এস চাঙমা সত্যজিৎ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
গতকাল (২৯ এপ্রিল) বান্দরবান জেলাধীন রুমা উপজেলার রেমাক্রি-প্রাংসা ইউনিয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধে কেএনএফের দুই লসশস্ত্র সদস্য নিহত এবং ৩টি বন্দুক সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সেনাবাহিনীর হস্তগত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোররাত ৩:৩০ টা হতে সকাল ৯:৩০ টার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইস্ট বেঙ্গলের লেঃ কর্নেল সরকার জুলকার নাইন এর নেতৃত্বে একটি সেনাদল রুমার রেমাক্রি-প্রাংসা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাকত্লাই পাড়া এলাকায় তল্লাসি অভিযান পরিচালনা করে। এসময় সেনা সদস্যদের সাথে কেএনএফ সদস্যরা মুখোমুখি হলে উভয়পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়।যুদ্ধে কেএনএফের দুই সশস্ত্র সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় এবং সেনাবাহিনী তিনটি বন্দুক ও গুলি সহ বেশকিছু সরঞ্জাম দখল করে।
নিহত দুই কেএনএফ সদস্যের পরিচয়- (১) আমং বম, স্বঘোষিত সার্জেন্ট, ঠিকানা-থাইখিয়াং পাড়া, রেমাক্রি-প্রাংসা ইউনিয়ন এবং (২) লালরুয়াল পুই বম, স্বঘোষিত ল্যান্স কর্পোরেল, ঠিকানা-লাইরুনপি পাড়া, রুমা সদর ইউনিয়ন।
সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রামবাসীদের ঘরে ফেরার নির্দেশ, হুমকি প্রদান করা হয়।অপরদিকে, গত ২৭ এপ্রিল, সেনাবাহিনীর একটি দল মুননোয়াম পাড়ায় গিয়ে সেনা অভিযানের ভয়ে পালিয়ে যাওয়া মুননোয়াম পাড়া ও এর আশেপাশের গ্রামবাসীদের আগামী ৫ দিনের মধ্যে স্ব স্ব ঘরে ফিরতে নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। ৫ দিনের মধ্যে ঘরে না ফিরলে সেনাবাহিনী ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে। এতে গ্রামবাসীদের মধ্যে আরো উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।একইদিন যৌথবাহিনীর একটি দল রুমার হ্যাপি হিল পাড়া এলাকায় তল্লাসি অভিযান চালিয়ে একটি জুমঘর থেকে ১০০ টি কম্বল ও ১০০ টি খাবারের থালা খুঁজে পায় বলে জানা যায়। পরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা সেগুলো পুড়িয়ে দেয়।
সেনাবাহিনী কর্তৃক ৫ জনকে আটক । গত ২৬ এপ্রিল, সেনাবাহিনীর একটি দল রুমার মুননোয়াম পাড়া থেকে ৫ জন বম গ্রামবাসীকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে তিন জনের পাওয়া গেছে, তারা হল- ডানিয়েল বম, পীং-জুমতেলর বম; আকুম বম, পীং-লালতুমময় বম ও লালরোয়াম বম, পীং-লালবারদির বম।
উল্লেখ্য যে, গত ২ ও ৩ এপ্রিল পরপর রুমার সোনালী ব্যাংক শাখা এবং থানচির সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক শাখায় ডাকাতি করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা অর্থ সহ ১৪টি অস্ত্র লুট করলে গত ৭ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই-এর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
জানা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান কেএনএফ বিরোধী অভিযানে গত ৭ এপ্রিল থেকে গত ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১১১ জনকে প্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী কর্তৃক একজন বম ছাত্রকে ক্রসফায়ারের নামে ঠান্ডা মাথায় গুলি হত্যা করা হয়েছে এবং একজন নারী মর্টারশেলের আঘাতে জখম হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কেএনএফের সাথে ৫ জন সম্পৃক্ত রয়েছে এবং বাকিরা সকলেই নিরীহ সাধারণ নাগরিক। এর মধ্যে ১৩ জন ত্রিপুরা এবং ৫ জন মারমা সহ মোট ২৩ জনকে আটকের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ভাগ করো শাসন করো উপনিবেশিক নীতির ভিত্তিতে একের পর এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গঠনের ষড়যন্ত্র হিসেবে সেনাবাহিনী কর্তৃক কেএনএফ সৃষ্টি করা হয়। পরে অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ কর্তৃক ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণের তথ্য ফাঁস হলে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সেনাবাহিনী তথা বাংলাদেশ সরকার বাধ্য হয় কেএনএফের সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে। এভাবে আজ কেএনএফ সেনাবাহিনীর বুমেরাং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।