today visitors: 5073432

“সাংবাদিকতার কার্ড বাণিজ্য”

ওমায়ের আহমেদ শাওন (লেখক, কলামিষ্ট ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক)

যারা চলমান বিভিন্ন ঘটনাবলী, দেশ ও বিশ্বের পরিস্থিতি, প্রকৃতি-পরিবেশ, মানুষ সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়ে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত খবর সংগ্রহ করে প্রতিবেদন বা রিপোর্ট আকারে সত্য এবং বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন করেন বা সংবাদ প্রচারে ভূমিকা রাখেন তারাই মূলত সংবাদকর্মী বা সাংবাদিক।

সংবাদকর্মী তথ্য সংগ্রহ করেন পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলে দিয়ে থাকেন, অপরদিকে সাংবাদিক পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের স্টাফ রিপোর্টার বা ষ্টুডিও জার্নালিষ্ট। তাদের জার্নালিজম কোর্স থাকা আবশ্যক। তবে সংবাদকর্মী ও সাংবাদিকের এরূপ কোন পার্থক্য করা হয়না। সেক্ষেত্রে সংবাদকর্মী ও সাংবাদিক একই জাতের। সাধারণ ভাবে সংবাদ প্রচারের জন্য যিনি সংবাদ সংগ্রহ করেন তিনিই সাংবাদিক।

প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, স্যোসাল মিডিয়া, বেতার, ইন্টারনেট, এবং পূর্বে ব্যবহৃত নিউজরিল ইত্যাদি সংবাদ মাধ্যমের অন্তর্গত। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে একজন সাংবাদিক তার মহান দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

আলোকচিত্র সাংবাদিকতা, নাগরিক সাংবাদিকতা, উপাত্ত সাংবাদিকতা, ড্রোন সাংবাদিকতা, পারস্পারিক ক্রিয়াশীল সাংবাদিকতা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, সেন্সর সাংবাদিকতা, গবেষণা সাংবাদিকতা, টেবলয়েড সাংবাদিকতা, সম্প্রচার সাংবাদিকতা ইত্যাদি বিশেষভাবে পরিচিত।

যারা সংবাদ পরিবেশনের নামে মিথ্যাচার ও দলীয় শাসকদের চাটুকারিতা করে সংবাদ প্রচার করেন তারা মূলত হলুদ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। সাংবাদিকতার এই মহান পেশাকে বিতর্কিত করতেই হলুদ সাংবাদিকতা কাজ করে।

আদর্শগত দিক থেকে সকল সংবাদপত্র ইনডিপেন্ডেন্ট প্রেস স্ট্যান্ডার্টস অর্গানাইজেশনের বিধি মেনে চলতে বাধ্য।

এদেশে সাংবাদিকতার নামে আশঙ্কাজনক হারে ভুয়া সাংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিভিন্ন পত্রিকা ও সাংবাদিক তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আবার লাইসেন্স নিয়েও বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, টিভি চ্যানেল প্রতিনিধি নিয়োগের নামে নিয়োগকৃত লোকজনের থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সাংবাদিকতার কার্ড বিভিন্ন দামে তারা বিক্রি করছে; যেগুলো অত্যন্ত নিন্দনীয়। একই জেলায় চার-পাঁচ জনেরও অধিক প্রতিনিধি দিচ্ছে, যা নিয়ম বহির্ভূত।

লাইসেন্সবিহীন অথবা লাইসেন্স থাকা বিভিন্ন পত্রিকা, আইপিটিভি, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এহেন অপকর্মে জড়িত।

লাইসেন্সবিহীন ভুয়া টিভি ডিশের সঙ্গে সেট টপ বক্স বসিয়ে মূল স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মতো বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও বিজ্ঞাপন প্রচার করছে- যা আইন পরিপন্থি।

অনেক সন্ত্রাসী আজকাল সাংবাদিকতা পেশাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে তাদের সিদ্ধি সাধন করছে। এই মহান পেশাকে যারা বিতর্কিত ও চাটুকারিতার জায়গায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।

নামধারী মানবাধিকার সংগঠন গুলোও ইচ্ছেমত ভিজিটিং কার্ড তৈরী করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। নিয়োগ দেওয়ার নামে টাকা দাবী করা পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল গুলোর ভিজিটিং কার্ডে সয়লাব দেশ। এদের থেকে নিষ্কৃতি প্রয়োজন।

উল্লেখ্য যে, অনলাইন পদ্মাটিভি ২৪ এর অফিস থেকে জানা যায়; তাদের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পেতে- ০৩ মাসের থিওরিটিক্যাল ও প্রাকটিক্যাল ট্রেনিং ফিস হিসেবে ২০,০০০/- টাকা প্রদান করলে আইডি কার্ড, লোগোসহ মাইক্রোফোন, কিছু স্টিকার অফিসের সাইনবোর্ড ও ১০০০ ভিজিটিং কার্ড ফ্রি প্রদান করা হবে। ট্রেনিং শেষে রিপোর্ট এর এসাইনমেন্ট যথাযথ পালন করলে মাসিক সম্মানী ধার্য করে প্রদান করা হবে। ১৫ দিনের ট্রেনিংসহ গাড়ীতে লাগানো স্টিকার, অফিসে লাগানো স্টিকার, নিয়োগপত্রসহ আইডি কার্ড ৭০০০/- টাকা দিতে হয় প্রত্যেক জেলা প্রতিনিধিগণকে। এবং লোগোসহ বুম মাইক্রোফোন ও অফিসের সাইনবোর্ড নিলে খরচ ১০০০০/-। তাদের চটকদার এমন বিজ্ঞাপনে অনেকে লোভে পরে যেতে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো- সাংবাদিকতার কার্ড নেওয়ার জন্য একজন সত্যিকারের সাংবাদিক বা সংবাদকর্মী কি টাকা দিয়ে প্রতিনিধিত্ব কিনবেন? এটা যার যার ব্যক্তিগত অভিরুচি।

লাইসেন্স থাকা টিভি চ্যানেল, পত্রিকা অথবা লাইসেন্স প্রক্রিয়া চলমান কোন টিভি চ্যানেল, পত্রিকা হোক তাদের কারোরই কার্ড বাণিজ্যের নামে প্রতিনিধিত্ব বিক্রি করা উচিত নয়। টাকা দিয়ে সাংবাদিকতা পেশাকে কিনতে হবে এমন ধারণা থেকে সকলের বেড়িয়ে আসা উচিত। সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও তৎপরতা প্রয়োজন।