গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের হায়াতখার চালা গ্রামে অবস্থিত হাজী আব্দুল কাদের প্রধান উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয় ভবনের ছাদে বঙ্গবন্ধু গ্রীন ক্যাম্পাস সাড়া জাগিয়েছে সারাদেশে। মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক বছরের অধিক সময় বন্ধ রয়েছে। বন্ধ সময়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন শিক্ষক ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় স্কুল ভবনের ছাদে গড়ে তুলেছেন বঙ্গবন্ধু গ্রিন ক্যাম্পাস।
সরেজমিন বঙ্গবন্ধু গ্রিন ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট গাছে শোভা পাচ্ছে উন্নত জাতের আম, জামরুল, কমলা, বিভিন্ন জাতের পেয়ারা, উন্নত জাতের ত্বীন ফল, দেশি-বিদেশি নানান জাতের ফুল, ফল, উন্নত জাতের মরিচসহ রয়েছে নানান প্রজাতির ঔষধি গাছ।
কথা হয় বঙ্গবন্ধু গ্রিন ক্যাম্পাসের সফল উদ্যোক্তা প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, গ্রীন ক্যাম্পাসে রয়েছে উন্নত জাতের ফুল, ফল ও ঔষধিসহ প্রায় ১০০ প্রজাতির এক হাজার গাছ। গাছ আমাদের প্রকৃতির ফুসফুস। আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। স্কুলের ছেলে মেয়েরা গাছ লাগানো, গাছের পরিচর্যা ও ছোট ছোট গাছে ফুল-ফল দেখে তারা ভবিষ্যতে গাছ লাগানোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। টাকার চেয়ে ইচ্ছাশক্তি বড়। ইচ্ছাশক্তি থাকলে দেশের প্রতিটি স্কুলে এরকম গ্রীন ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু গ্রিন ক্যাম্পাস নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলিমা মোস্তারী, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুল আমিনসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকসহ নানান পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধু গ্রীণ ক্যাম্পাস পরিদর্শনে আসেন।
মো. নাছির উদ্দিন উক্ত প্রতিষ্ঠানে ২০০০ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান এবং ১২ বছর সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার পাশাপশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চার দিকে বিশেষ মনোনিবেশ করেন। ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরার আওতায় আনা হয়। ২০১১ সালে তিনি সারাদেশের সফল শিক্ষক হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
তিনি বাংলাদেশ স্কাউটস, শ্রীপুর উপজেলা, গাজীপুরের স্কাউটস সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৮০০ জন। ২০১৭ সাল থেকে বিদ্যালয়টি সিসিটিভি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রিত। শিক্ষকতার পাশাপাশি তার নিজ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেন ছাদ বাগান। বাড়ির ছাদ বাগানে রয়েছে উন্নত জাতের ফুল, ফল, ঔষধি ও সবজি গাছ। বাড়ির ছাদ বাগানে উৎপাদিত ফল ও সবজি তার পরিবারের চাহিদা মিটে থাকে। তার নিজ হাতে গড়া বঙ্গবন্ধু গ্রীন ক্যাম্পাস দেখে আশপাশের লোকজন ছাদ বাগানে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আগ্রহী ব্যক্তিদের তিনি বাগান করতে শ্রম, পরামর্শ ও গাছের চারা দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু গ্রীন ক্যাম্পাস ও তার নিজ ছাদ বাগান থেকে উন্নত জাতের ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের চারা তৈরি করে বিনামূল্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের ও স্কুলের ছেলে-মেয়েদের মাঝে বিতরণ করছেন। তাছাড়াও তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন গাছের কলমের মাধ্যমে উন্নত জাতে রূপান্তর করে যাচ্ছেন। এমনকি তিনি রাস্তার পাশে জংলী জাতের ডুমুর গাছকে কলমের মাধ্যমে উন্নত জাতের ডুমুর (ত্বীন ফল) গাছে রূপান্তর করেছেন।
তিনি আরো বলেন, স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শ্রেণিকক্ষ পর্যাপ্ত না থাকায় স্কুলের মাঠে ছাত্র-ছাত্রদের নিয়ে ক্লাস করতে হয়। তাই স্কুলের অগ্রগতি যাতে শ্রেণিকক্ষের অভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য জরুরিভিত্তিতে ভবন নির্মাণ করে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।