today visitors: 5073432

রাঙামাটির সাজেকে নাঈম হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবীতে পানছড়িতে বিক্ষিাভ

এস চাঙমা সত্যজিৎ

স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাটে মো: নাঈম হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনিদের গ্রেফতার-শাস্তি, ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়া ও বাঘাইহাট জোন কমান্ডার ও বাঘাইছড়ি ইউএনওকে প্রত্যাহারের দাবীতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলাতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পানছড়ি গণঅধিকার রক্ষা কমিটি।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন ২০২৪) সকাল সাড়ে ১০টায় পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের আমতলী থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি লোগাং ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এতে বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত জনতা অংশ গ্রহণ করেন।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার রক্ষা কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অনীল চন্দ্র চাকমা।

গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য মানিক পুদি চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সঞ্চয় চাকমা, ইউপিডিএফ সংগঠক বকুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, পিসিপির পানছড়ি উপজেলা সভাপতি সুনীল ময় চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি সভাপতি রিপন ত্রিপুরা।

সমাবেশে সঞ্চয় চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কী করছে সেটা জানা দরকার। পাহাড়ে তারা বিভিন্নভাবে অপকর্ম করে যাচ্ছে। তারা বিভিন্নভাবে নাটক সাজিয়ে সাধারণ জুম্মোদের উপর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে । বিভিন্ন দল গঠন করে দিয়ে পাহাড়ে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। আমাদের এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

ইউপিডিএফ সংগঠক বকুল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জুম্মোদের ধ্বংস করে দেয়ার জন্য শাসক গোষ্ঠি বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। পাহাড়ে নিয়োজিত সামরিক প্রশাসন রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করছে। আজ আমাদের জুম্মোদের পিঠ দেয়ালে থেকে গেছে, পেছনে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। যে কোন বিনিময়ে আমাদের এই পাহাড়ে থাকতে হবে। যে কোন বিনিময়ে আমাদের ভুমিকে রক্ষা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যে সেনাবাহিনী নিপীড়ন নির্যাতন চালায় সে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রয়োজন নেই। তিনি অবিলম্বে মো. নাঈম হত্যাকারীদের মদদ ও আশ্রয়দাতা বাঘাইহাট জোন কমান্ডার লে. কর্নেল খায়রুল আমিন ও বাঘাইছড়ি ইউএনওকে প্রত্যাহারের দাবিসহ ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবি জানান।

যুব নেতা বরুন চাকমা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্ন ভুখন্ড নয়. বাংলাদেশেরই অংশ। কিন্তু পাহাড়ে এক শাসন আর সমতলে এক শাসন চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ অঘোষিত সেনাশাসন অপারেশন উত্তরণ চলছে, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী বিভিন্নভাবে পাহাড়ি জনগণের উপড় নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর ন্যায় বর্তমান বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠি জুম্মো রাজাকার মুখোশ-সংস্কার সৃষ্টি করে জুম্মো জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্যাম্পে জুম্মো রাজাকার সংস্কার-মুখোশদের আশ্রয় দিয়ে খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি গণ অধিকার রক্ষা কমিটির দাবীর প্রতি সমর্থন জানান এবং পাহাড়ে চলমান অরাজক পরিস্থিতির জন্য দায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার পূর্বক সেনা শাসনের অবসান দাবী করেন।

পিসিপি নেতা সুনীলময় চাকমা বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী জাত বিরোধী সংস্কার-মুখোশদের বাঘাইহাট জোনে আশ্রয় দিয়ে সাধারণ জনগণকে বিভিন্নভাবে হয়রানি-নিপীড়ন করে যাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় গত ১৮ জুন তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী জনতার উপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে। এতে শান্তি পরিবহন বাস চালকের সহকারী মো. নাঈম হত্যার শিকার হয়েছেন। তিনি সবাইকে জুম্মো ধ্বংসের সেনা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

নারী নেত্রী পরিণীতা চাকমা বলেন, আজ আমরা জুম্মোরা বিভিন্নভাবে পেছনে পড়ে রয়েছি। পাহাড়ে এখন অনেক সমস্যা। পাহাড় এখন বিভিন্ন সংঘাতে জর্জরিত। কারো মায়ের বুক খালি হোক আমরা চাই না। পাহাড়ে যেন আর অন্যায় হত্যাকাণ্ড না ঘটে সেজন্য আজকের এই সমাবেশ। এভাবে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সভার সভাপতি অনীল চন্দ্র চকমা বলেন, যে কোন অন্যায়-অবিচার হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়। তাই আজ পাহাড়ে যে অন্যায় হচ্ছে তার প্রতিবাদ করতে আপনারা এখানে এসেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক যে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমাদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার কর্তৃক বিভিন্নভাবে আমাদের অবহেলা করা হচ্ছে। আমাদের সম্পদ কেড়ে নিচ্ছে। মানিকছড়ির সেমুতাং গ্যাস আমরা পাচ্ছি না। কাপ্তাই বাঁধের ফলে ৫৪ হাজার একর ধান্যজমি তলিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা ঠিকমত বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। পাহাড়িদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে এখন আওয়ামী ফ্যাসীবাদি শাসন চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে মনে রাখা দরকার গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হয়েছে, আজকে আমরা যদি গণআন্দোলন করতে পারি এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার এবং সেনা সৃষ্ট নব্য মুখোশ- সংস্কারদের পতন অনিবার্য। আজকে সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষ করতে পারি না, পারবোনা।

তিনি আগামীতে যে কোন গণআন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে সাজেকের বাঘাইহাটে মো. নাঈম-এর হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, সেনাসৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী বাহিনী ভেঙে দেয়া এবং সন্ত্রাসী আশ্রয়দাতা বাঘাইহাট জোন কমাণ্ডার লে. কর্নেল খায়রুল আমিন ও বাঘাইছড়ির ইউএনও শিরীন আক্তারকে প্রত্যাহারের দাবী জানান।

 

এস চাঙমা সত্যজিৎ
স্টাফ রিপোর্টার প্রথম বুলেটিন।