ডাক নাম স্বর্ণা। পুরো নাম সাহিদা আক্তার স্বর্ণা। একজন সফল সমাজকর্মী ও সামাজিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগকারী পরিশ্রমী নারী। সাহিদা আমাদের শ্রীপুরের মেয়ে। সুদূর প্রবাসে থেকে যখন দেশের ভালো খবর শুনি এর থেকে ভালো লাগা অন্য কিছুতে পাই না। অন্যদিকে আমরা প্রবাসীরা গর্বিত বাংলাদেশের অর্জন দেখে। আমাদের ছেলেমেয়েদের এক একটা অর্জন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে প্রমোট করছে।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবন যাত্রার মান, শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক সূচক বা অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের মন মানসিকতারও উন্নয়ন হয়েছে। মেয়েদেকে এগিয়ে যেতে এখন আর অতো বেশি বাধাগ্রস্ত হতে হয় না বা অন্য কারো কথা শুনতে হয় না। অথচ কিছুদিন আগেও আমরা অনেক কুসংস্কারে বিশ্বাস করতাম, অনেক ধরনের আজেবাজে কথা মেয়েদেরকে শুনতে হতো। যেমন- মেয়েরা এটা করতে পারবে না, ওটা করতে পারবে না, এখানে যেতে পারবে না, ওখানে যেতে পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্ত এখন অন্তত মেয়েদের এসব কথা শুনতে হয় না। মেয়েদের প্রতি তার নিজের পরিবারের সদস্যদের ভাবনা এখন অনেক বদলেছে কারণ একজন মেয়ের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই প্রয়োজন তার নিজ পরিবারের সাপোর্ট। তাছাড়া চলার পথে বা কর্মক্ষেত্রে পুরুষের দৃষ্টিভংঙ্গিও এখন কিছুটা বদলেছে। তবে একজন নারীর এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টা একটি পুরুষের মতো অতোটা সাবলিল নয়। মাতৃত্ব, সন্তান, সংসার এবং পরিবার-এই বিষয়গুলোর সাথে একজন নারী ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। এসবের জন্য একজন নারীকে অনেক কিছু সেক্রিফাইস করতে হয়। তাই একজন নারী চাইলেই এসব ভুলে বা ছেড়ে থাকতে পারে না। থাকলেও তার অন্তরাত্মা ঢুকরে ঢুকরে কেঁদে ওঠে, যা কখনোই কেউ শুনতে পায় না। প্রকৃতি একজন নারীকে এভাবেই তৈরি করেছে। একজন নারীর একটি বিশেষ দিক হল সে চাইলে সকল দিক একা হাতে গুছিয়ে সবকিছু সামলিয়ে যে কোন অসাধ্যও সাধন করতে পারে। তাদেরই একজন সাহিদা আক্তার স্বর্ণা। নামে গুণে গুণান্বিত এই সাহিদার জীবন ছিল বরাবরই ব্যতিক্রম। আজো পাড়া গায়ের মেয়ে হয়েও অন্যান্য আটদশ জন মেয়ের মত সহজ ও স্বাভাবিক ছিলনা তাঁর জীবনযাত্রা। বাল্যবেলা থেকেই সে প্রতিবাদি ও সৃজনশীল মনভাবাপন্ন ছিল। বৈরি পরিবেশে থেকেও তাঁর সাফলতা অর্জনের পেছনের গল্পটা সবার জানা। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী সাহিদার শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার মূল অনুপ্রেরণা তাঁর মা। ভাইশূন্য ৫ বোনের মধ্যে সে চতুর্থ। নিজের দক্ষতা বিচক্ষণ কর্মপন্থা, দূরদর্শি পরিকল্পনার মাধ্যমে পিতা-মাতার পুত্র সন্তান শূণ্যতার অভাব পূর্ণরূপে ভুলিয়ে রেখেছে।
সাহিদা তাঁর জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর মধ্যে অন্যতম ছিল একজন সফল সমাজকর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা, বাল্যবিবাহ বিবাহ বন্ধ করার পাশাপাশি নারীদের মাঝে সচেতনতা তৈরি ও সুবিধাবঞ্চিত অসহায়, দুস্থদের পাশে দাঁড়ানো। সে লক্ষ্যে জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সমাজসেবমূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেকে জড়ানের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। সে প্রায় শতাধিক বাল্যবিবাহ বন্ধ করার পাশাপাশি অন্যদেরকে সচেতনতা তৈরি গেছে স্বপ্নবাজ এই সাহিদা। তারই ধারাবাহিকতায় এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিজ উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছে। প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছে পদ্মফুল মার্কা। মজার ব্যাপার হলো সাহিদা নিজেই গোবরে পদ্মফুল।
সবসময়ই হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাড়িয়ে আত্মতৃপ্তি পেত। উদ্দেশ্য বর্হিঃবিশ্বে কিভাবে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে তা সম্পর্কে ধারনা দেওয়া এবং বাংলাদেশের নারীদের সে অনুযায়ী স্বনির্ভর করে গড়ে তুলে বৈষম্য দূরীকরণে মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
সাহিদার সমাজকর্মী ও নারী উদ্যোক্তা পরিচয়ের কথা বলা হয়েছে আগেই। নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছে। এরই মধ্যে নিজেকে দক্ষ যুব নারী নেতৃত্বের জায়গাতেও নিয়ে গেছেন। সে স্বপ্ন দেখে দেশের আর্থ-সামাজিক অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তারের জন্য দক্ষ নারী শ্রম তৈরি করার। অরক্ষিত গ্রামীণ মহিলাদের উপর আরও ভাল ভবিষ্যত সুযোগ উপার্জনের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা বিকাশ করা। এবং একসাথে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সচেতনতামূলক কর্মসূচিকে একীভূত করে সকল নারী সমাজকে উৎসাহিত করা। তার চাওয়া, তার মতোই অন্য নারীরাও যার যার জায়গা থেকে সম্ভাব্য খাতগুলোতে উদ্যোক্তা বা পেশাজীবী পরিচয় দিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।
নিজের পড়াশোনা ও মায়ের দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি অন্যদের সহযোগিতা করা যেন তাঁর অভ্যেসে পরিনত ছিল। করোনার লকডাউনে দেশবাসীকে সচেতনতার ব্যাপারে সর্বাত্বক সহযোগিতা করা। নারীর ক্ষমতায়নে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া সাহিদা এখন বেশ সফল সমাজকর্মী। বয়সে নবীণ হলেও তিনি দেশ ও নিজ জন্মভূমির মানুষের কাছে অনুকরণীয় ও অনুস্মরণীয়। পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে সাহিদার মত মেয়ের খুবই অভাব। যেদিন এ অভাব পূর্ণতা লাভ করবে সেদিন থাকবে না নারী-পূরুষের মাঝে বৈষম্য, বিলুপ্ত হবে বাল্যবিবাহ নামক ঘৃণিত ও জঘন্য কর্ম, উন্নত বিশ্বের নারীদের ন্যায় বাংলার নারীরাও সমান তালে এগিয়ে যাবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পথচলা হবে সুপ্রসন্ন।
তাই আসুন আমাদের মেয়ে সাহিদা আক্তার স্বর্ণাকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পদ্মফুল মার্কায় ভোট দিয়ে স্মার্ট শ্রীপুর গড়ার মাধ্যমে সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্ম নিয়োগ করি।
কামরুল হাসান
লস এঞ্জেলস, যুক্তরাষ্ট্র।