today visitors: 5073432

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি সবচেয়ে বড় হামলা

 

আইএমএফ’র প্রতিবেদন: চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ

২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

টাকা

Advertisement

বৈশ্বিকভাবে আগামী দিনে আর্থিক খাতে সবচেয়ে বড় হুমকি সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সাইবার হামলার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। আগে ব্যাংক হিসাব হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হতো। এখন সাইবার হামলার প্রধান উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনলাইন বা ডিজিটাল কারেন্সি।

বিশেষ করে বিট কয়েনসহ অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রার হিসাবগুলো এখন বেশি সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরিকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাইবার হামলার ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার করা এখন বড় চ্যালেঞ্জিং। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আইএমএফ-এর বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

Advertisement

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) সম্পর্কিত সবচেয়ে বড় সাইবার হামলার শিকার হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা প্রায় ৮৫ কোটি ডলার বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে স্থানান্তরের বার্তা পাঠায়।

কিন্তু ওইসব বার্তার সব লেনদেন কার্যকর করে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সন্দেহ হওয়ায় তারা বেশির ভাগ লেনদেনের বার্তা কার্যকর করেনি। এর আগেই ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের লেনদেন সম্পন্ন হয়ে যায়। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হ্যাকাররা ক্যাসিনোর মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। এখন ওইসব অর্থ উদ্ধার করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ২ কোটি ডলার যায় শ্রীলংকার একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। ওই ব্যাংক অর্থছাড় না করে আটকে দেয়। ঘটনার পরই ওই অর্থ ফেরত আনতে সক্ষম হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে। এর মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ফেরত পেতে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলা চলছে।

আইএমএফ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ঘটনার পর ২০১৬ সালেই সুইফট কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রাহকদের লেনদেনের নিরাপত্তা জোরদারের নানামুখী পদক্ষেপ নেয়, যা এখনো চলমান।

তবে ওই সময়ে সুইফট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বিবৃতি দিয়ে বলেছিল তাদের সিস্টেমে কোনো হ্যাক বা হামলার ঘটনা ঘটেনি। লেনদেনের যেসব বার্তা গেছে, সেগুলো বৈধভাবেই গেছে।

এদিকে সুইফট লেনদেনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সুইফট ব্যাংকিং সিস্টেমে সাইবার হামলার ঘটনা ২০১৩ সালে ঘটেছিল ১টি। ওই ঘটনায় কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। এটি নিয়ে ওই সময় কোনো আলোচনা হয়নি। ২০১৪ সালে সুইফটে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ২০১৫ সালে ৩টি ঘটনায় ২ কোটি ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। ২০১৬ সালে ৩টি ঘটনায় ১০ কোটি ডলার হাতিয়ে নেয়।

এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছিল। ২০১৭ সালে ৩টি ঘটনায় ৬ কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালে সুইফট লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬টি ঘটনা ঘটে। এতে ৪ কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সুইফট সিস্টেমে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোনো আর্থিক ক্ষতিও হয়নি।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অবকাঠামো জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কারণ, আর্থিক বাজারে সাইবার হামলা হলে পুরো আর্থিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। যদিও বড় সাইবার হামলা এখনো হয়নি। তবে পেমেন্ট সিস্টেমে সফটওয়্যার সমস্যার কারণে ডিজিটাল লেনদেন বিভিন্ন সময় বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

আইএমএফ-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে এখন ডিজিটাল কারেন্সির লেনদেন বাড়ছে। এখন ওইসব মুদ্রার হিসাবগুলোয় সাইবার হামলা হচ্ছে। এতে অনেকের অর্থ খোয়া যাচ্ছে। এ খাতে আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।