জামাল উদ্দীন -কক্সবাজার প্রতিনিধি:
শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মাদ্রাসা পরিচালনার কমিটির সভাপতি হওয়ার অভিযোগের তদন্ত করতে ফারিরবিল আলিম মাদ্রাসায় আসেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) তাপ্তি চাকমা।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় ফারিরবিল আলিম মাদ্রাসায় তদন্তে আসেন জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিম।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালীর সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ফারিরবিল মিনহাজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ্ আলিম মাদরাসা গভার্নিং বডির সভাপতির পদ ভাগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি এম এ মনজুর এমন প্রতারাণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদ স্থগিত করে কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।এরি প্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের উপ-রেজিষ্ট্রার (প্রশাসন) মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হলে বিষয়টি তদন্তের জন্য দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষাবোর্ডে দাখিলকৃত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সুপারিশ কপি পুনরায় যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলাপ করে প্রস্তাবিত সভাপতি মনোনয়নের কপি জাল জালিয়াতি করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়।ফলে অনুমোদিত কমিটির সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মাদরাসা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড (গভার্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা ২০০৯-এর ৫(৩) দাখিলকৃত কাগজপত্র জাল প্রমাণিত হওয়ায় পত্র জারির পর থেকে অনুমোদিত গভার্নিং বডির স্মারক স্থগিত করে যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল।
জানা যায়, ফারিরবিল মিনহাজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ্ আলিম মাদরাসা গভার্নিংবডির কমিটির মেয়াদ গত ৪ এপ্রিল শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনও করা হয়েছিল। মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল বশর নতুন কমিটির সভাপতি ঘোষণা অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ মাদরাসা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গত ৩ মার্চ একটি পত্র পাঠান।এতে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়েজুল ইসলামের নাম এক নম্বরে রেখে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদকে দ্বিতীয় এবং আনোয়ার হোসেন জাবুকেও রাখা হয়।
এদিকে অধ্যক্ষ নুরুল বশর মাদরাসার প্যাডে ১২ বছর ধরে সভাপতির দায়ীত্বে থাকা এমএ মনজুরকে এক নম্বরে রেখে আরও একটি পত্র পাঠান।অধ্যক্ষের পাঠানো ওই পত্রে এমএ মনজুর শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর অজ্ঞাতসারে তাদের স্বাক্ষর ও সীলমোহর জাল করে এবং ভুয়া স্মারক নম্বর ব্যবহার করেন।দুজন হাইপ্রোফাইল দায়িত্বশীল ব্যক্তির সুপারিশ সম্বলিত পাঠানো পত্রের আলোকে গত ২১ মার্চ এমএ মনজুরকে সভাপতি করে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি অনুমোদন দেন শিক্ষা বোর্ড। বিষয়টি সন্দেহ হলে শিক্ষা বোর্ড বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন অপর সভাপতি প্রার্থী ফয়েজুল ইসলাম।
সভাপতি প্রার্থী ইউপি সদস্য ফয়েজুল ইসলাম বলেন, আমাকে সভাপতি করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহিনা আক্তার একটি ডিও লেটার দেন। এছাড়াও সবার সম্মতিক্রমে পাঠানো কমিটিতে আমার নাম এক নম্বরে রয়েছে। যেখানে মনজুরের নামই ছিল না; সেখানে তিনি কিভাবে সভাপতি হলেন? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে শিক্ষাবোর্ড বরাবর লিখিত অভিযোগ দিই। পরে তারা যাচাই-বাছাই করে প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি চিহ্নিত করেন।
তিনি আরও বলেন, মনজুর ১২ বছর ধরে সভাপতি হিসেবে থাকার সুবাদে অধ্যক্ষ আর তার মধ্যে অপকর্মের মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। নতুন কেউ সভাপতি হয়ে আসলে তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার ভয়ে দুজনেই মিলে এইসব নোংরামির জন্ম দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয়দের দাবি, অনিয়ম দুর্নীতির কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে উপজেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ফারিরবিল মিনহাজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ্ আলিম মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম। কয়েক বছর ধরে সভাপতি-অধ্যক্ষ মিলে বহুমূখী অপকর্মের পসরা সাজিয়েছে। বাসা বেঁধেছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির। এই দুজনের স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির কারণে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে মাদ্রাসায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে কয়েক বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) তাপ্তি চাকমা মাদ্রাসার দাতা সদস্য ও অভিভাবক প্রতিনিধি সহ উপস্হিত
স্হানীয়দের সাথে জালিয়াতির ঘটনায় বিভিন্ন জনের মতামত ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে বলে জানান।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন কান্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন অভিভাবক, স্হানীয় সচেতন মহল ও সাধারণ জনগণ