নিজস্ব প্রতিবেদক:
মেঘনায় জাল পাতা নিয়ে ভোলার প্রভাবশালীদের সাথে সাধারণ জেলের সাথে মুখোমুখি অবস্থান। সাধারণ জেলেদের উৎখাত করে মেঘনা দখল করতে দখলদার পক্ষ শনিবার রাতে ৪ জেলেকে আপহরন করে, পরে অপহরণকৃত ৪ জেলেকে উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা।
সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছায়েদ আলী জমাদার গঙ,দের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানান রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওহাব আলী মেম্বার, আওয়ামী লীগ নেতা বাসু শিকদার ও নাছির খাঁ গঙ। ছায়েদ আলী পক্ষ বাসু শিকদার পক্ষকে ধাওয়া করে ৪জেলেকে অপহরন করে নিয়ে যায়। শনিবার দিনভর ও রাতে এসব ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ভোলার বঙ্গেরচর ও ভোলার চর এলাকার মধ্যবর্তী মেঘনায়। দখলদার দুইপক্ষ ভোলা সদর উপজেলার নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচারপ্রচারণা চালিয়েছিলেন। নির্বাচনের পরে জয়ী সমর্থকরা পরাজিত সমর্থকদের বিতারিত করে মেঘনা দখল নিতে এ হামলা চালায় বলেও জানান তারা।
তবে সাধারণ জেলেরা জানান, ইলিশ মৌসুমে মেঘনা নদীর ডুবোচরে মাছ শিকারে প্রভাবশালীদের জেলেরা মাছ শিকারের সময় সাধারণ জেলেদের পিটিয়ে বাক দখল নেয়।
ভোলার ইলিশা নৌথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) বিদ্যুত কুমার বড়ুয়া বলেন, ভোলার জেলেরা মেঘনা নদীর মধ্যে বঙ্গেরচর ও ভোলার চরের মধ্যবর্তী পাতার চরে অবস্থানরত জলদস্যু বাহিনীকে ধাওয়া করলে তারা অপহরণকৃত চারজন জেলেকে ফেলে পালিয়ে যায়। এসব জেলেদের নাম মো. ইউসুফ মাঝি, শেখ ফরিদ, মো. হেলাল মাঝি, ও মো. দিদার মাঝি। এদের বাড়ি ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার সীমান্তে রামগতির তেলিয়ার চর ও চর জহিরুদ্দিনে এলাকায় । গত শুক্রবার পূর্ব মেঘনায় মাছ শিকারের জন্য মেঘনা নদীতে নামলে জলদস্যুরা এক এক নৌকা থেকে এক একজন করে চারজন মাঝিকে অপহরণ করে বঙ্গের চর এলাকায় নিয়ে আসে। পরে চার হাতপাও বেঁধে নৌকার খোন্দলের মধ্যে ফেলে হোগলা পাতার বনে আড়াল করে রাখে। তাদের ছাড়ার জন্য জেলেদের পরিবারের মোবাইল ফোনে জলদস্যুদের ৯৫হাজার টাকা মুক্তিপন দিয়েছে। কিন্তু ছাড়ার আগেই সাধারণ জেলেরা দস্যুদের ধাওয়া করে।
অপহরণকৃত জেলেরা জানায়, তাদেরকে বাদশা, সংগ্রাম, মিজান সরদার, ভুট্টু সরদার, বাসার সর্দারসহ কয়েক জন ধরে এনেছে। তাদেরকে যখন ধরে হাতপা বেঁধে নৌকার খোন্দলের মধ্যে ফেলে রাখে। পরের দিন তাঁরা শনিবার সকালে দস্যুদের কথাবার্তা শুনে এসব নাম জানতে পারেন।
জেলেরা আরও জানান, ৯৫হাজার টাকা মুক্তিপন ছাড়াও জলদস্যুরা ডাকাতির সময় নৌকা থেকে চারটি টর্চলাইট, চারটি গ্যাসের চুলা, গ্যাসসিলিন্ডার, ও চারটি এ্যান্ড্রোয়েট ফোন, জালমাছসহ ৪লাখ টাকার দামী মালামাল নিয়ে যায়।
সদর উপজেলা ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছায়েদ আলী জমাদার এসকল অভিযোগ অসীকার করে বলেন, ভোলার বঙ্গেরচর ও ভোলার চর এলাকার মধ্যবর্তী মেঘনায় তাঁদের জেলেরা মাছ শিকার করে। রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওহাব আলী মেম্বার, আওয়ামী লীগ নাছির খাঁ গঙরা মেঘনা নদীতে জেলে নৌকায় ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তারা জেলেদের অপহরণ করে বঙ্গেরচর ও ভোলার চরে পাতারবনে আটকে রেখে মুক্তিপন আদায় করে।
রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওহাব আলী মেম্বার চর দখল, দস্যুতা অস্বীকার করে বলেন, বঙ্গেরচর, ভোলার চরে তাঁদের পৈত্রিক জমি। ভেঙে আবার জেগে উঠেছে। সেখানে আমার কৃষক আবাদ করতে যায়। গত ১০বছরের মধ্যে আমি বা আমার ছেলে চরের ধারে কাছে যায়নি। শত্রুতার খাতিরে এখন আমাকে দস্যু সাজানো হচ্ছে। বরং দস্যু এই ছায়েদ আলী, যে অন্যের নির্ধারিত মাছ শিকারের স্থান(ডুবোচর) দখল করে মাছ ধরাচ্ছে।
বাসু শিকদার দস্যুবাহিনী লালন-পালনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বঙ্গেরচরে আমাদের পৈত্রিক নিবাস। মেঘনায় ভেঙে যাবার পরে আবার জেগে উঠছে। মেঘনার ওই ডুবোচরে গত ১০বছর যাবৎ আমার জেলেরা মাছ শিকার করছে। উপজেলা নির্বাচনে আমাদের চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতীকের মো. মোশারেফ হোসেন ) হেরে যাওয়ায় ২৩মে আমাদের জাল ফেলার স্থান দখল করে নেয় মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো ইউনুছ মিয়ার কর্মী ছায়েদ আলী জমাদার গঙ। শনিবার সকালে আমাদের জেলেরা পুনরায় মেঘনার ওই ডুবোচর দখল করে আবার মাছ শিকার করে। কিন্তু বিকালে ছায়েদ বাহিনী অস্ত্রসস্ত্রসহ আবার হামলা চালিয়ে ওই ডুবোচরের দখল নেয়। কিন্তু জেলেদের কে বা কারা অপহরণ করেছে, তা জানি না।