রহিদুল ইসলাম, রাজশাহীঃ
রাজশাহীতে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আম গাছে বেশি মুকুল এসেছে। মৌসুমের প্রথম দিকে আম গাছে কম মুকুল দেখা দিলে বর্তমানে জেলার সব এলাকার আম বাগানে মুকুলের ম-ম ঘ্রাণ এখন জেলার আকাশে-বাতাসে। যার ফলে চৈত্রের প্রখর তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুকুল থেকে ছোট ছোট আমের গুটি আসতে শুরু করেছে। এ বছরে জেলা বাঘা ও দূর্গাপুর উপজেলার আম বাগানগুলোতে সবচেয়ে বেশি গুটি এসেছে। এ অবস্থায় গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষিরা। পোকা নিয়ন্ত্রণ ও গুটি ঝরে পড়া রোধে ৫৫ ইসি বিষ ও কার্বোন্ডাজিম পাওডার গাছে স্প্রে করছেন আম চাষিরা।
সবকিছু ঠিক থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর—এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। গত বছর এই অঞ্চলে মোট ১২ লাখ সাত হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়েছিল।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রাকৃতিক কোনও দুর্যোগ না হলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে। গত বছর জেলায় ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ হয়েছিল। এর আগের বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন। হিসাবে প্রতি বছরই উৎপাদন বাড়ছে। এবারও উৎপাদন বাড়ার আশা করছেন তারা।
বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। সোমবার সকালে চারঘাট ও বাঘার কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুকুলে আমগাছের পাতা ঢেকে আছে। প্রতিটি গাছে ব্যাপক মুকুল এসেছে। আগাম মুকুলগুলোতে গুটি এসে বড় হতে শুরু করেছে। সেগুলোর পরিচর্যা করছেন চাষিরা।
চাষিরা জানিয়েছেন, প্রতিটি গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। আগাম মুকুলগুলোতে গুটি আসতে শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে ফজলি, আশ্বিনা, দুধসর ও হিমসাগরের গুটি আসবে। ইতোমধ্যে এগুলোর কিছুতে গুটি এসেছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া খুব ভালো। পোকামাকড় যেন গাছে ভিড়তে না পারে, সেজন্য ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। সবমিলিয়ে শেষ পর্যন্ত যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, তাহলে এ বছরও বাম্পার ফলন হবে।
বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার খায়ের হাট গ্রামের আম চাষি মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে আমের বাগান আছে আমার। প্রতিটি গাছে ব্যাপক মুকুল এসেছে। পোকামাকড় দমনের জন্য এখন ওষুধ ও কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে। আশা করছি, ভালো ফলন হবে।’
২০ বিঘা জমিতে ফজলি, লক্ষণভোগ ও হিমসাগরসহ কয়েক জাতের আম চাষ করছেন উপজেলার দক্ষিণ মিলিক বাঘা গ্রামের চাষি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ বছর মুকুলের পরিমাণ অনেক বেশি। আম্রপালি ও গুটি জাতের আমের মুকুল বেশি এসেছে। ৪০ শতাংশ মুকুল থেকে গুটি বের হয়েছে। বাকিগুলোতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বের হবে।’
তিন বিঘা জমিতে হিমসাগর আম চাষ করেছেন চাকিপাড়া গ্রামের চাষি আজাদ রহমান। তিনি বলেন, ‘হিমসাগর আমের চাহিদা সবসময় বেশি। এখন পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষায় কীটনাশক ছিটাচ্ছি। তবে এবার কীটনাশকের দাম বেশি। এজন্য উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে। তবু ভালো ফলন হলে পোষাবে।’
বিগত বছরের চেয়ে এবার আমের মুকুল ভালো এসেছে এবং আবহাওয়া ভালো থাকলে বাম্পার ফলন হবে বলে জানিয়েছেন বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান। তিনি বলেন, ‘উপজেলায় আট হাজার ৩৬৮ হেক্টর আম বাগান রয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ বাড়ানো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর এক লাখ ১০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে উপজেলায়। আশা করছি, সবকিছু ঠিক থাকলে বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’