সময় বয়ে যাচ্ছে। ছোটচাচি হাসিখুশি থাকেন। ছোটচাচা ধ’র্মভীরু হয়ে পড়লেন। গায়ে আতর মেখে, চোখে সুরমা মেখে নামাজে যাচ্ছেন নিয়মিত। কেবল সময় থমকে গেলো আমার। এর মাঝে দাদা মা’রা গেলেন। এবারে আগরবাতি জ্ব’ললো, বড়ই পাতা সমেত পানি গরম করা হলো। দাদাকে গো’সল দেওয়ানো হলো। শেষে জা’নাজা পড়িয়ে দা*ফন করা হয়।
এতটুকু বলে থামে রিনি। সামনে চেয়ারে বসা অরূপকে বেঁ’ধে রেখেছে সে। মুখ রুমাল দিয়ে বাঁধা। অরূপ ছাড়া পাওয়ার জন্য ছ’টফ’ট করছে। রিনি মুখের রু’মা’ল সরিয়ে দেয়। অরূপ চিৎ’কার করে বলে উঠে,
“আমাকে ছে’ড়ে দাও বলছি। রিনি ভালো হবেনা কিন্তু!”
মুখে হাত বুলিয়ে অরূপের চু’ল টেনে ধরে রিনি। অট্টহাসিতে ফে’টে পড়ে। শুধায়,
“ভাবীর ঘরে যাওয়ার জন্য এত তাড়া!”
থতমত খায় অরূপ। রিনি বলে,
“আমার আগ’রবাতি বেশ পছন্দ। কি সুন্দর সুগন্ধি ছড়ায়! বেশ হিং’সে হয় আগ’রবাতির প্রতি! কত মায়বী ভাবে ঘ্রাণ ছ’ড়িয়ে তারা বিদায় নেয় পৃ’থিবী থেকে! বিশেষ করে মৃ’তবা’ড়ির আগ’রবাতি আমার কি যে পছন্দ অরূপ!”
অরূপ কোনো জবাব দেওয়ার সময় পায়না। আ’গুন ধরে যায় তার শ’রীরে। দা’উদা’উ করে জ্বলে আ’গুন। য’ন্ত্র’ণায় ছ’টফ’ট করে শেষ নিঃ’শ্বা’স ত্যাগ করে সে।
আজ অরূপ মা’রা গিয়েছে সাতদিন। আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। ভরা জ্যোৎস্না। বেশ ভালো বাতাস বইছে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত শরীরের সাথে লে’প্টে দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। অনুভব করলাম আমি আগ’রবাতিতে পরিণত হচ্ছি। সুগন্ধির ধোঁয়া বের হচ্ছে আমার শ’রীর হতে। খুব হিং’সে হতো আগ’রবাতি দেখে। আজ ভালো লাগছে। এমন সুগন্ধি ছড়িয়ে যদি ম’র’তে পারি। সেই ম’রাতেও আমার সুখ গো। ম’রা’তেও সুখ। তবে বাঁ’চতে হবে আমাকে। পৃথিবীতে কত রকম আগ’রবাতি আছে। তাদের জ্ব’লে উঠা, সুগন্ধি সব দেখতে ও অনুভব করতে হবেনা!