উজ্জ্বল হোসেন
মানুষটিকে নিয়ে কাল একটা বড় লেখা পোস্ট করেছিলাম। কিন্তূ দুর্ভাগ্যবশত কেন জানি পোস্ট হল না! মনটা খারাপ হয়ে গেল। এর আগেও তাঁকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি, পারিনি। তাঁর একটি ছবির দরকার ছিল, পাইনি। চেয়েছিলাম, তিনি দেননি। হয়তো বুঝে গিয়েছিলেল আমি তাঁকে নিয়ে লিখব, আত্ব প্রচার বিমুখ মানুষ তাই এড়িয়ে গেছেন। এটা মহৎ ব্যক্তিদের বৈশিষ্ঠ। যাই হোক, কালকের জন্য মন খারাপ হলেও আজকে আবার বসে পরলাম। আর কাকে নিয়ে লিখব, সেই ব্যক্তিটিকে পাঠকরা পোস্টে ছবি দেখেই বুঝছেন। তিনি পান্জাব বিশ্বাস। একজন রাজনীতিবীদ, কবি, সাহিত্যক সর্বোপরি একজন মানুষ।
শিরোনামে মানুষ পান্জাব বিশ্বাস লিখেছি, এতে কিছু পাঠকরা হয়তো হিমশিম খাবেন। মানুষ তো সবাই। আসলে মানুষ সবাই নয়। মানুষের কিছু বৈশিষ্ঠ আছে। সেগুলো না থাকলে যা থাকে তা গরু, ছাগল, গাধা, ভেরা কুকুর শৃগালেরও থাকে। তাই মানুষ বলতে আল্লাহ যা বলছেন আর জ্ঞানীরা যা জানেন আমি সেই রুপে একজন পান্জাব বিশ্বাসকে জানি আর মানি।
কোন মানুষই ভুল আর পাপের ঊর্ধ্বে নয়। নিরপেক্ষও সবাই নয়। আমি লেখি শুধুই আমার মনের ভাললাগা আর বিশ্বাস থেকে। সেখানে হিন্দু মুসলিম, আওয়ামীলীগ বিএনপি, কমিউনিস্ট জামাত, হানাফি আহলে হাদিস, নাস্তিক আস্তিক কোন বিষয় কাজ করে না। নিজের বিচার ক্ষমতা থেকে, কিছু ভাল লাগা থেকেই লিখি। বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে এই কথা গুলো বলছি কারণ আমরা সব কিছুতেই রাজনীতি খুঁজি। সন্দেহ আর আন্দাজে কথা বলা,চিন্তা করা আমাদের কাজ! যে কারণে এখন লেখা বলা দুই-ই সমস্যা!
এবার আসল কথায় আসি। পান্জাব বিশ্বাস আমার প্রিয় মানুষ গুলোর একজন। আমি তাঁকে আগে স্যার বলেই সমন্ধন করতাম। কিন্তূ উনি আমাকে বাবা, কাকু ডাকায় আমিও এখন বাবা, কাকু বলি।
আমরা ছোটকালে ওনার নাম খুব শুনতাম। সবাই বলত, পান্জাব বিশ্বাস উত্তরবঙ্গের সেরা রাজনৈতিক বক্তা। ভাল বলতে পারে। বজ্র আর আগ্নেয়গিরি মিলে যেন তাঁর কন্ঠ তৈরি। আমাদের বাড়ির পাশেই দুটি নাম করা স্কুল। আটঘরিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এবং ইশারত আলী উচ্চ বিদ্যালয়। ওখানে উনি বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে আসতেন। বক্তব্য দিতেন। যেমন লম্বা তেমন সুঠান দেহের অধিকারী। বেশ হাস্যজ্জ্বল থাকেন এবং মিশুকও বটে। ছোট বড়, ধনি গরীব, উচু-নিচু সবার সাথেই মেশেন। আসলে হৃদয় থেকে মেশা আর রাজনীতির জন্য মেশা এটা দেখলে বোঝা যায়। ওনাকে দেখতাম উনি কেমন মানুষ।
আমি পান্জাব কাকুকে প্রথম দেখেছি আটঘরিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সালটা মনে নেই। সম্ভবত ৯৬ বা ২০০১ সালে। উনি তখন এমপি ক্যান্ডিডেট। অবশ্য তাঁর আগে একবার এমপি হয়েছিলেন। এ শাসনকালটা আমার মনে নেই। সেটা প্রেসিডেন্ট হুসেইন মহম্মদ এরশাদের আমলে। আমার মনে হয় তখন তাঁর বয়স কমই হবে, ছাব্বিশ কি সাতাশ। আমার বড় ভাই ফজলু তখন জাতীয় পার্টির বেশ ভাল নেতা।
