today visitors: 5073432

রমজানে আত্মীয়ের হক আদায়ের অবারিত সুযোগ রবিউল হক

 

রমজানুল মুবারক

 

২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

আত্মী

দেখতে দেখতে রহমতের দিনগুলো তো ফুরিয়ে গেল। আজ রহমতের শেষ দিন। আল্লাহতায়ালার রহমতে সিক্ত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।

আত্মীয় শব্দটির আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘রেহেম’। অর্থ : নারীর গর্ভাশয়। মাওলানা সাঈদ আহমদ পালনপুরী (রহ.) তিরমিজির ভাষ্যগ্রন্থ তুহফাতুল আলমাঈতে আত্মীয়তার পাঁচটি উৎসের কথা বলেছেন-ক. মায়ের দিকের আত্মীয় যেমন-নানা-নানি, মামা-খালা ইত্যাদি। খ. পিতার দিকের আত্মীয় : যেমন-চাচা-চাচি, দাদা-দাদি ইত্যাদি। গ. বিয়ের সম্পর্কের আত্মীয় যেমন-শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকা ইত্যাদি। ঘ. নিজ সম্পর্ক-ছেলে-মেয়ে, ভাতিজা-ভাতিজি ইত্যাদি। ঙ. দূর সম্পর্কের আত্মীয় যেমন-দুধভাই, দুধবোন, দুধমাতা, দুধপিতা ইত্যাদি।

 

Advertisement

মহান আল্লাহ বলেন, হে মানুষ!

তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন সে ব্যক্তি থেকে তার জোড়, আর তাদের দুজন থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য পুরুষ ও নারী। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অন্যের নিকট কিছু চাও। আর তোমরা আত্মীয়দের (হক আদায় ও সম্পর্ক অটুট রাখার) ব্যাপারে সতর্ক হও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা : ১)।

 

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তাদের অধিকার আদায় করে দাও। মিসকিন ও পথচারীদের অধিকারও আদায় কর এবং কোনোক্রমেই অপব্যয় করবে না।’ (সূরা ইসরা : ২৬)।

 

আল্লাহ আরও বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং নিশ্চয় তিনি অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমা লঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।’ (সূরা নাহল : ৯০)।

 

আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূল (সা.)! লোকে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করে। আপনি বলুন-কল্যাণকর যে ব্যয় তোমরা করবে, তা করবে মাতা-পিতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন ও পথচারীদের জন্য। আর কল্যাণকর যে কাজই তোমরা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন।’ (সূরা বাকারা : ২১৫)।

 

কুরআনে আরও রয়েছে, আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছি। তবে মাতা-পিতা যদি আমার সঙ্গে এমন কিছুকে শরিক করতে তোমার ওপর বলপ্রয়োগ করে যার জ্ঞান তোমার নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মেন না। তোমাদের ফিরে আসা নিশ্চিতভাবে আমারই নিকট। এরপর আমি তোমাদের জানিয়ে দেব, তোমরা কী করছিলে। (আনকাবুত : ৮)।

 

মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফেরানোর মধ্যে তোমাদের জন্য কোনো পুণ্য নেই। বরং আল্লাহর প্রতি ইমান আনা; আখিরাত, ফেরেশতা, কিতাব ও নবীদের প্রতি ইমান আনা; আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার কারণে নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, সাহায্যপ্রার্থী ও দাস মুক্তির জন্য অর্থ ব্যয় করা; সালাত কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, ওয়াদা দিয়ে ওয়াদা পূর্ণ করা এবং অর্থ সংকটে, দুঃখ-কষ্ট ও সংগ্রাম-সাধনায় সবর অবলম্বন করার মধ্যে পুণ্য আছে। (যারা তা করে) তারাই তো সত্যপন্থি এবং তারাই তো মুত্তাকি। (সূরা বাকারা : ১৭৭)।

 

আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ যে সম্পর্ক রক্ষা করতে বলেছেন সে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখে, তাদের প্রতিপালককে ভয় করে (তার বিধান মেনে চলেন), তার কঠিন হিসাবকে ভয় করেন।’

 

‘যারা আল্লাহর সঙ্গে সুদৃঢ় ওয়াদা করার পর তা ভেঙে ফেলে, যে সম্পর্ক আল্লাহ রক্ষা করার আদেশ দিয়েছেন সে সম্পর্ক নষ্ট করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়-তাদের জন্য আছে অভিশম্পাত আর তাদের বাসস্থান কতই না মন্দ।’ (সূরা রাদ : ২১ ও ২৫)।

 

সূরা কাসাসে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান কর তবে তোমার দুনিয়ার দায়িত্ব-কাজকর্মও ভুলে যেয়ো না। আল্লাহ যেমনভাবে তোমার ওপর ইহসান করেছেন তেমনভাবে অন্যদের প্রতি ইহসান কর। পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কর না। নিশ্চয় আল্লাহ বিশৃঙ্খলাকারী কাউকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা কাসাস : ৭৭)।

ইমাম তিরমিজি (রহ.) তার সুনানতুত তিরমিজির একটি অধ্যায় যুক্ত করেছেন, ‘আবওয়াবুল বিররি ওয়াস সিলাহ’ বা ‘আত্মীয়তার বন্ধন ও সুসম্পর্ক’ নামে।

 

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, সেই ব্যক্তি প্রকৃত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী যার সঙ্গে তার আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করলেও সে তা রক্ষা করে চলে।’

 

অনুরূপ আত্মীয়তার সম্পর্ক ভঙ্গকারীর সম্পর্কে অধ্যায় রয়েছে ‘বাবু মা যা ফি কতিআতির রহিম’ বা ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর পরিণতি সম্পর্কিত’। ইমাম ইবনুল যাওজি ‘আল-বিররু ওয়াস সিলাহ’ বা ‘আত্মীয়তার বন্ধন ও তাদের সঙ্গে সৎ ব্যবহার’ নামে স্বতন্ত্র একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

 

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রিজিক প্রশস্ত হওয়ার এবং আয়ু বৃদ্ধির প্রত্যাশা করে সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ন রাখে।’ (বুখারি : ৫৯৮৬)।

রমজানে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার মাধ্যম হলো- ১. খোঁজখবর রাখা ২. কল্যাণের দোয়া করা ৩. উপহার দেওয়া ৪. অসুস্থ হলে সেবা করা ৫. ইফতার করানো ৬. সেহরিতে দাওয়াত করা ইত্যাদি।

 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, এমন সভাস্থলে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় না, সে সভায় রক্ত সম্পর্ক ক্ষুণ্নকারী কোনো লোক যদি থাকে। (তারগির তারহিব)।

 

অতএব, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা কবিরা গুনাহ। এ থেকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

 

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানে আত্মীয়দের সঙ্গে যথাযথ সম্পর্ক রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন!

 

লেখক : লেকচারার, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।