শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাখাওয়াত হোসেন শামীম এম এ বলেন,”সমাজে অনৈতিক সুবিধার ছড়াছড়ি। অর্থের কাছে আজ নীতি বিক্রি হয়ে যায়। আর তাই, সেই বিবেকহীন সমাজে আমিই অযোগ্য ব্যক্তি যিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনসেবা করতে চেয়েছিলাম। আমি জনতার কাছে ক্ষমা চাই”।
চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,” আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সে আমলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ২বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। উচ্চ শিক্ষিত দেশপ্রেমিক ওই মানুষটি আমাদেরকে নৈতিকতা ও জনসেবার মাধ্যমে প্রকৃত দেশের জন্য জীবনদানের শিক্ষা দিয়েছেন। তাই তো, আজকাল জনগনের সেবার চেষ্টা করি এবং ভবিষ্যতেও করে যাবো। কিন্তু বর্তমানে সময়ে আমার মতো লোক উপজেলায় তো দূরের কথা, একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কিংবা ওয়ার্ড মেম্বারেরও যোগ্যতা নেই”।
নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে শামীম বলেন,”প্রশাসন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন উপহার দিয়েছে। তাঁদের সম্পর্কে আমার কোনো অভিযোগ নেই। দোষ ওইসব মূল্যবোধহীন মানুষের যারা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়। নাইলে আমার মতো লোক এতো কম ভোট পায়?। হয় আমি খারাপ ও অত্যাচারী, না হয় আমাকে কেনো ভোট দিলো না”।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শামীম বলেন,” আমার কয়েকজন সিনিয়র নেতা রয়েছে যারা নির্বাচনের আগে সবাই কাজ করবে বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু উনারা কথা রাখেননি। কয়েকজন কর্মী ছাড়া নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সবাই দূরে চলে গেছে। সমাজটা স্বার্থপরে ভরা”।
ভারাক্রান্ত মনে শামীম এম এ বলেন,”আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই। আমি ভোটে দাঁড়িয়ে অযোগ্য,অপদার্থ ও অসহায়ত্বের পরিচয় দিয়েছি। এজন্যই সকল ভোটারদের কাছেও ক্ষমা চাই”। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামানত হারিয়ে এসব কথা বলেন উপজেলা আওয়ামীলীগ ও ইউনিয়ন আ’লীগের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন শামীম এম এ। তিনি মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদিঘী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের (বি.কম) ছেলে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ১৪৮টি ভোট কেন্দ্রের ৯৮৪টি কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৬ জন। যাদের মধ্যে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩১৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৩৫.১০ ℅ ভোট পড়ে। ভোট গ্রহণ শেষে রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভন রাংসা।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী,শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো: সাখাওয়াত হোসেন শামীম এমএ পেয়েছেন ২ হাজার ৬৪২ ভোট। যা নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোটের ৮ শতাংশের কম। তাই তাঁর জামানত বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু নোমান জানান,” প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে চেয়ারম্যান পদে একজন প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়েছে। আমরা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করেছি। এ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনিক সকল কর্মকর্তারা সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন”।
প্রসঙ্গত, গত ২১ মে মঙ্গলবার সকাল থেকে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ১৪৮টি ভোট কেন্দ্রের ৯৮৪টি কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গ্রহণ শেষে রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভন রাংসা।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামিল হাসান দুর্জয় ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ৭০ হাজার ১৫৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটম প্রতিদ্বন্দী, আ’লীগ নেতা আব্দুল জলিল বিএ আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬৩ হাজার ৫৩২ ভোট। জামিল হাসান দুর্জয় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. রহমত আলীর ছেলে এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসির বড় ভাই। নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী সকল প্রার্থীর চেয়ে বড় ব্যবধানে নির্বাচিত হন নাসির মোড়ল। তিনি বই প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬৪ হাজার ৫৩ ভোট। তার নিকটম প্রতিদ্বন্দী মো: আহসান উল্লাহ উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৩ হাজার ৭৩৫ ভোট। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির হিমু (টিউবওয়েল) পেয়েছেন ৭ হাজার ৩২৫ ভোট।
অপরদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সানজিদা রহমান। তিনি সেলাই মেশিন প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৪২২ ভোট। তার নিকটম প্রতিদ্বন্দ্বী হালিমা খাতুন কলস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ২৯৭ ভোট। তিনি উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি।
এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯৭ হাজার ৭১৬ জন, নারী ভোটার এক লাখ ৯৯ হাজার ১৭৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার ৬ জন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন ৩জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৯ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।