যাই হোক, প্রথম হাত মেলানো এবং দেখাদেখি আটঘরিয়া খাদ্য গুদামের সামনে। এরপর বহু বছর পর সেদিন হঠাৎ দেখা হয়েছিল ঢাকা মিরপর শেওড়া পাড়াতে। আমি তখন শেওড়া পাড়া নর্থ সাউথ স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। স্কুলে যাওয়ার পথেই দেখা। উনি বোধহয় ব্যবসায়ীক অথবা রাজনৈতিক কারনেই ঢাকায় এসেছিলেন। আমি সালাম দিলাম। হাস্যজ্জ্বল মুখে হাত বাড়িয়ে বললেন,আপনি উজ্জ্বল মজিব। আমি জ্বি বলতেই আমার লেখালেখির তারিফ করলেন। আমিও বিনয়ী হয়ে শুনলাম এবং তাঁর লেখা লেখির প্রশংসা করলাম। তিনি ব্যস্ত মানুষ এটা বুঝেই কথার ইতি টানলাম। অবশ্য কাকুর মোবাইল নম্বরটি নিয়েছিলাম আর তিনিও আমারটা নিয়েছিলেন। এরপর বোধহয় দুই দিন ফোনে কথাও হয়েছিল এবং সেটা দুই তিন মিনিটের বেশি নয়। তিনি ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে পারিনি। তাছাড়া মানুষের ব্যস্ততা,তার সামাজিক অবস্থান আমাদেরও বোঝা উচিত। যাই হোক, এরপর ফেসবুকে তাঁর এবং আমার লেখার উপর ভিত্তি করে কথা হয়েছে বহু।
আমরা পান্জাব বিশ্বাসকে চিনি একজন রাজনীতিবীদ হিসেবে। কিন্তূ তিনি যে একজন বড় মাপের কবি, লেখক, দার্শনিক তা আমরা অনেকেই জানি না। আমি যতটুক জানি কাকু বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন এবং আইন বিষয়েও পড়াশুনা করেছেন। হয়তো সাহিত্যের ছাত্র হওয়ায় কবিতা, গান তাঁর প্রাণে মিশে আছে। আমি তাঁর কবিতা ভারতের বিভিন্ন বাংলা চ্যানেল গুলোতে শুনেছি। এছাড়া বাংলাদেশের বহু সুনাম ধন্য আবৃত্তিকারদের কন্ঠেও তাঁর কবিতা শুনেছি। সমসাময়িক বিষয় তাঁর লেখায় স্থান পায়। আমি সাহিত্যের তেমন আলোচক বা সমালোচক নই, কিন্তূ তাঁর লেখা পড়ে আমার এতোটুক মনে হয়েছে যে তিনি বহু উচ্চস্তরের কবি। আপনি জ্ঞানী আর সৎ মানুষ হলে কারও চেহারা দেখলে, তার কথা শুনলে, লেখালেখি পড়লেই বুঝবেন ব্যক্তি কেমন। হ্যা, গায়েবের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। মানুষ এলেমের এক পর্যায় গেলে আরেক জন মানুষকে কিছুটা চিনতে পারে। অভিনয় করে ভদ্রতা আর অন্তরে লালন করা সততা আপনি টের পাবেন। পান্জাব বিশ্বাসের কবিতা, কথা আর চিন্তায় তাঁর হৃদয়ের রুপ রস আর ভাব বোঝা যায়। তিনি কত বড় মনের মানুষ আর তাঁর হৃদয়ে দেশপ্রেম কত গভীর তা তাঁর চিন্তা আর লেখায় প্রকাশ পায়।
পান্জাব বিশ্বাস বর্তমানে পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। গত ইলেকশনে তিনি দলের মনোয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তূ পাননি। বেশ জনসংযোগ করেছিলেন। তিনি যে কতটা জনপ্রিয় তা তাঁর সেই জনসংযোগ দেখেই বোঝা গিয়েছিল। আমার জানা ছিল, তিনিই তাঁর দলের টিকিট পাবেন। কিন্তূ পাননি! হয়তো টাকা আর নোংড়া রাজনীতির কাছে হেড়ে গিয়েছেন!
যাই হোক এটা তাঁর আর দলের অভ্যন্তরিন ব্যপার। দেশের অবস্থা আর রাজনীতির অবস্থা সবাই জানেন। যে যত চাটুকারিতা করতে পারে, বাটপারি করতে পারে, দুর্নীতি করে টাকা কামাতে পারে, সন্ত্রাসী পালন করতে পারে সে ততো বড় নেতা! বিজয় তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। তবে ভাল মানুষ আর নেতা যে নেই তা নয়। তবে সংখ্যায় নগণ্য। ভাল নেতা আর জনগন চালের চিটের মত! তবে আশা করি একদিন সব পাল্টে যাবে। স্বপ্ন দেখি পান্জাব বিশ্বাসদের মত মানুষ দেশের প্রতিটি পদে যাক। আমি পান্জাব কাকুকে শুধু একজন এমপির যোগ্য ভাবি না। আমি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে যা জেনেছি আর বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে যা পড়েছি তাতে আমার কাছে মনে হয় পান্জাব বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখে। সবার বিচার আমার সাথে মেলে না।
আমি স্বপ্ন দেখি পান্জাব বিশ্বাস, নাটরের সিংড়ার এমপি পলক স্যার, ব্যারেষ্টার সুমন,সাবেক এমপি আন্দালিব রহমান পার্থ, ফরিদপুরের এমপি নিক্সন চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিনের সিটি মেয়র সাঈদ খোকনের মত মানুষ গুলো পদে পদে যাক। এদেশে নমিনেশন বাণিজ্য বন্ধ হোক। ব্যক্তি দেখে, জনপ্রিয়তা দেখে, সাহস দক্ষতা আর সু শিক্ষা দেখে নমিনেশন দেওয়া হোক।
আমি আটঘরিয়ার সন্তান। এখন নিজের এলাকা নিয়ে বেশি স্বপ্ন দেখি। বর্তমান মেয়র রতন আঙ্কেল বেশ কাজ করেছেন বা করছেন। তাঁর ছেলে তানভীর ভাই এখন আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান। যতদুর জেনেছি, বিচার করে বুঝেছি তানভীর ভাইয়ের মধ্যেও বিচক্ষণতা,মিশুকতা আছে। এলাকায় কাজ করার ইচ্ছা আগ্রহও তাঁর আছে। তিনি মানুষকে বেশ মুল্যায়নও করেন বিশেষ করে ছাত্র এবং যুব সমাজকে।
এছাড়া আমার মামা জনাব ইশারত আলী( সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান) আমিনুল দাদা (সাবেক মেয়র)জহুরুল মৌলানা ( সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান), চন্চল কাকা(দেবত্তর ইউপি চেয়ারম্যান) মোবারক ভাই, রাজু স্যার, আলী কাকা, হাজি জুয়েল ভাই, শেখ শফি, সাইদুল ভাই( সাবেক শিবির নেতা), পল্লব ভাই সহ কিছু কিছু ছাত্র নেতাদের ভাল লাগে। কাউকে রাজনৈতিক বিচক্ষণতার জন্য, কাউকে নরম বিনয়ী নেতা হিসেবে আবার কাউকে ধর্ম ভীরু বা ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে। আশা করি তাঁরা আগামীতে আমাদের ভাল কিছু উপহার দিবেন।
আসলে উপর থেকে সৎ না হলে কিছুই হবে না। আমার দেশের মানুষ একদিনে যেভাবে বঙ্গবন্ধ, জিয়া,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়ার গুন কীর্তন করে তাতে মনে হয় সারা বছর ঐ ভয়ে আল্লাহকেও আল্লাহ বলে ডাকে না! আর জনগনও ভোটে টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। নকল আমাদের মেধা নষ্ট করছে। মিডিয়া আমাদের সত্য জানতে দিচ্ছে না। ভেজাল খাদ্য আমাদের মস্তিষ্কের বারটা বাজাচ্ছে। আইন আমাদের ন্যয় বিচার দিচ্ছে না। নাটক সিনেমা আমাদের চরিত্র নষ্ট করছে। পীর মাজার আমাদের ঈমান নষ্ট করছে। পাতি নেতা আমাদের যুবকদের ধ্বংশ করছে। এমন অবস্থায় পান্জাব বিশ্বাসের মত মানুষদের নিয়ে স্বপ্ব দেখি।
আমি জানি প্রিয় কবি,নেতা পান্জাব বিশ্বাস এই লেখা আপনার নজরে পরবে। এমনিই যোগাযোগ কম। এরপর কাউকে নিয়ে লিখলে আরও বেশি যোগাযোগ কমিয়ে দেই। যাই হোক, আপনি সুস্থ থাকুন। সফল হোন আপনার সকল কাজে। আপনার আশা আর বিশ্বাসের জয় হোক। কবিরা বেশির ভাগই ধর্মহীন হয়। আপনাকে তা মনে করি না। তাই শেষ জামানা সম্পর্কে নবীজীর কয়েকটি হাদিস দিয়ে শেষ করলাম,
" সমাজের সবচেয়ে নিন্মস্তরের লোক গুলো হবে নেতা, মিথ্যা কথার ভিত্তিতে দায়িক্ত পালন হবে, আমানতদারী উঠে যাবে, মারামারি হিংসা বিদ্বেষ বেড়ে যাবে, খারাপকে ভাল বলা হবে আর ভালকে খারাপ।"
অবশ্য এসব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হবে। কাজেই কিছু বিষয় এমনি হবে। যা আপনাকে আমাকে মেনে নিতে হবে। আমরা এমনি দেশে বাস করি যেখানে একটি কথা আর চিন্তার অমিল হলে আর তাঁকে দেখতে পারি না। তখন তাঁর বারটা বাজিয়ে ছাড়ি। পা টেনে ধরি! আমার লেখার ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক। আমিন